শেষের পাতা

চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি

ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াহেদ ম্যানশনে রাতের আঁধারে চলছে নির্মাণ কাজ

মরিয়ম চম্পা

১৬ জুন ২০১৯, রবিবার, ১০:০০ পূর্বাহ্ন

অগ্নিকাণ্ডের প্রায় চার মাস পরও চকবাজারের চুড়িহাট্টার ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াহেদ ম্যানশন ভাঙা হয়নি। বরং গোপনে এটি সংস্কারের চেষ্টা করছে মালিক পক্ষ। ওয়াহেদ ম্যানশনে লাগানো  ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ লেখা সাইনবোর্ডটিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ঘটনার পর ওয়াহেদ ম্যানশনে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ লেখা সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এর কয়েক দিন পর এই ভবন ভেঙে ফেলার সুপারিশ করে ডিএসসিসিসহ সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স। কিন্তু কবে ভবনটি ভাঙবে সেই সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। ঝুকিপূর্ণ ভবনেই শুরু হয়েছে নতুন নির্মাণ কাজ। রমজানের দ্বিতীয় সপ্তাহে হঠাৎ করেই ভবনটির পূণ:নির্মানের কাজ শুরু করে মালিক পক্ষ। পরর্তীতে এলাকাবাসী এবং গণমাধ্যমের বাধার মুখে ঈদের এক সপ্তাহ আগে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আসিক উদ্দিন সৈনিক বলেন, রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তারা ভবনের কাজ শুরু করে। ভবন মালিককে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে একটি অনুমতিপত্র দেয়া হয়েছিল ভবনটি ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করতে। যাতে করে বুয়েটের ইঞ্জিনিয়াররা এসে পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে পারে। যে ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে না কি মেরামত করলেই হবে। অথচ তারা এলাকাবাসীকে সেই কাগজটি দেখিয়ে বলছে সিটি কর্পোরেশন তাদেরকে ভবনে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে।

এসময় তারা সিটি কর্পোরেশনের লোকদের ডেকে রাতের বেলায় ভবনের দগ্ধ পদার্থগুলো পরিষ্কার করে কাজ শুরু করে। বেশিরভাগ সময়েই তারা রাতে কাজ করে। দিনের বেলায় ভবনের নিচের অংশে ভেতরের কাজ করে।  ভবনের কাজ বলতে পুড়ে যাওয়া ইটের ওপর বালি আর সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টার করে রং মেখে নতুন করছে। যার ভেতরে কোনো ইট নেই বললেই চলে। সামনের অংশের কাজ শুরু করলে ২৭ রমজান গণমাধ্যমকর্মী ও এলাকার মানুষদের বাধার মুখে তারা কাজ বন্ধ করে। এসময় একজন সংবাদকর্মীর সাথে ভবনের মালিক হাসানের শ্যালক রুবেলের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। ভবন মালিক জেলে থাকায় রুবেলই বর্তমানে ভবনটির তত্ত্বাবধান করছেন।
তিনি বলেন, শুনেছি চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে ভবনটির ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রিম ৫০ হাজার করে টাকা নিয়ে ভবনের নির্মান কাজ শুরু করে। ভবনের মেরামত করে পুণরায় তাদেরকে ব্যবসায়ে বসানো হবে। তারা যদি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আবারো ব্যবসা করতে চায় সেক্ষেত্রে আমাদের এলাকারবাসীর কিছুই করার বা বলার থাকবে না।

স্থানীয় আরেক ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর বলেন, নিহত পরিবারগুলোকে প্রাথমিকভাবে মাত্র ২০ হাজার করে টাকা দেয়ার পরে আর কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। অথচ সেই একই মৃত্যুকুপের সংস্কার করে নতুন করে আবার প্রাণহানীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভবনটির নিচে দুটি ফলের দোকান বসেছে। আমাদের এলাকাবাসীর দাবি ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনটিকে নিষিদ্ধ করা হোক। কারণ ভূমিকম্পসহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভবনটি ধ্বসে পরতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, ভবনটির বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন, রাজউক এবং বুয়েটের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিকে ভবনটি বসবাসযোগ্য কি না সে বিষয়ে মতামত দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। কমিটির একটি সুপারিশ বা রিপোর্টে বলা হয়, ভবনটিতে বসবাস করতে হলে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এরমধ্যে ভবনের পিলারগুলো পুণনির্মানের বিষয়ে বিশেষভাবে জোর দিতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বুয়েটের পক্ষ থেকে পরীক্ষার পরে অনুমতি পেলে তারা ভবনের নির্মাণ কাজ করতে পারবে। তারা যে ইতোমধ্যে ভবনের নির্মান কাজ শুরু করেছে সে বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status