বাংলারজমিন

বানভাসিদের নৌকায় বসবাস

মো. সাওরাত হোসেন সোহেল, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে

২১ জুলাই ২০১৯, রবিবার, ৮:৪৯ পূর্বাহ্ন

ভেঙে গেছে বাঁধ, সড়ক ও রেললাইন। ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি, মিটার ডুবে যাওয়ায় নেই বিদ্যুৎ। বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। অসহায় হয়ে পড়েছে মানুষ। ঘূর্ণায়মান পানিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের চিলমারী। বানভাসি মানুষদের উঠানে পানি, ঘরে পানি, চারদিকেও থৈ থৈ করছে পানি আর পানি। ঠাঁইও নেই, পরিবেশও নেই উঁচু স্থানে বসবাস করার। উপজেলার হাসপাতাল সড়ক, মাটিকাটা বাঁধ, চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানের সব উঁচু স্থানও ভরে গেছে মানুষে। বেশিরভাগ পরিবারের থাকার ঠাঁই নেই। শুধু তাই নয়, আছে চোর ডাকাতের ভয়। গরু-ছাগল ও ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে পারছে না অনেক পরিবার। তাই বাধ্য হয়েই বিভিন্ন স্থানের বানভাসি মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে নৌকায় পেতেছে বসতবাড়ি। তাদের রান্নাবান্না, নাওয়া, খাওয়া, থাকার ভরসা এখন নৌকা। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। বন্যায় আক্রান্ত পরিবারগুলো প্রায় ১০-১২ দিন ধরে নৌকার উপরেই বাসা বেঁধে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কেউ শুকনা খাবার, কেউ এক বেলা রান্না করে পার করছে দিনরাত। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও চিলমারী উপজেলা সদরসহ চরাঞ্চলগুলো জলমগ্ন থাকায় বিস্তীর্ণ জনপদে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাব। নৌকার উপর বসবাসরত নয়ারহাটের আকতারা বেগম, জোড়গাছ মাঝি পাড়ার বালাসহ বেশ কিছু পরিবারের নারী সদস্য জানিয়েছেন, পরিবার পরিজন নিয়ে ছোট নৌকায় বসবাস করতে তাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। দুর্গত এলাকায় ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ বানভাসি মানুষের মাঝে জোটেনি একমুঠো ত্রাণের চাল। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে অনেক পরিবারের। এসব ঘরছাড়া মানুষগুলোর হাতে প্রায় ১ মাস থেকে কাজ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করছে। নৌকাবিহীন পরিবারগুলো কেউ মাচা পেতে, কেউ রাস্তার উপর খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারি পর্যায়ে সীমিত ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও বিপুলসংখ্যক বানভাসির ভাগ্যে জুটছে না তা। রমনা মাঝিপাড়া, নয়ারহাটের বড়জা, দিয়ারখাতা এলাকার আকতারা, আমিনুল, বালারানীসহ অনেকে জানান- ঘরেও কোমর পানি, তাই থাকি এখন নৌকার উপর। এক বেলা রান্না না হলে খাই খালি শুকনা খাবার। খড়খড়িয়া বাঁধ, সবুজপাড়া এলাকার শান্তি, রহিমা ও মাটিকাটা সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের উপর বসবাসরতরা জানান, প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি থাকলেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি একমুঠো ত্রাণের চাল। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মো. কহিনুর জানান, এ পর্যন্ত বানভাসি মানুষের মাঝে ১১০ টন চাল ও ২শ’ পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে পাউবো সূত্রে জানা গেছে, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমলেও তা বিপদসীমার ৯০ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status