বিশ্বজমিন

শ’ শ’ বছর ধরে ক্যান্সার ভারতে, পশ্চিমায়নের ভূমিকা নেই

মানবজমিন ডেস্ক

১৭ আগস্ট ২০১৯, শনিবার, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন

ভারতে কয়েকশ’ বছর ধরেই ক্যান্সারের অস্তিত্ব বিরাজমান। এর সঙ্গে পশ্চিমায়ন বা আধুনিকায়নের কোনো সম্পর্ক নেই। একটি নতুন গবেষণায় এই প্রমাণ মিলেছে। ‘হিস্টোরি অব দ্য গ্রোয়িং বার্ডেন অব ক্যান্সার ইন ইন্ডিয়া: ফ্রম অ্যান্টিকুইটি টু দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রবন্ধে ভারতে ক্যান্সারের ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। পরিশেষে গবেষকরা এই অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, ভারতে ক্যান্সারের অস্তিত্ব বহুদিন ধরেই। এটি কোনো নতুন বিষয় নয়। এছাড়া বিভিন্ন মিডিয়ায় যেমনটা বলা হয়, ক্যান্সারের সঙ্গে পশ্চিমা সংস্কৃতি বিস্তারের কোনো সম্পর্ক নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত কিংস কলেজের রবার্ট ডি স্মিথ ও কলকাতার টাটা মেডিকেল সেন্টারের মোহনদাস কে মল্লাথের লেখা ওই গবেষণা প্রবন্ধ জার্নাল অব গ্লোবাল অনকোলোজিতে প্রকাশিত হয়েছে। এ খবর দিয়েছে দ্য ওয়্যার।
খবরে বলা হয়, স্মিথ ও মল্লাথের গবেষণায় দু’টি ধারণার ওপর নজর দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, মানুষসহ প্রাণী অর্গানিজমে ক্যান্সার হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ঝুঁকি হলো বয়স। মল্লাথ পরে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, এই গবেষণা প্রবন্ধ লেখার একটি কারণ ছিল এই যে, রোগিরা প্রায়ই তাকে জিজ্ঞেস করেন, ভারতে কি ক্যান্সার মহামারি আকার ধারণ করেছে কিনা। অনেক রোগি তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমি বিড়ি খাই না, মদ খাই না, নিরামিষভোজী, তারপরও আমার কেন ক্যান্সার হলো?’

ভারতে আগে খরা, দুর্ভিক্ষ, সংক্রমণের কারণে স্বল্প আয়ু ও অকাল মৃত্যু ছিল সবচেয়ে বড় সমস্যা। এখন এই সমস্যা কিছুটা উন্নতির দিকে হওয়ার পর মানুষের রোগের ক্ষেত্রে এক ধরণের পরিবর্তন এসেছে। এ কারণেই ক্যান্সার সহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ বেড়েছে।
এই গবেষণায় এই ধারণাও উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ক্যান্সার নতুন একটি রোগ ও পশ্চিম থেকে আমদানি হয়েছে। গবেষকরা অতীত গবেষণা ও আর্কাইভ ঘেঁটে প্রমাণ করেছেন যে, ক্যান্সারের মতো অসুস্থতা ভারত উপমহাদেশে প্রাচীনকাল থেকেই ছিল। ১৯ শতকের দিকে ক্যান্সার প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। বিংশ শতাব্দির পর থেকে ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। কারণ ততদিনে শনাক্ত করার পদ্ধতি অনেক উন্নত হয়ে ওঠে।

গবেষকরা বলেন, প্রাচীন পুস্তক আথার্ভা বেদাতে কিছু রোগের লক্ষণের কথা বলা আছে যা অনেকটা পরিপক্ব ক্যান্সারের লক্ষণের সঙ্গে মিলে যায়। ক্যান্সারের মতো রোগ ও এর পথ্যের কথা বর্ণনা করা আছে আয়ুর্বেদ ও সিদ্ধার মতো প্রাচীন পুস্তকে। তবে ক্যান্সার আধুনিক নিয়মে শনাক্ত করা শুরু হয় ১৯১০ সালের দিকে। এছাড়া ১৮৬৬ সালে ৩০ জন ক্যান্সার রোগির ওপর গবেষণা চালিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ডব্লিউ জে এমসলি। সেখানে বলা হয়, এই রোগিদের ক্যান্সার হওয়ার পেছনে গাঁজা খাওয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে।
২০১৮ সাল নাগাদ ভারতে ক্যান্সার রোগির সংখ্যা ১১ লাখ ৫০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। ২০৪০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১৯৯০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ক্যান্সার থেকে মৃত্যুর হার দ্বিগুণ হয়েছে। মূলত, চাহিদা মোতাবেক ক্যান্সার সেবা উপলভ্য না হওয়াকেই এই রোগ এমন প্রাণঘাতী হয়ে উঠার অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়া সরকারি খরচে গরিবদের ক্যান্সার চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অপরদিকে বেসরকারি চিকিৎসা ক্রমেই ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status