প্রথম পাতা

লক্ষাধিক বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ

এমএম মাসুদ

১৭ জুলাই ২০১৯, বুধবার, ১০:১১ পূর্বাহ্ন

পুঁজিবাজারে টানা দরপতন। বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ। বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এসব নানা কারণে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট বা হিসাবের ফি পরিশোধে অনাগ্রহ ছিল বিনিয়োগকারীদের মাঝে। অর্থাৎ নবায়ন না করা ও শেয়ার ব্যবসায় ভালো করতে না পারায় বিনিয়োগকারীদের লক্ষাধিক বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। গত দুই মাসে বাতিল হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৩৮টি বিও অ্যাকাউন্ট। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, সেকেন্ডারি মার্কেটের মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আবার আইপিও বাজারেও খরা চলছে। তাই এসব অ্যাকাউন্ট ঝরে গেছে বলে মনে করেন তারা। তাদের মতে, যেসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে, এর মধ্যে বেশিরভাগই প্রাইমারি মার্কেট বা আইপিওতে আবেদনধারী। এছাড়া সেকেন্ডারি মার্কেটে সুবিধা করতে না পেরে অনেকেই পুঁজিবাজার ছেড়ে গেছেন বলে তাদের ধারণা।

সিডিবিএল প্রতিবেদন মতে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নবায়ন না করায় জুন মাস শেষে বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। জানা গেছে, এপ্রিল মাসের ২৯ তারিখ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিও হিসাব ছিল ২৮ লাখ ৪৮ হাজার ৩২টি। জুন মাস শেষে ১০শে জুলাই পর্যন্ত বিও অ্যাকাইন্ট দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৩২ হাজার ৫৮২টি। সে হিসেবে ২ মাসে বিও অ্যাকাউন্টের পরিমাণ কমেছে ১ লাখ ১৫ হাহার ৭৩৮টি। অর্থাৎ গত দুই মাসে শেয়ারবাজার থেকে লক্ষাধিক বিনিয়োগকারী বিদায় নিয়েছেন।

সিডিবিএল হিসাব অনুযায়ী, ২০১২ ও ২০১৩ সালে বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্ট কমে। ২০১৪ সালে ১২ শতাংশ ও ২০১৫ সালে ৮ শতাংশ বিও হিসাব বৃদ্ধি পায়। আর ২০১৬ সালে বিও হিসাব কমেছে ১.৩ শতাংশ বা ৪০ হাজারের বেশি। ২০১৮ সালে বিও হিসাব বন্ধ বা কমার অঙ্কটি বেশি।

ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, যেসব অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়েছে, এর বেশিরভাগই প্রাইমারি মার্কেটে আবেদনের জন্য খোলা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে আইপিওতে প্রতিযোগিতা বেড়েছে, সে জন্য অনেকে তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা প্রতি বছরই হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।

২৭ লাখ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুরুষ রয়েছে ২০ লাখ ৪ হাজার ৭৯২ জন। যা এর আগের মে মাসের শুরুতে ছিল ২০ লাখ ৭৮ হাজার ৬৭৮ জন। সেই হিসাবে ২ মাসে পুরুষ বিনিয়োগকারীর বিও কমেছে ৭৩ হাজার ৮৮৬টি। আলোচ্য সময়ে নারী বিনিয়োগকারী বিও হিসাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৭ হাজার ৭৯০টি। এর আগে ১লা মে’তে ছিল ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৪৫৪টি। সে হিসেবে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমেছে ২৮ হাজার ৬৬৪টি।

আলোচ্য মাসে কোম্পানি বিনিয়োগকারী বা কোম্পানি বিও হিসাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ২৫১টিতে। এর আগে মে মাসে যা ছিল ১৩ হাজার ১৫৮টি। এছাড়া এই সময়ে ব্যক্তি হিসাবের পরিমাণ ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৯৯২টি। যৌথ হিসাব ১০ লাখ ৫৯০টি। প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের পরিমাণ ১ লাখ ৬১ হাজার ২৮৮টি, সাধারণ বিনিয়োগকারীর বিও সংখ্যা ২৫ লাখ ৭১ হাজার ২৯৪টি।

নিয়ম অনুযায়ী জুন মাসে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে, সেসব বন্ধ হয় না। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা ২০০৩ অনুযায়ী বিও হিসাব পরিচালনায় ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি প্রদান করতে হয়। ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নে বার্ষিক ফি প্রদানে জুন মাস নির্ধারণ করে। একই সঙ্গে বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। ২০১১ সালে বিএসইসি ৩০শে জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নে বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। এই সময়ে নবায়ন না করলে বিও বাতিল করা হবে বলে জানানো হয়। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার লেনদেন হয়। প্রাইমারি মার্কেটে সাধারণত নতুন কোম্পানির আইপিওতে শেয়ার বরাদ্দ পায় বিনিয়োগকারী। নির্ধারিত মূল্যে শেয়ার বরাদ্দ পাওয়ার পর সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন শুরু হলে আইপিওতে ভালো মুনাফা আসে। আর সেকেন্ডারি মার্কেটেও শেয়ার লেনদেন করতে পারে বিনিয়োগকারী। তবে বিও হিসাবধারীর একটি বৃহৎ অংশই শুধু প্রাইমারি মার্কেটে বা আইপিওতে শেয়ার লেনদেন করে। সমপ্রতি পুঁজিবাজারে নতুন নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি কম হওয়ায় ভালো করতে পারছে না তারা। যার জন্য অনেকেই নবায়নের বিপরীতে হিসাব বন্ধ করছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status