দেশ বিদেশ
বাজেট নিয়ে সংসদে পাল্টাপাল্টি
সংসদ রিপোর্টার
১৯ জুন ২০১৯, বুধবার, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ন
প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য রেখেছেন সরকারি ও বিএনপি দলীয় এমপিরা। বাজেটকে বাস্তব সম্মত জনকল্যাণমুখী উল্লেখ করে সরকারি দলের এমপিরা বলেছেন, বিদ্যুৎ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, দেশের অর্থনীতি ও বাজেটের আকার। তবে যাদের মানসিক সমস্যা রয়েছে তাদের কাছে এই বাজেট ভাল লাগার কথা নয়। কারণ তারা সরকারের কোনো উন্নয়নই চোখে দেখেন না। অন্যদিকে বিএনপি দলীয় এমপিরা বলেছেন, বিশাল বাজেট দেয়া হলেও এতো ঘাটতি দিয়ে তা বাস্তবায়ন খুব কঠিন হবে। পুরো জনগণের ওপর করের বোঝা না চাপিয়ে নতুন করদাতা খুঁজে বের করতে হবে। প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পিকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে গতকাল সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার প্রথম দিনে অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের অধ্যাপক আলী আশরাফ, আবদুল মান্নান, পংকজ দেবনাথ, এ্যাডভোকেট মো. সাইফুজ্জামান (শিখর), খালেদা খানম, বেগম কানিজ ফাতেমা আহমেদ, আরমা দত্ত, সৈয়দা রুবিনা আক্তার, শেখ এ্যানী রহমান, অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত, ওয়ার্কার্স পার্টির বেগম লুৎফুন নেসা খান ও বিএনপির মোশারফ হোসেন ভূইয়া। অধ্যাপক আলী আশরাফ প্রস্তাবিত বাজেটকে ’উচ্চাভিলাসী নয়, বাস্তবসম্মত বাজেট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, বাজেট শুধু আয়, ব্যয়ের হিসাব নয়, একটি দেশের আর্থ-সামাজিক ও জনগণের সার্বিক কল্যাণের জন্য প্রণয়ন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি অত্যন্ত শক্তিশালী। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসংখ্যা ১৭ কোটি পেরিয়ে গেছে, জমি অর্ধেক কমে গেছে- সে দেশ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ। এটা কি কল্পনা করা যায়? গত ১০ বছর দেশের চিত্রই পাল্টে গেছে। তবে এ বিশাল বাজেট বাস্তবায়নে কর প্রশাসনের দক্ষতা বাড়াতে হবে। ঋণখেলাপীদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ে যত ধরণের জোরদার প্রক্রিয়া রয়েছে তা প্রয়োগ করতে হবে। খেলাপী টাকা বিদেশে পাচার হলে তার বিরুদ্ধেও শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। এদের কোনভাবেই রেহাই দেয়া যাবে না। সরকারি দলের সিনিয়র সদস্য আবদুল মান্নান বাজেটকে জনকল্যাণমুখী উল্লেখ করে বলেন, দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ নেতৃত্ব ও ঘোষণায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। জীবদ্দশায় জিয়াউর রহমান নিজেকে কখনো স্বাধীনতার ঘোষক বলেছেন, যারা এ দাবী করেন তারা কেউ প্রমাণ দিতে পারলে সংসদ থেকে পদত্যাগ করবো। তিনি বলেন, অনেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি চান। কিন্তু বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব দিয়ে দলটি চলবে না। নেতৃত্ব বদলান, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কাউকে নেতৃত্বে আনুন, তবে যদি রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারেন। তিনি বলেন, একাত্তরে স্বামী (জিয়াউর রহমান) যুদ্ধে রয়েছেন, আর তার স্ত্রী (খালেদা জিয়া) তখন কোথায় ছিলেন? ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানীদের সঙ্গে সন্তানদের নিয়ে বহাল তবিয়তে থাকলেন। যারা সম্ভ্রম হারিয়েছেন তাদের বীরাঙ্গনা বলা হয়, সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে কি বলা হবে তা আগে ঠিক করেন। সরকারের কাছ থেকে ভাতা নিয়েও খালেদা জিয়া দুই সন্তানকে সামান্য শিক্ষিত করতে পারেননি। তাই নির্বাচনে জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যাত করেছে। বিএনপির মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, বিশাল বাজেট দেয়া হলেও এতো ঘাটতি দিয়ে তা বাস্তবায়ন খুব কঠিন হবে। পুরো জনগণের ওপর করের বোঝা না চাপিয়ে নতুন করদাতা খুঁজে বের করতে হবে। সংসদে মাত্র আমরা ৬ জন, কিন্তু কথা বলতে গেলেই বাঁধা দেয়া হয়। জিয়াউর রহমান ও তারেক রহমান এদেশের জন্য অনেক কাজ করে গেছেন। জিয়াকে খুনি ও তারেককে দুর্নীতিবাজ বললে আমাদেরও পাল্টা জবাব দেয়ার সুযোগ দিতে হবে। তিনি বগুড়ায় একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, বিমানবন্দর এবং সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের দাবি জানান। ওয়ার্কার্স পার্টির বেগম লুৎফুন নেসা খান বলেন, মানসম্মত শিক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ অনেক পেছনে। দেশে বেকারের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তরুণ সমাজ মাদকের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তিনি জাতীয় সংসদের ৩৩ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত করে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দাবী জানান। সরকারি দলের পংকজ দেবনাথ বলেন, গত ১০ বছরে সবক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। নিভৃত গ্রামেও এখন জ্বলছে বিজলি বাতি। দেশের বিশাল অগ্রগতি, উন্নয়ন ও সাফল্যের পক্ষেই দেশের তরুণ ও নতুন প্রজন্ম। আওয়ামী লীগকে দুই হাত ভরে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে। দুর্নীতির বরপুত্র তারেক রহমানদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচনকে বিতর্কিত করার অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু আসল বাস্তবতা হচ্ছে ব্যাপক পরাজয় নিশ্চিত জেনেই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনী যুদ্ধে অংশ না নিয়ে ষড়যন্ত্র ও নির্বাচন বাণিজ্য করেছে। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারি একান্ত সচিব এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেয়াই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ধ্যান-জ্ঞান। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী গত ১০ বছর ধরে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাই বিদ্যুৎ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, দেশের অর্থনীতি ও বাজেটের আকার। তবে যাদের মানসিক সমস্যা রয়েছে তাদের কাছে এই বাজেট ভাল লাগার কথা নয়। কারণ তারা সরকারের কোন উন্নয়নই চোখে দেখেন না। ডা. হাবিবে মিল্লাত এমপিওভূক্তির আগে এমপিদের পরামর্শ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিএনপির ৫/৬ জন সংসদ সদস্য সংসদে এসে লাগাতার মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। মাত্র কয়েকদিনেই তাদের অসংসদীয় ভাষা যেভাবে এক্সপাঞ্জ করা হয়েছে, অতীতে কখনো হয়নি। এতিমের টাকা আত্মসাতকারী চোরের কোন মুক্তি হতে পারে না। বিএনপি-জামায়াতের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার মানুষের দীর্ঘ নিঃশ্বাসে বিএনপি এখন মুসলীম লীগ হওয়ার পথে।