বাংলারজমিন

শিডিউল বিপর্যয়ে ট্রেন, সংকট বাসেও ভোগান্তি চরমে

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

১৮ আগস্ট ২০১৯, রবিবার, ৮:১৭ পূর্বাহ্ন

ঢাকা ফিরতেও চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন উত্তরের যাত্রীরা। শিডিউলের মহাবিপর্যয় ট্রেনে আর রাস্তায় মিলছে না বাসের টিকিট। সব মিলে ঈদ করতে আসা এ অঞ্চলের ঢাকাগামী হাজার হাজার মানুষ সীমাহীন যন্ত্রণায় রাস্তায় কিংবা রেলস্টেশনে পড়ে আছেন। সরজমিন দেখা গেছে উত্তরের জেলা রংপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়ার বাসস্ট্যান্ডগুলোতে ঢাকাগামী হাজার হাজার নারী-পুরুষ অপেক্ষা করছেন। ঈদের ছুটি দুইদিন আগে শেষ হলেও গতকাল ছিলো ঢাকা ফেরতের শেষদিন। রোববার যে করেই হোক সকালে অফিসে পৌঁছাতে হবে। সময়মতো পৌঁছতে না পারলে ঈদের ছুটি অনেকের কাটা পড়বে। এমন আশঙ্কা থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস-ট্রাক ট্রেনের ছাদে হলেও ঢাকার পথে যাত্রীরা। যাদের আগে টিকিট কাটা ছিল তারা হয়তো কোনোভাবে বাসে অথবা ট্রেনে বসতে পেরেছেন। কিন্তু যাদের আগে টিকিট কাটা নেই তারা অনেকটা বিপাকে পড়ে আছেন। গতকাল উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ বাসস্ট্যান্ডগুলোতে দেখা গেছে টিকিটের জন্য যাত্রীরা এ কাউন্টার থেকে ও কাউন্টারে দৌড়াদৌড়ি করছেন। শিডিউলের প্রায় সব বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হওয়ায় এসব যাত্রী যাওয়ার কোনো বাহন পাচ্ছেন না। তবে কিছু সংখ্যক লোকাল রাস্তার ছোট ছোট বাস যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। এসব বাসের সংখ্যাও যাত্রীর তুলনায় খুব কম। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদ এবং ট্রাকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করছেন।
জয়পুরহাট থেকে বগুড়ার ঠনঠনিয়া বাস স্ট্যান্ডে আসা সুলতানা আক্তার জানান, জয়পুরহাটে ঢাকার কোনো বাসের এবং ট্রেনের টিকিট পাইনি। ফলে বগুড়ায় এসেছি সকাল দশটায়, তিনি বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত এখানে বসে ছিলেন বাসের আশায়। তখন পর্যন্ত তিনি কোনো বাসের টিকিট পাননি। গাইবান্ধার বোনারপাড়ার যাত্রী জয়নাল আবেদীন জানান, তিনিও সকালের কলেজ ট্রেন ধরে বগুড়ায় এসেছেন ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে। তিনিও সাড়ে তিনটা পর্যন্ত কোনো বাসের টিকিট পাননি। ক্লান্ত হয়ে বগুড়ার ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ডে কয়েক হাজার যাত্রী চাতক পাখির মতো বসে আছে। অপরদিকে উত্তরের জনপদ গাইবান্ধার সাঘাটা ও ফুলছড়ি। এই দুই উপজেলায় নেই কোনো ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ মহাসড়ক। তাই এই দুই উপজেলার মানুষের ঢাকা যেতে সহজ মাধ্যম রেলপথ। আর এই রেলপথের গুরত্বপূর্ণ স্টেশন হচ্ছে বোনারপাড়া জংশন। এই স্টেশনের যাত্রীদের ট্রেনে ভ্রমণে পোহাতে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনা। নিরাপদ যাত্রাপথ ট্রেনকে বেছে নিয়েও পারছেন না সময়মতো পৌছাতে। তাই হতাশায় সারারাত। জেগেও মিলছে না  সমাধান কারণ যে সময় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল সেই সময় ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশেই ছাড়েনি। ঢাকাগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি শুক্রবার রাত ১০টা ১১ মিনিটে বোনারপাড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ার কথা থাকলেও ১০ ঘণ্টা বিলম্বে ট্রেনটি শনিবার সকাল ৮ টা ২০ মিনিটে বোনারপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ঢাকার একটি বেসরকারি ফার্মে চাকরি করেন কুলসুম খাতুন, ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি সাঘাটায় আসেন। গতকাল সকাল ১০ টা থেকে কর্মস্থলে যোগ দেয়ার কথা তাই ছুটি শেষে শুক্রবার রাত ১০ টায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার রাত ১০ টার ট্রেন এলো শনিবার সকাল  সারে ৮ টায়। কুলসুমের মতো খয়বর, আকবর আলী এবং চামেলী বেগমদের একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। তারা সারারাত বোনারপাড়া রেলস্টেশনে ট্রেনের আসায় বসে ছিলো। রংপুরের এক যাত্রী সারারাত জেগে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে জানালায় মাথা দিয়ে ঝিমাচ্ছিলেন। ট্রেন বগুড়া রেলস্টেশনে পৌঁছালে তার সঙ্গে কথা হয়। নাম শফিকুল ইসলাম। ঢাকার মগবাজারে তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে আছেন। তিনি জানান, প্রত্যেক ঈদেই ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় লাখ লাখ যাত্রীর সেবা দিতে বরাবরই ব্যর্থ। তিনি জানান, অন্য কোনো উপায় থাকলে কখনোই ট্রেনের যাত্রী হতাম না।
এদিকে প্রচণ্ড ভিড়ের মাধ্যে অজ্ঞান পার্টি, পকেটমাররা বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। জীবেনর ঝুঁকি নিয়ে ভিড় ঠেলে ট্রেনে ওঠার সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খোয়াচ্ছেন অনেকেই। বিশেষ করে নারীদের টার্গেট নিয়ে পকেটমাররা বেশি তৎপর। বোনারপাড়া রেলস্টেশন থেকে সকালে ট্রেনে ওঠার সময় ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে দামি মোবাইল ফোন বের করে নেয় জেসমিন আকতারের। তিনি সোনাতলা স্টেশনে পৌঁছার পর ব্যাগের চেইন খোলা দেখেন। পরে ব্যাগে মোবাইল ফোনটি নেই সেটিও নিশ্চিত হয়েছেন। বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন মাস্টার মাহবুবুর রহমান জানান, ঢাকাগামী এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা বিলম্বে যাচ্ছে। লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে আসা  ঢাকাগামী ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি শুক্রবার রাত ১১ টায় যাওয়ার কথা ছিল সেটি শনিবার সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটি বোনারপাড়া স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়েছে। এ ছাড়াও রংপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা গামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি শুক্রবার রাত ১০টা ১১ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ার কথা থাকলেও ১০ ঘণ্টা লেটে ট্রেনটি শনিবার সকাল ৮ টা ২০ মিনিটে বোনারপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status