বাংলারজমিন

এলেঙ্গা-ভূঞাপুর বিকল্প সড়কে ভোগান্তি

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

২৬ আগস্ট ২০১৯, সোমবার, ৮:১৮ পূর্বাহ্ন

টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা-ভূঞাপুর সড়কের অধিকাংশ বিকল্প সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে নিয়মিত ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। শত শত যানবাহনে হাজারো যাতায়াতকারীর ভোগান্তির শেষ নেই। নিম্নমানের বিকল্প সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারের দুর্নীতি ও সড়ক বিভাগের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা।
এলেঙ্গা ভূঞাপুর সড়কে চলছে ব্রিজ নির্মাণ ও রাস্তা উন্নয়নের কাজ। ফলে যানবাহন চলাচলের জন্য বিকল্প সড়ক নির্মাণ করেছেন ঠিকাদাররা। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে বিকল্প সড়ক তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে। সড়কে একদিকে যেমন রোদে প্রচণ্ড ধুলা অন্যদিকে বৃষ্টিতে তেমনি থাকে কাদা। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সড়কে যাতায়াতকারীরা।
সরেজমিন শনিবার সকালে সড়কের ফুলতলা বিকল্প সড়কে গিয়ে দেখা যায়, একটি ট্রাক রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে উল্টে আছে। স্থানীয়রা জানান, শনিবার ভোরে ঢাকাগামী একটি ট্রাক সড়কের গর্তে পড়ে উল্টে যায়। এতে চালক ও হেলপার আহত হন। ফুলতলা ডাইভারশনে আরো অনেক বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এবং ইটগুলো উঠে যাচ্ছে।
আরো দেখা যায়, নারান্দিয়া ও শ্যামপুরে এক লেনের বেইলি ব্রিজের দুপাশে সময়ে সময়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ সময় আটকে পড়ে যাতায়াতকারীরা চরম ভোগান্তির শিকর হচ্ছেন। প্রতিটি ব্রিজের পাশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে যানবাহন চলাচলের বিকল্প সড়ক (ডাইভারশন)। এই বিকল্প সড়কে নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। ভাঙ্গা ব্রিজের আবর্জনা দিয়েই তৈরি হয়েছে অধিকাংশ ডাইভারশন। সড়কের শ্যামপুর, ফুলতলা, নারান্দিয়া, কাগমারীপাড়া ও শিয়ালকোল বিকল্প সড়ক একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। সড়কের মাথায় নেই মাটি, একটু পরপরই গর্ত। আবার সড়কের উপরেই রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। রোদ থাকলে বিকল্প সড়ক ধুলায় অন্ধকার হয়। ছিটানো হয় না নিয়মিত পানি। আর বৃষ্টিতে গর্তে জমে পানি। ফলে ছোট বড় যানবাহনগুলো চরম ঝুঁকি নিয়েই ডাইভারশন পারাপার হচ্ছে। ঝাঁকুনি আর ধুলায় পথচারী ও যাতায়াতকারীদের ভোগান্তির শেষ নেই। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা, বয়স্ক ও অসুস্থদের। এলেঙ্গা-ভূঞাপুর সড়ক দিয়ে কালিহাতী, ঘাটাইল ও ভূঞাপুর উপজেলার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাফেরা করেন। তারাকান্দি সার কারখানার মালবাহী যান চলাচলের প্রধান সড়ক এটি। উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন এবং বঙ্গবন্ধু  সেনানিবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন।
টাঙ্গাইলের সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে জানা যায় টাঙ্গাইল ভূঞাপুর সড়কের এলেঙ্গা থেকে চরগাবসারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রাস্তা ২৪ ফুট চওড়াকরণ ও উন্নয়নের জন্য ৪৭ কোটি টাকার কাজ করছে ২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর ১০টি ব্রিজ ও ১টি কালভার্ট নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ৫৩ কোটি টাকা। ৩টি প্যাকেজে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এই কাজ করছে। ১০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের ১লা নভেম্বর, শেষ হবে ২০২০ সালে ২০শে জুন। ফুলতলা গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেক বলেন ফুলতলা ব্রিজটির ভাঙা ইট আবর্জনা দিয়ে এই বিকল্প সড়ক বানানো হয়েছে। এখান দিয়ে চলাচল করা খুবই কঠিন। নারান্দিয়া বাসস্ট্যান্ড ব্রিজের ভাঙা আবর্জনা দিয়ে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করার সময় এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে সেই কাজে বাধা দেন। তারা শিডিউল মোতাবেক কাজ করার দাবি জানালেও সেটা কার্যকর হয়নি।
ব্যাটারি চালিত অটো রিকশাচালকরা বলেন, কি যে কষ্টে ডাইভারশনে উঠানামা করি সেটা আমরাই জানি। গাড়ির যানের কিছু থাকে না। ট্রাক চালকরা বলেন মালভর্তি গাড়ি নিয়ে অনেক ঝুঁকির মধ্যে চলাচল করি। মনে হয় এখনই বুঝি উল্টে গেল। সিএনজি চালিত একাধিক অটোরিকশা চালক বলেন রোগী নিয়ে যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে গেছে অধিকাংশ বিকল্প সড়ক। এছাড়া আমাদের গাড়ির ইঞ্জিন পার্টস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
টাঙ্গাইল থেকে ভূঞাপুরগামী যাত্রীরা বলেন, নতুন ব্রিজের কাজ হচ্ছে তাতে আমরা খুশি। কিন্তু ডাইভারশন পারাপার হওয়ার সময় আমাদের নাড়িভুড়ি এক হয়ে যায়। এগুলো ভালো করে নির্মাণ করা উচিত ছিল। ঠিকাদারদের গাফিলতিই এর মূল কারণ। ভুক্তভোগীরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চান।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিমুল এহসান সাংবাদিকদের কাছে নিম্নমানের ডাইভারশন নির্মাণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ডাইভারসনে গর্ত হয়ে থাকলে সেটা মেরামত করা হবে। ট্রাক উল্টে যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এবিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম বলেন নিম্নমানের ডাইভারশনের কারণে এই সড়কের যাতায়াতকারীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি আমি টাঙ্গাইলে মিটিংয়ে একাধিকবার বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status