এক্সক্লুসিভ
দোষ জিনের, অভিযোগ খুনের!
ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
১৭ জুলাই ২০১৯, বুধবার, ৯:১৪ পূর্বাহ্ন
তরুণী ও গৃহবধূর মৃত্যুর দোষ চাপানো হচ্ছে জিনের ঘাড়ে। গত বছর নভেম্বর থেকে এমন চারটি ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। কিন্তু এসব মৃত্যু খুন বলে অভিযোগ করেছেন গৃহবধূ ও তরুণীর স্বজনরা।
সর্বশেষ আরফা খাতুন (৩৬) নামে এক গৃহবধূকে জিনে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছে বলে খবর প্রচারের পর গোপনে লাশ দাফন করার ঘটনা ঘটে রোববার সকালে। বাঁশখালী উপজেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী খানখানাবাদ ইউনিয়নের প্রেমাশিয়া গ্রামের ঘটনা এটি।
আর মঙ্গলবার সকাল থেকে বিষয়টি উপজেলার সর্বত্র মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের বিশ্বাস ওই গৃহবধূকে জিনে মেরেছে। এ জন্য নিজেদের পরিবারের বউ-ঝিদের সাবধানে চলাফেরার সতর্কতা দেয়া হচ্ছে।
তবে এই মৃত্যু স্বামীর হাতে খুন বলে অভিযোগ তুলেছেন গৃহবধূ আরফা খাতুনের স্বজনরা। তারা বলছেন, স্বামী মোক্তার হোসেনই আরফা খাতুনকে খুন করেছে। গভীর রাতে জিনের প্রভাবে পুকুরে ডুবে মরেছে বললেও ওই ছোট পুকুরে কোমর সমান পানি রয়েছে। অপরদিকে রোববার রাত ১টায় ঘর থেকে বের হয়ে স্বামী মোক্তার হোসেন এ পর্যন্ত ঘরে ফেরেনি।
স্বজনরা জানান, ১৮ বছর আগে খানাখানাবাদ ইউনিয়নের প্রেমাশিয়া গ্রামের আব্দুল আলীর ছেলে মোক্তার হোসেনের সঙ্গে একই গ্রামের মৃত ইসমাইলের কন্যা আরফা খাতুনের সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের কাউছার (১৭), আনছার (১৪), আকি সুলতানা (১২), আকিব উদ্দিন (৭) ও নাজিয়া সুলতানা (২) নামের ৫ সন্তানের জন্ম হয়। মোক্তার হোসেন মাছ ধরার নৌকায় চাকরি করেন। ২০১৩ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর আরফা খাতুনের ভাই মো. হাশেমের স্ত্রী বেবী আক্তার খুন হয়। ওই খুনের সঙ্গে মোক্তার হোসেনও জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে ওই মামলায় ৩ নম্বর আসামি করা হয়। ওই ঘটনার পর থেকে মোক্তার হোসেন ও আরফা খাতুনের মাঝে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকতো।
গত শনিবার রাত ১টায় মোক্তার হোসেন বাড়ির সবার অজান্তে ঘর থেকে বের হয়ে অজানা স্থানে অবস্থান করে। সকালে বাড়ির সবাই ঘুম থেকে জেগে দেখতে পায় আরফা খাতুনের লাশ ঘরের পেছনে পুকুরে ভাসছে। ওই পুকুরে পানির পরিমাণ কোমর সমান। এ ছাড়া আরফা খাতুন ছোটবেলা থেকেই সমুদ্রের পানিতে সাঁতার কেটে বড় হয়েছে। ওই পানিতে ডুবে মরার কোনো সম্ভাবনা নেই। রোববার সকালে লাশ তুলে মোক্তার হোসেন ও পরিবারের সবাই প্রচার করতে থাকে জিনের আছরে পানিতে ডুবে মরেছে আরফা। পরে প্রভাবশালী মহল যুক্ত হয়ে গোপনে লাশ দাফন করে।
আরফার শাশুড়ি শামসুন নাহার ও শ্বশুর আব্দুল আলী বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রতিবেশীর জায়গা নিয়ে বিরোধ আছে। তারা প্রচার করছে আরফাকে হত্যা করা হয়েছে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, গভীর রাতে ঘর থেকে বের হলে আরফাকে জিন পানিতে ডুবিয়ে মেরেছে। এর আগেও আরফাকে জিন আক্রমণ করে হাত ভেঙে দিয়েছিল।
