ভারত
ভারতের কাঁধে নিঃশ্বাস ফেলছে চীন-পাকিস্তান
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনায় সংস্কারই রাজনাথের সামনে চ্যালেঞ্জ
কলকাতা প্রতিনিধি
২ জুন ২০১৯, রবিবার, ৯:৫৬ পূর্বাহ্ন
ভারতের পূর্ব-পশ্চিম দিকে চীন ও পাকিস্তান ঘাড়ের উপর প্রতি মুহূর্তে নিঃশ্বাস ফেলছে। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ লাগতে লাগতে লাগে না। দোকলাম নিয়ে চীনের সঙ্গে তীব্র উত্তেজনা ভারতের। এ ছাড়া আছে নানারকম কূটনৈতিক সংঘাত। বিশেষ করে, এ বছরেই পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ভারতের আধাসামরিক বাহিনীর কমপক্ষে ৪০ জন সদস্য নিহত হওয়ার পর ভারত-পাকিস্তান আকাশপথে ‘ডগফাইট’ হয়েছে। তখন সারা ভারতবর্ষ, এমনকি বিশ্ব পর্যায়েও উত্তেজনা দেখা দেয় দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ নিয়ে। সেই যুদ্ধ এড়ানো গেছে। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক লড়াইটা থামেনি। প্রধানমন্ত্রী মোদির শপথের অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী অনেক দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও পাকিস্তান বাদ পড়েছে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন রাজনাথ সিং। তিনি দায়িত্ব নিয়েই রোববার নিজের অফিসে রাজনাথ সিং বৈঠক করেছেন সামরিক বাহিনীর তিন শাখা প্রধানের সঙ্গে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী শ্রীপাদ নায়েক, প্রতিরক্ষা সচিব সঞ্জয় মিত্র। নতুন প্রতিরক্ষার সামনে এখন বড় কাজ হলো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনার কাজ সম্পূর্ণ করা। অনেকদিন ধরেই সেনাবাহিনীর তিন শাখার সমন্বয়ে একজন প্রধান নিয়োগের কাজটি পড়ে রয়েছে। তেমনি পড়ে রয়েছে নুনংহক থিয়েটার কমান্ড তৈরির কাজটিও। এই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ছাড়াও সেনাবাহিনীর তিন শাখার অস্ত্রভাণ্ডারের চাহিদা মেটানোর বিষয়টি নতুন প্রতিরক্ষার কাছে বড় কাজ। চীন ও পাকিস্তানের হুমকির কথা মাথায় রেখে দেশের ১৫ লাখ সেনা সদস্যের জন্য দশদিনের যুদ্ধ সরঞ্জামের ব্যবস্থা করার বিষয়টিও রাজনাথের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। সেনাবাহিনীর যুদ্ধ ক্ষমতার ক্ষেত্রে যে ফাঁক রয়েছে তা মেটাতে সামরিক বাহিনী আধুনিকীকরণের বিষয়টিও রাজনাথের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। আসলে গত ৫ বছরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বার বার বদল হওয়ার ফলে কোনও সিদ্ধান্তই কার্যকর করা যায়নি। প্রথমে অরুণ জেটলি দু’দফায় এই মন্ত্রণালয় সামলেছেন। এরপর এসেছেন মনোহর পররীকর এবং শেষে নির্মলা সীতারমন। এই প্রথম একজন ওজনদার রাজনীতিবিদকে অনেক ভেবেচিন্তে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের ধারণা। জানা গেছে, প্রয়োজনীয় অস্র ও সরঞ্জামের জন্য গত ৫ বছরে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও নানা কারণে তার সবটা কার্যকর হয়নি। ফলে সেনাবাহিনীর অস্ত্র-সরঞ্জামের ক্ষেত্রে বিশেষ ঘাটতি রয়ে গিয়েছে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারতীয় সেনাদের জন্য আরও সাবমেরিন, ফাইটার বিমান, হেলিকপ্টার ও মাইন সুইপার যানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেই ফাঁক মেটাতে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রতিরক্ষা উৎপাদন ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগে বিদেশি বিনিয়োগ টানার যে সিদ্ধান্ত গত সরকারের আমলে নেয়া হয়েছিল, তা বাস্তবে সফল হয়নি। সেই বিষয়েও রাজনাথ সিংকে মনোযোগ দিতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) ও এর ৫০টি ল্যাবরেটরির কাজে মোটেই সন্তুষ্ট নয় প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। এছাড়া প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের চারটি সরকারি সংস্থা এবং ৪১টি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিকেও আরও আধুনিক ও কার্যকর করে তুলতে খোলনলচে বদলের দিকেও নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে নজর দিতে হবে দেশের সুরক্ষার দিকে তাকিয়ে। তাই রাজনাথ সিংয়ের সামনে এখন বিশাল কাজের দায়িত্ব। ভারতের পূর্ব-পশ্চিম দিকে চীন ও পাকিস্তান ঘাড়ের উপর প্রতিমুহূর্তে নিঃশ্বাস ফেলছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনার অবকাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আধুনিকীকরণে দায়িত্ব নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়িত করতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।