শেষের পাতা

পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে ভারতীয় নেতাদের আক্রমণাত্মক অবস্থান, নতুন উত্তেজনা

মানবজমিন ডেস্ক

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৯:০২ পূর্বাহ্ন

শুক্রবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগ্রাসী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি নরেন্দ্র মোদিকে কাপুরুষ ও হিটলার বলে আঘাত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ওইদিন শুধু কাশ্মীর নিয়ে এই একটি বক্তৃতাই আলোচিত হয়নি। একইদিন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আথাওয়েল কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি সপষ্ট করে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ এড়াতে হলে ইমরান খানকে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকে (আজাদ কাশ্মীর) ভারতের হাতে তুলে দিতে হবে। শুক্রবার চণ্ডিগড়ে এক অনুষ্ঠানে ভারতের সমাজকল্যাণ ও ক্ষমতায়ন বিষয়ক ওই প্রতিমন্ত্রী এমন হুমকি দেন।

তিনি আরো বলেন, পাকিস্তান যদি তার নিজের ভালো চায়, তাহলে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকে আমাদের হাতে তুলে দেয়া উচিত। পাকিস্তানের স্বার্থের জন্যই এটা করা উচিত ইমরান খানের। মন্ত্রী রামদাস আথাওয়েল বলেছেন, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ভেতরকার জনগণ আর পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চান না। তারা চান ভারতের সঙ্গে যোগ দিতে। এমন সব রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে। ৭০ বছর ধরে আমাদের কাশ্মীরের এক-তৃতীয়াংশ দখলে নিয়েছে পাকিস্তান। এটা একটা মারাত্মক বিষয়।

কিন্তু এটি পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল নিয়ে ভারতীয় নেতাদের প্রথম বক্তব্য নয়। এর আগে ভারতের কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও দেশটির সাবেক সেনাপ্রধান ভিকে সিংও ভারতের উদ্দেশ্য সমপর্কে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ইমরান খানের ওই জ্বালাময়ী বক্তৃতার একদিন আগেই তিনি জানিয়েছিলেন, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের ‘বিশেষ কৌশল’ রয়েছে।

এর আগে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতের এক বিবৃতিতে জানান, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিষয়ে ‘অ্যাকশন’ নিতে সব সময়ই প্রস্তুত ভারতের সেনাবাহিনী। তারা এখন শুধু কেন্দ্রীয় নির্দেশের অপেক্ষায় আছে। এ বিষয়ে সাবেক সেনাপ্রধান ভিকে সিংকে প্রশ্ন করা হয়। তাতেই তিনি মোদি সরকারের পরিকল্পনার কথা নিশ্চিত করেন। তিনি শুধু বলেন, একটি ‘স্ট্র্যাটেজি’ বা কৌশল নেয়া হয়েছে। কিন্তু কি সেই কৌশল তা এখনই জনসমক্ষে প্রকাশ করা যাবে না।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের কাছে কঠোর এক বার্তা পাঠিয়েছেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেন্দ্রকে। যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী। এমন সব বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের নির্দেশনা মতো কাজ করবে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই সেনাবাহিনী সব সময় প্রস্তুত। জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেন, আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সেনাবাহিনীকে অবশ্যই সহায়তা করতে হবে জনগণকে। তিনি আরো বলেন, কাশ্মীরি জনগণ বহু বছর ধরে সন্ত্রাসের ক্ষত বহন করে বেড়াচ্ছেন। তাই সেখানে শান্তি ও উন্নয়নের জন্য সরকারকে একটি সুযোগ দেয়া উচিত।

স্বাভাবিকভাবেই ভারতের এধরনের আগ্রাসী পরিকল্পনাকে ভালোভাবে নেয় নি পাকিস্তান। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কাশ্মীরের নিজেদের অধিকৃত অংশ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন ইমরান খান। প্রথম থেকেই ভারতীয় নেতাদের বক্তব্য ও পদক্ষেপগুলোতে এর ইঙ্গিত ছিল। সেটি বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় ইমরান খানের মতো চৌকস ব্যক্তির। তাই তিনি উঠে পড়ে লেগেছেন কাশ্মীরে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। বিশ্বব্যাপী সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন তিনি। একইসঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর সমর্থন পেতে ব্যবহার করছেন ধর্মীয় আবেগেরও।

নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় সেনাদের গুলিতে নিহত পাকিস্তানি সেনা
এদিকে কাশ্মীর নিয়ে নানা উত্তেজনার মধ্যেই ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে আবারো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতীয় সেনারা গুলি চালিয়ে এক পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে। শনিবার সকালে গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এ নিয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

খবরে বলা হয়, বিনা উস্কানিতে হাজিপীর সেক্টরে গুলি চালায় ভারতীয় সেনারা। এতে নারোওয়ালের অধিবাসী হাবিলদার নাসির হোসেন (৩৩) নিহত হয়েছেন। তিনি ১৬ বছর ধরে সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করছিলেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ৫ই আগস্ট নয়াদিল্লি জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করার পর অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে পারমাণবিক অস্ত্রধর এ দুটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর আগে ওই একই সেক্টরে ভারতীয় সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন ভাওয়ালনগরের অধিবাসী সিপাহি গোলাম রসুল। এসব ঘটনায় নিন্দা জানাতে বেশ কয়েকবার পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের কূটনীতিকদের তলব করা হয় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status