আরফা খাতুনের ভাই ছৈয়দ আহমদ বলেন, প্রভাবশালীদের কারণে মুখ খুলতে পারছি না। আমার বোনকে তার স্বামী মোক্তার হোসেন কৌশলে হত্যার পর জিনে মেরেছে বলে গোপনে লাশ দাফন করেছে। মোক্তার হোসেন এর আগেও আমার ভাইয়ের স্ত্রীকে হত্যা করেছিল। আমি আরফা হত্যার বিচার চাই। এর আগে উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামে রুমা আক্তার (১৬) নামে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনা ঘটে। কিন্তু অভিযুক্তের স্বজনরা জিনের প্রভাবে ছাত্রীটি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে বলে দাবি করে।
এ ঘটনায় গত ২৮শে জুন মুজিবখিল্যা এলাকায় স্থানীয় তিন ইউপি সদস্য নিয়ে সালিশ বৈঠক হয়। এতে নির্যাতিত ছাত্রীটি স্থানীয় বখাটে মহিউদ্দিনকে দায়ী করে।
ইউপি সদস্য আব্দুর সোবাহান সিকদার, নুরুল হাকিম ও আব্দুল জব্বার বলেন, আমরা ওই অপকর্মের হোতাকে খোঁজার জন্য বৈঠক করেছিলাম। মহিউদ্দিন নামে এক ছেলের নাম ছাত্রীটি বলেছে। কিন্তু বার বার বৈঠকে জিনের বিষয়টি ওঠে আসায় আমরা সমাধান করতে পারিনি। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।
এর আগে ১৬ই ফেব্রুয়ারি একই গ্রামে বিয়ের প্রস্তাবে রুমা আক্তার নামে অপর এক তরুণীর সঙ্গে প্রতিবেশী মৃত বজল আহমদের ছেলে তৌহিদুল ইসলামের মেলামেশায় অন্তঃসত্ত্বা হলে জিনের প্রভাবে হয়েছে বলে তাকে হত্যা করা হয়।
পরে তার লাশ দাফন করা হয়। এর ১৯ দিন পর রুমার বাবা ওই ঘটনায় মামলা করায় আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য ২ মাস ২২ দিন পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করেন।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, গণ্ডামারা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামের নুরুল আমিনের কন্যা রুমা আক্তারের সঙ্গে একই এলাকার তৌহিদুল ইসলাম বিবাহ করার প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধভাবে মেলামেশা করে। এতে রুমা আকতার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।
মৃত্যুর ৩ দিন আগে ৮ই এপ্রিল রাত ১০টা থেকে ৯ই এপ্রিল ভোর পর্যন্ত রুমা আক্তারকে বিভিন্ন কৌশলে ঘর থেকে বের করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পার্শ্ববর্তী বাড়ির পুকুর পাড়ে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে তারা। লাশটি জিনে মেরেছে প্রচার করে আসামিপক্ষের লোকজন দাফন করে।
কয়েকদিন পর মূল ঘটনা জানাজানি হলে রুমার বাবা নুরুল আমিন বাদী হয়ে বাঁশখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৩০২/৩৪ দণ্ডবিধিতে তৌহিদুল ইসলাম (৩০), আক্তার হোসেন (৪৫), নজরুল ইসলাম (৩২), ফৌজুল কবির (৩৮), রুজিনা আক্তার (২৮), ইয়াছমিন আক্তার (৩৩), খতিজা বেগম (৪২)-এর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো আসামি দেখিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বাঁশখালীর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাইনুল ইসলামের আদালত মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলা তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপ-পরিদর্শক আনিছুর রহমান বলেন, মামলা তদন্তকালীন সময়ে বাদী ও বিবাদী, এলাকার লোকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আদালতের আদেশ পাওয়ার পর বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।
