খেলা

কমেন্ট্রি বক্স থেকে ‘না’ বলা কথা

নাফীস হতাশ, তবে বিস্মিত নয়

ইশতিয়াক পারভেজ, চট্টগ্রাম থেকে

৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৮:৫০ পূর্বাহ্ন

শাহরিয়ার নাফীস বেশ কিছু দিন থেকে ক্রিকেট কমেন্ট্রি করছেন। তবে এবার বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্টে দিলেন পূর্ণাঙ্গ ধারাভাষ্য। কমেন্ট্রি বক্সে বসেই দেখেছেন নিজ দেশের হতশ্রী পারফরম্যান্স। যেখানে টেস্টে নবাগত আফগানদের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেনি টাইগাররা। টেস্টের চতুর্থ দিনই নিশ্চিত হারের মুখে সাকিব আল হাসানের দল। হারের লজ্জা বাঁচাতে তাদের সামনে ছিল ৩৯৮ রানের লক্ষ্য। যা করতে পারলে টেস্ট ক্রিকেটে আরো একটি রেকর্ড হতো। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আসতো সেরা জয়ের সাফল্যও। কিন্তু ১৩৬ রানে হারিয়েছে ৬ উইকেট। জিততে হলে তখনো প্রয়োজন ২৬২ রান। হাতে অবশিষ্ট মাত্র ৪ উইকেট। তাই আফগানিস্তান আছে ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায়। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া তারকা ক্রিকেটার নাফীস দারুণ হতাশ। কিন্তু বিস্মিত নয় বলেই জানিয়েছেন তিনি। কেন বাংলাদেশের এমন অবস্থা তা নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক মানবজমিনের স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজের সঙ্গে। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-

সুখকর হলো না ধারাভাষ্যের অভিজ্ঞতা
মাঠে খেলা থাকার কারণে পূর্ণাঙ্গ ধারাভাষ্যের কাজটা করা যায় না। এবারই প্রথম পূর্ণাঙ্গ একটি ম্যাচ কমেন্ট্রি করার সুযোগ হলো। হ্যাঁ এখান থেকে শেখা হচ্ছে তবে বাংলাদেশ দল যদি ভালো করতো তাহলে এই অভিজ্ঞতা আরো সুখকর হতো।

বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণেই ছিল না ম্যাচ
বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের দিক থেকে আমার কাছে যে বিষয়টা খারাপ লেগেছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমরা ম্যাচে একটি বারও নিয়ন্ত্রণ নিতে পারিনি। আফগানিস্তান টেস্টে খুবই নবীন, সেই তুলনায় আমরা অভিজ্ঞ ও শক্তিশালী দল। কিন্তু এমন পার্থক্য থাকার পরও ম্যাচে শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণ নিতে পারিনি। এটি আমাকে খুবই হতাশ করেছে।

আফগানদের জয়ের ক্ষুধা ছিল, আমাদের নয়
আফগানরা নতুন দল। কিন্তু বাংলাদেশ অভিজ্ঞ দল, অনেক ভালো, তাদের রেকর্ডও দারুণ। কিন্তু এই চার দিন আমার কাছে মানে হয়েছে আফগানরা যতটা ক্ষুধার্ত, আমরা ততোটা নই। ওদের ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সব জায়গায় পরিণত ও ধৈর্য্যশীল মনে হয়েছে। কিন্তু হয়তো বাংলাদেশকে তেমন মনে হয়নি। আমি বলতে চাইছি ম্যাচ জয়ের যে ক্ষুধাটা সেটি আমি আফগানিস্তানের মধ্যেই বেশি দেখেছি।

মনে হয় নার্ভাস ছিল সাকিবরা
আমি বলবো না বাংলাদেশ অতি আত্মবিশ্বাসী ছিল। কিংবা ড্রেসিং রুমে কোনো সমস্যা ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে বাংলাদেশ দল বেশ নার্ভাস ছিল। এটি হতে পারে দুটি কারণে। একটি যেকোনো ভাবেই হারা যাবে না- এই ভাবনা। আরেকটি কারণ হলো আফগানরা অনেক ভালো খেলবে সেই চিন্তা। দুটি জিনিসই দারুণভাবে প্রভাব ফেলেছে।

