বিনোদন

হতাশায় নবীন নাট্যনির্মাতারা

এন আই বুলবুল

১৬ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ৮:১৭ পূর্বাহ্ন

হতাশায় ভুগছেন নবীন নাট্যনির্মাতারা। এক বুক স্বপ্ন নিয়ে এসে তারা অন্ধকার দেখেন দু’চোখে। কেউ কেউ দু’একটি নাটক নির্মাণের পর এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। আবার অনেকেই পড়ে আছেন, একদিন সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছবেন এ আশায়। কিন্তু কেন নবীন নির্মাতাদের এ হতাশা? শুধু দুই একটি নয়, অনেক কারণেই নবীন নির্মাতাদের মধ্যে হতাশা দেখা যায়। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কখনো বাজেট সংকটে থাকেন তারা, কখনো শিল্পীদের শিডিউল নিয়ে সমস্যায় পড়েন। নবীন নির্মাতাদের একদিকে প্রযোজকেরা কম বাজেট দেন। তার ওপর শর্ত থাকে জনপ্রিয় শিল্পীদের দিয়ে নাটক নির্মাণ করতে হবে। এদিকে জনপ্রিয় শিল্পীদের অনেকেই নবীন নির্মাতাদের সহজে শিডিউল দিতে চান না বলে শোনা যায়। শিডিউল নিয়ে টালবাহানা করেন তারা। আবার নাটক নির্মাণের পর টিভি চ্যানেলগুলোর দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে অনেক নবীন নির্মাতাই ক্লান্ত। টিভিতে নিজের সৃষ্টি দেখার জন্য এসব নির্মাতার কেউ কেউ লোকসান দিয়ে টিভি চ্যানেলের কাছে নাটক বিক্রি করেন। এদিকে নাটক প্রচারের পরে আবার চ্যানেলগুলো সঠিক সময়ে বিল দেয় না বলেও শোনা যায় নির্মাতাদের কাছ থেকে। ফলে বন্ধ হয়ে হয়ে যায় পরবর্তী নাটক নির্মাণের পথ। প্রশ্ন থেকে যায়, এভাবে চলতে থাকলে নাটকের ভবিষ্যৎ কী? নতুনরা কি আগ্রহী হবে এই পেশায় আসতে? এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অভিনেতা ও নির্মাতা আবুল হায়াত বলেন, প্রথমেই বলতে হবে আমাদের নাটকের সামগ্রিক অবস্থা ভালো না। একদিকে বাজেট সংকট যেমন আছে তেমনি শিল্পীদেরও আন্তরিকতার দারুণ অভাব। আমি যখন এই সময়ের কোনো একজন শিল্পীকে ফোন করি তাদের অনেকেই রিসিভ করে না। মেসেজ দেওয়ার পরেও তাদের কাছ থেকে সাড়া পাই না। এ থেকে সহজে বোঝা যায় একজন নতুন নির্মাতা কতটা সমস্যায় ভুগছেন। এই সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়েছে এজেন্সি ও বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোর কারণে। তারা কতিপয় শিল্পীকে মাথায় তুলে ফেলেছেন। যার কারণে তাদের কারো কারো কাছে ন্যূনতম সৌজন্যবোধও দেখা যায় না। এছাড়া টিভি চ্যানেলগুলোও নতুনদের সঠিক বাজেট দেয় না। অনেক সময় দেখা যায় নতুন নির্মাতাদের কেউ কেউ নিজের পকেটের টাকা খরচ করেও নাটক নির্মাণ করছে। আমাদের টিভি নাটকের যে সংগঠনগুলো আছে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের এগিয়ে আসতে হবে। জোর ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলে হয়তো নতুনরা কাজ করার জন্য সাহস পাবে। ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, এই সময়ে নাটকের বাজেটের দারুণ সংকট। যার ফলে নতুনদের অনেকেই নাটক নির্মাণের জন্য সাহস পায় না। এছাড়া টিভি চ্যানেলগুলো নির্দিষ্ট কয়েকজন শিল্পীর বাইরে নাটক নিতে চায় না। এটিও নবীন নির্মাতাদের জন্য বড় সমস্যা। আমাদের ডিরেক্টরস গিল্ড, অভিনয় শিল্পী সংঘ এবং অন্য সংগঠনগুলো মিলে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমিও চাই এ সমস্যাগুলো যেন আমাদের মধ্যে আর না থাকে। নির্মাতা সাজিন আহমেদ বাবু বলেন, চ্যানেল বা এজেন্সিতে গেলেই পাঁচটা মুখ ধরিয়ে দেয়। যাদের একজনেরও শিডিউল খালি থাকে না। কোনো গল্প দেখার প্রয়োজন মনে করে না। চায় শুধু সেই পাঁচটা মুখ। অন্য নামগুলো বললেই বলে ভিউ নাই ওদের। এভাবে চলতে থাকলে শুধু নবীন নির্মাতা কেন যারা সব সময় নাটক নির্মাণ করেন তারাও একদিন এ পেশা থেকে সরে আসবেন। আদর সোহাগ নামের একজন নবীন নির্মাতা বলেন, ভালোবাসা থেকে এই পেশায় এসেছি। কিন্তু এখানে এসে আমি সত্যি হতাশ। ভালো বাজেট পাই না। আবার বাজেট পেলে শিল্পীদের শিডিউল পাই না। নাটক নির্মাণের পর লোকসান দিয়ে সেই নাটক চ্যানেলে বিক্রি করি। ভাবি হয়তো এই নাটকটি প্রচারের পর আমি ভালো বাজেট পাবো এজেন্সি-টিভি চ্যানেল থেকে। বেশ কয়েকটি নাটক আমি পরিবার থেকে টাকা নিয়ে নির্মাণ করেছি। নতুনদের সুযোগ না দিলে তারা কাজ করার স্বপ্ন হারিয়ে ফেলবে। নাটক সংশ্লিষ্টরা বলেন, নাটকের বাজেট সংকট, জনপ্রিয় শিল্পীদের শিডিউল সমস্যা, চ্যানেলগুলোর অনিয়ম ও এজেন্সি এবং বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোর শিল্পী নির্বাচন দীর্ঘদিন থেকে দেখা যাচ্ছে। এভাবে কোনো একটি ইন্ড্রাস্ট্রি চলতে পারে না। নাটকের সংগঠন ও টিভি চ্যানেলগুলোকে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।


   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status