একইভাবে গত ৭ই নভেম্বর উপজেলার পুঁইছড়ি নাপোড়া গ্রামের কান্তাপাড়া দুর্গা বাপের বাড়ির রণধীর দেবের স্ত্রী শিখা দে (৩৫) বাজার করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। পরদিন ৮ই নভেম্বর ভোরে চাম্বল কাটারাশি ব্রিজের পাশে নুরুল ইসলামের বাড়ির উত্তর পার্শ্বে পতিত জমিতে শিখা দে’র মরদেহ পাওয়া যায়। এ সময় শিখা দে’কেও জিনে মেরেছে বলে প্রচার করা হয়।
শিখা দে’র বোন মঙ্গুলী দে বাদী হয়ে বাঁশখালী থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তভার বাঁশখালী থানার এসআই মো. ফারুক উদ্দিনকে দেয়া হলে তিনি ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দক্ষিণ চাম্বলের আহম্মেদুর রহমানের পুত্র মো. জকরিয়া (৫৫) এবং শেখেরখীল খামারপাড়ার মৃত আবুল হোসেনের পুত্র মো. নুরুল ইসলাম (৪৫)কে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা শিখা দে’কে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করে বলে জানান বাঁশখালী থানার ওসি (তদন্ত) কামাল উদ্দিন।
গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বাদশা এ প্রসঙ্গে বলেন, কিছুদিন আগে গণ্ডামারার বড়ঘোনা গ্রামে অন্তঃসত্ত্বা এক তরুণীকে জিনে মেরেছে বলে শুনেছি। এরপর ৫ম শ্রেণির ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর জিনের আছর বলে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এরপর গৃহবধূকে জিন পুকুরে ডুবিয়ে মেরেছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। এতে সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। যা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, বাঁশখালীতে বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে গ্রামে গ্রামে গিয়ে অসংখ্যবার সভা-সমাবেশ করেছি। এসব অপকর্ম রোধে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সচেতন ও উদ্যোগী হতে হবে। নচেৎ এসব বন্ধ করা সম্ভব নয়। অসহায় এসব পরিবারকে সার্বিক আইনি সহযোগিতা করা হবে।
সর্বশেষ আরফা খাতুন (৩৬) নামে এক গৃহবধূকে জিনে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছে বলে খবর প্রচারের পর গোপনে লাশ দাফন করার ঘটনা ঘটে রোববার সকালে। বাঁশখালী উপজেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী খানখানাবাদ ইউনিয়নের প্রেমাশিয়া গ্রামের ঘটনা এটি।
আর মঙ্গলবার সকাল থেকে বিষয়টি উপজেলার সর্বত্র মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের বিশ্বাস ওই গৃহবধূকে জিনে মেরেছে। এ জন্য নিজেদের পরিবারের বউ-ঝিদের সাবধানে চলাফেরার সতর্কতা দেয়া হচ্ছে।
তবে এই মৃত্যু স্বামীর হাতে খুন বলে অভিযোগ তুলেছেন গৃহবধূ আরফা খাতুনের স্বজনরা। তারা বলছেন, স্বামী মোক্তার হোসেনই আরফা খাতুনকে খুন করেছে। গভীর রাতে জিনের প্রভাবে পুকুরে ডুবে মরেছে বললেও ওই ছোট পুকুরে কোমর সমান পানি রয়েছে। অপরদিকে রোববার রাত ১টায় ঘর থেকে বের হয়ে স্বামী মোক্তার হোসেন এ পর্যন্ত ঘরে ফেরেনি।
স্বজনরা জানান, ১৮ বছর আগে খানাখানাবাদ ইউনিয়নের প্রেমাশিয়া গ্রামের আব্দুল আলীর ছেলে মোক্তার হোসেনের সঙ্গে একই গ্রামের মৃত ইসমাইলের কন্যা আরফা খাতুনের সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের কাউছার (১৭), আনছার (১৪), আকি সুলতানা (১২), আকিব উদ্দিন (৭) ও নাজিয়া সুলতানা (২) নামের ৫ সন্তানের জন্ম হয়। মোক্তার হোসেন মাছ ধরার নৌকায় চাকরি করেন। ২০১৩ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর আরফা খাতুনের ভাই মো. হাশেমের স্ত্রী বেবী আক্তার খুন হয়। ওই খুনের সঙ্গে মোক্তার হোসেনও জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে ওই মামলায় ৩ নম্বর আসামি করা হয়। ওই ঘটনার পর থেকে মোক্তার হোসেন ও আরফা খাতুনের মাঝে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকতো।
