ইংল্যান্ড থেকে

ইংল্যান্ডে বিষণ্ন ‘বাংলাদেশ

ইশতিয়াক পারভেজ, লন্ডন থেকে

৭ জুলাই ২০১৯, রবিবার, ৮:৩৩ পূর্বাহ্ন

ছোট্ট শিশুকে নিয়ে এক দম্পতি দাঁড়িয়ে সেইন্ট জনসন স্টেশনে। শিশুটির গালে লাল-সবুজের পতাকার স্টিকার লাগানো। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন ট্রেনের অপেক্ষায়। বুঝতে বাকি রইলো না তারা লর্ডসে এসেছিলেন বাংলাদেশের খেলা দেখতে। সামনে যেতেই হাসলেন, বাঙালি জেনেই প্রথম প্রশ্ন-‘বলেনতো কি খেললো বাংলাদেশ! মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। যা খেলেছে খারাপ বলবো না। কিছু কিছু ভুলেই আমাদের এই অবস্থা। যদি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিততাম, বৃষ্টিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ পণ্ড না হতো, ফিল্ডিংটা ভালো হতো, তামিম যদি খেলতে পারতো। তাহলে আমরা সেমিফাইনালে থাকতাম। জানেন সকালে ছেলে নিয়ে দ্রুতই মাঠে গিয়েছিলাম যেন বিদেশের মাটিতে আমার জাতীয় সংগীত বাজছে তা শুনতে পারি। বলে বুঝাতে পারবোনা এটা কত আনন্দের।’ এই সব কথা বলেই মাথা নিচু করে নাড়লেন বিষন্ন হাসান কোরেশি। হ্যাঁ, ইংল্যান্ড জুড়েই চলছে এমন আলোচনা। বিশেষ করে বাঙালি পাড়া হিসেবে পরিচিত খাবারের দোকানে, রাস্তার কোণে কোণে শুধু টাইগার ক্রিকেটের প্রসঙ্গ। ইংল্যান্ডে এখন ‘বিষণ্ন বাংলাদেশ’। হবেনা কেন?  এক বছর ধরে চলছে প্রস্তুতি। লাল-সবুজের পতাকা তৈরি করতে কিংবা কিনতে খরচ করেছেন পাউন্ডের পর পাউন্ড। সেই সঙ্গে চলেছে টিকিট কেনার যুদ্ধ। গোটা ইংল্যান্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছিলেন অধীর অপেক্ষায়। যা আনন্দ ছড়িয়ে শুরু হলেও শেষ হয়েছে একরাশ কষ্ট ছড়িয়ে।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে উড়েছিল স্বপ্নের বেলুন। কিন্তু ধীরে ধীরে তা চুপসে গিয়ে হারিয়েছে রং। শেষটা যেন কেউ মেনেই নিতে পারছে না।  যে বাংলাদেশ দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৩০ রান করে জিতেছে বাংলাদেশ। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় এসেছে ৩২১ রান তাড়া করে। সেই বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের ৩১৬ রান তাড়া করতে গিয়ে গুটিয়ে গেছে ২২১ রানে। ব্যাট-বলে বিন্দু মাত্র লড়াই জমিয়ে তুলতে পারেনি শেষ বেলাতে। তা মেনে নেয়াই যেন কঠিন। শেষ চারে খেলার স্বপ্নতো শেষ হয়েছেই। শেষ হার বাংলাদেশকে ঠেলে দিয়েছে ৭ম স্থানে।  কেন এমন হলো! কি জবাব দেবেন অধিনায়ক মাশরাফি! যিনি নিজেই পুড়ছেন অনুশোচনায়। তাই বোলিংয়ে ব্যর্থতার  দায় নিজের কাঁধেই নিলেন তিনি। বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) জিতলে পাঁচে থাকতে পারতাম। ভারতের সঙ্গে জিতলে এক ধরনের  মোমেন্টাম নিয়ে আসা যেত। চারের ভেতর যদি যেতে না পারেন যদি-কিন্তু প্রশ্ন আসত। এখান থেকেও অনেক পজিটিভিটি নেয়ার আছে। সবাই আপসেট। অনেক ভুল ছিল। বোলিংয়ে শুরুটা ভালো হয়নি, বেশির ভাগ ম্যাচে ১৫-২০ ওভারে আমরা তেমন কিছু করতে পারিনি। এটার দায়ভার আমারই নেয়া উচিত, যেহেতু ক্রিকেটারদের দায়িত্ব আমার। আরেকটা বড় সমস্যা ফিল্ডিং।’ বোলিং-ফিল্ডিং খারাপ হয়েছে তা মানতেই হবে। কিন্তু ব্যাটিং! এক সাকিব ছাড়া বাকিরা ছিলেন নিস্প্রভ। মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ কিছুটা অবদান রাখলেও তারা ছিলেন না ধারাবাহিক। তরুণদের মধ্যে সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, মোসাদ্দেক হোসেনরাও নিজেদের প্রতিভার মান রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। এক মাত্র সাকিব আল হাসান ছাড়া এই বাকিদের ব্যাটে ছিল না ধার, ছিলনা ধারাবাহিকতাও। বলতে গেলে সাকিবের কারণেই দল এতটা পথ পাড়ি দিতে পেরেছে। ৮ ম্যাচে ৮৬.৫৭ গড়ে ২ সেঞ্চুরি ৫ ফিফটিতে ৬০৬ রান, ১১ উইকেট। এমন পারফরম্যান্সের জন্য কিছু গর্ব করে কথা বলতে পারছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্তরা। কিংবা বলা যায় তার মাঝেই সান্ত্বনা খুঁজছেন তারা। ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ সাকিবকে নিয়ে  অধিনায়কেরও আরো বেশি মন খারাপ। তিনি বলেন, ‘সাকিবের জন্য বেশি খারাপ লাগছে। এটাই বড় আক্ষেপ। ও যে টুর্নামেন্ট খেলেছে আরও ভালো অবস্থান বা সেমিফাইনালে যাওয়া আমাদের দরকার ছিল।
একজন খেলোয়াড় যখন এমন দুর্দান্ত খেলে তখন তার দলের সেমিফাইনালে খেলার কথা। যখন আমাদের রান করার দরকার, যখন ক্যাচগুলো ধরার দরকার, মিস হয়েছে। যখন ভালো বোলিং দরকার করতে পারিনি। এ জিনিসগুলো অবশ্যই আক্ষেপের। পরের বিশ্বকাপ যখন খেলবে বাংলাদেশ, যেখানে খেলবে আরও নতুন কিছু খেলোয়াড় যদি আসে দল আরও এগোবে।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status