উইকেট নয়, ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা
হ্যাঁ, উইকেট নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্ত আমি যা দেখলাম উইকেট কিন্তু স্পিনারদের তেমন কোনো সুবিধা এনে দেয়নি। ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এখানে যেমন টার্নিং উইকেট ছিল তা এখানে ছিল না। হ্যাঁ, দুই দল চার জন করে স্পেশালিস্ট স্পিনার খেলিয়েছে। তারাই তো উইকেট পাবে। আমার কোনভাবে মনে হয় না উইকেট বড় কোনো পার্থক্য করে দিয়েছে। আমার কাছে মন হয় এখানে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেদের ঘাটতি ছিল।

আফগান ব্যাটসম্যানরাই পার্থক্য গড়েছে
হ্যাঁ, ব্যাটসম্যানম্যানরা পার্থক্য গড়বে সাকিব বলেছে এটা সত্যি। এটাই স্বাভাবিক। কারণ আফগান ব্যাটসম্যানরা প্রথম ইনিংস থেকে যেভাবে ব্যাট করেছে আমরা সেই ভাবে ব্যাট করতে পারিনি। কিন্তু সাকিব উইকট নিয়ে যা বলেছে, বা সে কেমন উইকেট চেয়েছে তা নিয়ে কারো মন্তব্য করা উচিত নয়। এটি তার ও টিম ম্যানেজম্যান্টের বিষয়।

টেস্ট নিয়েও গভীর পরিকল্পনা চাই
দেখেন আমরা প্রথম থেকেই ওয়ানডে নির্ভর দল। দেখেন আমাদের সব পরিকল্পনা কিন্তু ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘিরে। কিন্তু টেস্টও আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগে আমরা এতো টেস্ট খেলিনি। তবে এখন কিন্তু টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের কারণে অনেক টেস্ট খেলতে হবে। তাই ওয়ানডের মতো টেস্ট নিয়ে তেমন পরিকল্পনা থাকতে হবে। যদি সেটি না থাকে তাহলে আমাদের ব্যাটসম্যান-বোলারদের টেস্ট মানসিকতাই তৈরি হবে না। সবচেয়ে বড় কথা টেস্ট খেলা হলো বর্ণমালার মতো। এখান থেকে অ, আ ক, খ শিখেই ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি ভালো করার মতো শব্দ পাবেন। এখন বিশ্বে যারা সেরা দল ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড তারা কিন্তু টেস্টে ভালো বলেই অন্য ফরম্যাটেও সেরা। এখনই সময় আমাদের টেস্ট দল নিয়ে ভাবার। আগে টেস্ট দল এরপর বাকি দল নিয়ে ভাবতে হবে।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের সুযোগ কম
আমাদের দেশে যেটা হয় ওয়ানডেতে ভালো করে এসে টেস্টে সুযোগ পায়। এটি আমার ক্ষেত্রে হয়েছে। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যারা ভালো করছে তারা কম সুযোগ পাচ্ছে। অনেকেই বলে যে দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান ভালো না। কিন্তু আমি সেটি মানি না। যদি তাই হতো, এক রাউন্ডে চারটা-পাঁচটা সেঞ্চুরি হতো না। এমনকি এখানে এখন একজন বোলার ৪০টাও উইকেট নেয়। তার মানে মান বেড়েছে। তবে এখানে যারা খেলে তাদের যদি সুযোগ কম থাকে তাহলে কিন্তু এখানে খেলার মনোযোগ কমে যাবে।

আমি বিস্মিত নই
দেখেন এমন পারফরম্যান্সে বিস্মিত নই। কারণ এই শব্দটা অনেক বড়, বলতে পারেন আমি হতাশ। এর কারণ আফগানিস্তানের সঙ্গে আমাদের যোগ্যতা অনুসারে যেমন খেলার কথা ছিল তা হয়নি। প্রতিপক্ষ আর আফগানিস্তান বলেই হতাশাটা বেশি।

দুর্বলতাগুলো আঙুল দিয়ে দেখানো ম্যাচ
এই টেস্ট আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে এখনো দুর্বলতাগুলো কোথায়। এবং কোথায় কোথায় আমাদের উন্নতির প্রয়োজন। বিশেষ করে টেস্ট নিয়ে এখন আমাদের ভাবা কতটা প্রয়োজন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status