গত শনিবার রাত ১টায় মোক্তার হোসেন বাড়ির সবার অজান্তে ঘর থেকে বের হয়ে অজানা স্থানে অবস্থান করে। সকালে বাড়ির সবাই ঘুম থেকে জেগে দেখতে পায় আরফা খাতুনের লাশ ঘরের পেছনে পুকুরে ভাসছে। ওই পুকুরে পানির পরিমাণ কোমর সমান। এ ছাড়া আরফা খাতুন ছোটবেলা থেকেই সমুদ্রের পানিতে সাঁতার কেটে বড় হয়েছে। ওই পানিতে ডুবে মরার কোনো সম্ভাবনা নেই। রোববার সকালে লাশ তুলে মোক্তার হোসেন ও পরিবারের সবাই প্রচার করতে থাকে জিনের আছরে পানিতে ডুবে মরেছে আরফা। পরে প্রভাবশালী মহল যুক্ত হয়ে গোপনে লাশ দাফন করে।
আরফার শাশুড়ি শামসুন নাহার ও শ্বশুর আব্দুল আলী বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রতিবেশীর জায়গা নিয়ে বিরোধ আছে। তারা প্রচার করছে আরফাকে হত্যা করা হয়েছে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, গভীর রাতে ঘর থেকে বের হলে আরফাকে জিন পানিতে ডুবিয়ে মেরেছে। এর আগেও আরফাকে জিন আক্রমণ করে হাত ভেঙে দিয়েছিল।
আরফা খাতুনের ভাই ছৈয়দ আহমদ বলেন, প্রভাবশালীদের কারণে মুখ খুলতে পারছি না। আমার বোনকে তার স্বামী মোক্তার হোসেন কৌশলে হত্যার পর জিনে মেরেছে বলে গোপনে লাশ দাফন করেছে। মোক্তার হোসেন এর আগেও আমার ভাইয়ের স্ত্রীকে হত্যা করেছিল। আমি আরফা হত্যার বিচার চাই। এর আগে উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামে রুমা আক্তার (১৬) নামে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনা ঘটে। কিন্তু অভিযুক্তের স্বজনরা জিনের প্রভাবে ছাত্রীটি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে বলে দাবি করে।
এ ঘটনায় গত ২৮শে জুন মুজিবখিল্যা এলাকায় স্থানীয় তিন ইউপি সদস্য নিয়ে সালিশ বৈঠক হয়। এতে নির্যাতিত ছাত্রীটি স্থানীয় বখাটে মহিউদ্দিনকে দায়ী করে।
ইউপি সদস্য আব্দুর সোবাহান সিকদার, নুরুল হাকিম ও আব্দুল জব্বার বলেন, আমরা ওই অপকর্মের হোতাকে খোঁজার জন্য বৈঠক করেছিলাম। মহিউদ্দিন নামে এক ছেলের নাম ছাত্রীটি বলেছে। কিন্তু বার বার বৈঠকে জিনের বিষয়টি ওঠে আসায় আমরা সমাধান করতে পারিনি। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।
এর আগে ১৬ই ফেব্রুয়ারি একই গ্রামে বিয়ের প্রস্তাবে রুমা আক্তার নামে অপর এক তরুণীর সঙ্গে প্রতিবেশী মৃত বজল আহমদের ছেলে তৌহিদুল ইসলামের মেলামেশায় অন্তঃসত্ত্বা হলে জিনের প্রভাবে হয়েছে বলে তাকে হত্যা করা হয়।
পরে তার লাশ দাফন করা হয়। এর ১৯ দিন পর রুমার বাবা ওই ঘটনায় মামলা করায় আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য ২ মাস ২২ দিন পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করেন।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, গণ্ডামারা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামের নুরুল আমিনের কন্যা রুমা আক্তারের সঙ্গে একই এলাকার তৌহিদুল ইসলাম বিবাহ করার প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধভাবে মেলামেশা করে। এতে রুমা আকতার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।
