শেষের পাতা

সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৫ আগস্ট ২০১৯, রবিবার, ৯:০৬ পূর্বাহ্ন

বিদায়ী অর্থবছরে বিশেষ নিরীক্ষার মাধ্যমে ৪ হাজার ৩৭৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ ভ্যাট)। এর মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র ১৭৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। দেশের মোট ভ্যাটের ৫৬ শতাংশ আহরণ করে এলটিইউ। অপেক্ষাকৃত বড়ো অঙ্কের ভ্যাট পরিশোধকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এলটিইউ অফিসের মাধ্যমে রাজস্ব পরিশোধ করে। এর মধ্যে মোবাইল ফোন কোম্পানিসহ অনেকের বিরুদ্ধেই রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ ভ্যাট) অফিস তাদের আওতাধীন সন্দেহজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক কার্যক্রম ও নথিপত্রের ওপর বিশেষায়িত নিরীক্ষা কার্যক্রম চালায়। ওই নিরীক্ষায় এসব ফাঁকি ধরা পড়ে।
প্রতিবদেন অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে ইন্টেলিজেন্স ওয়ার্ক, দাখিলপত্র যাচাই ও প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষার মাধ্যমে মোট ৪ হাজার ৩৭৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে। এর মধ্যে দাখিলপত্র যাচাই করেই ৩ হাজার ৩৯১ কোটি টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে এলটিইউ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উদ্ঘাটন হয়েছিল ১২০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এছাড়া ৩০ প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করে ৭৯৩ কোটি টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। আর ফাঁকি দেয়া রাজস্বের প্রায় ১৮০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। বাকি রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়াধীন। ফাঁকি উদ্ঘাটন ছাড়াও বিদায়ী অর্থবছরে ২২.৪০ শতাংশ রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। প্রতিষ্ঠানটির অর্জন নিয়ে এনবিআরে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া দিয়েছে। তাতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর, ব্যাংক, বীমা, ওষুধ, সিমেন্ট, খাদ্য ও পানীয় উৎপাদনকারী, বড় করপোরেটসহ ১৭০ প্রতিষ্ঠান এলটিইউ’র আওতায় রয়েছে। এলটিইউ প্রতিবছর বিশেষ নজরদারির মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করছে। কিছু প্রতিষ্ঠান ভুল স্বীকার করে রাজস্ব পরিশোধ করেছে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান ভুল স্বীকার করে না। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে রাজস্ব আদায় করা হয়।
এলটিইউ’র একজন কর্মকর্তা বলেন, কর্মকর্তাদের নিরলস চেষ্টা আর বিশেষ নজরদারির ফলে এ বিপুল পরিমাণ ফাঁকি উদ্ঘাটন সম্ভব হয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করেছে, আবার কিছু প্রতিষ্ঠান না জেনে ভুল করেছে। এছাড়া কিছু নন কমপ্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠানও রয়েছে; যারা সব সময় ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করে। এর আগে দাখিলপত্র যাচাই করে এত বিপুল পরিমাণ রাজস্ব উদ্ঘাটন হয়নি।
এদিকে বিদায়ী অর্থবছরে ৩০টি প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করে ৭৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় হয়েছে ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার রাজস্ব; যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ৭ কোটি ৪ লাখ টাকা বেশি। অবশিষ্ট রাজস্ব অনাদায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৯ প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করে ১ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা ফাঁকি উদ্ঘাটন এবং ৪৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে।
এলটিইউ’র একজন কর্মকর্তা বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করা হয়েছে। মোবাইল ফোন অপারেটরের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ রয়েছে। নিরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি মোবাইল অপারেটর থেকে ফাঁকি উদ্ঘাটন হয়েছে। এছাড়া পেট্রোবাংলাসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে ৩২ ইন্টেলিজেন্স ওয়ার্কের মাধ্যমে ১৯৪ কোটি ৩ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১১২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭টি ওয়ার্কের মাধ্যমে ৯৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা উদ্ঘাটন ও ৮৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। এছাড়া বিদায়ী অর্থবছরে এলটিইউ বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে ১৬টি আবেদন নিষ্পত্তির মাধ্যমে ১৪২ কোটি ১২ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করেছে। যদিও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮টি আবেদন নিষ্পত্তি করে ৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিদায়ী অর্থবছরে সরকার গ্যাস খাতে সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি দিয়েছে। এর ফলে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। গ্যাস খাত ব্যতীত এলটিইউ অন্যান্য খাতে ৩৯ হাজার ৩৮৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করেছে; রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি ২২.৪০ শতাংশ। যেখানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এলটিইউ আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ১৭৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা; প্রবৃদ্ধি ১১.৬০ শতাংশ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এলটিইউ’র ৫৯ হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে; যা বিদায়ী অর্থবছরে আদায় করা রাজস্বের তুলনায় ৩০.২৭ শতাংশ বেশি।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ১ অক্টোবর ১৬৬টি ইউনিট (প্রতিষ্ঠান) নিয়ে এলটিইউ’র যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭০। এর মধ্যে ১৫৬ প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ভ্যাট প্রদান করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status