মৃত্যুর ৩ দিন আগে ৮ই এপ্রিল রাত ১০টা থেকে ৯ই এপ্রিল ভোর পর্যন্ত রুমা আক্তারকে বিভিন্ন কৌশলে ঘর থেকে বের করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পার্শ্ববর্তী বাড়ির পুকুর পাড়ে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে তারা। লাশটি জিনে মেরেছে প্রচার করে আসামিপক্ষের লোকজন দাফন করে।
কয়েকদিন পর মূল ঘটনা জানাজানি হলে রুমার বাবা নুরুল আমিন বাদী হয়ে বাঁশখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৩০২/৩৪ দণ্ডবিধিতে তৌহিদুল ইসলাম (৩০), আক্তার হোসেন (৪৫), নজরুল ইসলাম (৩২), ফৌজুল কবির (৩৮), রুজিনা আক্তার (২৮), ইয়াছমিন আক্তার (৩৩), খতিজা বেগম (৪২)-এর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো আসামি দেখিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বাঁশখালীর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাইনুল ইসলামের আদালত মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলা তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপ-পরিদর্শক আনিছুর রহমান বলেন, মামলা তদন্তকালীন সময়ে বাদী ও বিবাদী, এলাকার লোকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আদালতের আদেশ পাওয়ার পর বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।
একইভাবে গত ৭ই নভেম্বর উপজেলার পুঁইছড়ি নাপোড়া গ্রামের কান্তাপাড়া দুর্গা বাপের বাড়ির রণধীর দেবের স্ত্রী শিখা দে (৩৫) বাজার করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। পরদিন ৮ই নভেম্বর ভোরে চাম্বল কাটারাশি ব্রিজের পাশে নুরুল ইসলামের বাড়ির উত্তর পার্শ্বে পতিত জমিতে শিখা দে’র মরদেহ পাওয়া যায়। এ সময় শিখা দে’কেও জিনে মেরেছে বলে প্রচার করা হয়।
শিখা দে’র বোন মঙ্গুলী দে বাদী হয়ে বাঁশখালী থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তভার বাঁশখালী থানার এসআই মো. ফারুক উদ্দিনকে দেয়া হলে তিনি ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দক্ষিণ চাম্বলের আহম্মেদুর রহমানের পুত্র মো. জকরিয়া (৫৫) এবং শেখেরখীল খামারপাড়ার মৃত আবুল হোসেনের পুত্র মো. নুরুল ইসলাম (৪৫)কে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা শিখা দে’কে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করে বলে জানান বাঁশখালী থানার ওসি (তদন্ত) কামাল উদ্দিন।
গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বাদশা এ প্রসঙ্গে বলেন, কিছুদিন আগে গণ্ডামারার বড়ঘোনা গ্রামে অন্তঃসত্ত্বা এক তরুণীকে জিনে মেরেছে বলে শুনেছি। এরপর ৫ম শ্রেণির ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর জিনের আছর বলে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এরপর গৃহবধূকে জিন পুকুরে ডুবিয়ে মেরেছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। এতে সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। যা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, বাঁশখালীতে বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে গ্রামে গ্রামে গিয়ে অসংখ্যবার সভা-সমাবেশ করেছি। এসব অপকর্ম রোধে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সচেতন ও উদ্যোগী হতে হবে। নচেৎ এসব বন্ধ করা সম্ভব নয়। অসহায় এসব পরিবারকে সার্বিক আইনি সহযোগিতা করা হবে।