এক্সক্লুসিভ

ভালো নেই বৃক্ষমানব

মরিয়ম চম্পা

৩১ মে ২০১৯, শুক্রবার, ৯:০৩ পূর্বাহ্ন

ভালো নেই বিরল রোগে আক্রান্ত আবুল বাজানদার। তার হাত-পা জ্বালা-পোড়া করছে। হাত ও পায়ের আঙুলগুলো আবারো গাছের শেকড়ের মতো হয়ে উঠছে। দিনে দিনে তা বাড়ছে। ২৫ বার অপারেশন হয়েছিল আবুল বাজানদারের। সম্প্রতি চিকিৎসা নিতে পুনরায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন তিনি। শরীরের শেকড় বেড়ে এতটাই বড় হয়েছে যে, বোঝার উপায় নেই সেগুলো অপারেশন করে কেটে ফেলে দেয়া হয়েছিল। একই  সঙ্গে বেড়েছে শরীরের যন্ত্রণাও। বৃক্ষমানব আবুল বাজানদার বলেন, আমার শরীরের অবস্থা ভালো না। চলতি মাসের ১৯ তারিখ ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে এসেছি। এখনো ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা আমার শরীরে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেয়নি। তারা বলেছেন, শিগগিরই অপারেশন করা হবে। এর আগে একবার এসে হাসপাতালে কেবিন খালি না পেয়ে চলে গিয়েছিলাম।

সম্প্রতি কেবিন খালি হওয়ায় ডাক্তার স্যার জানানোর পরে আবার হাসপাতালে এসেছি। হাত-পায়ের বিভিন্ন স্থানের শেকড়গুলো বেড়ে প্রায় আগের মতো হয়ে গেছে। শরীরের ব্যথা যন্ত্রণা খুব বেড়েছে। এজন্য হাসপাতালে এসেছি দ্রুত চিকিৎসা সেবা পেতে। শরীরের যন্ত্রণা আর সহ্য করা যাচ্ছে না। চিকিৎসকরা আগেই বলেছে এটা জেনেটিক সমস্যা। তাই নিয়মিত চিকিৎসা ও ডাক্তারদের ফলোআপে থাকতে হবে। সেই ভরসাতেই আবার হাসপাতালে এসেছি। এখানকার স্যারদের আন্তরিক সহায়তা এবং চিকিৎসা সেবা পেয়ে আমি বরাবরই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন, ডা. সামন্ত লাল সেন স্যারসহ হাসপাতালের সকলের আন্তরিক সেবা না পেলে হয়তো আমি সুস্থ হতাম না। তবে আগে হাসপাতালে আসলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু হতো। কিন্তু এবার কেনো বিলম্ব হচ্ছে জানি না। শরীরের যন্ত্রণা এতটাই বেড়েছে যে, রাতে ঘুমাতে পারি না। আমার একটাই চাওয়া আগের মতো যেন চিকিৎসা সেবা পাই।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ওকে (বাজানদার) তো অনেক আগে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু আসেনি। এখন এসেছে। ওগুলো (শেকড়) অনেক বড় হয়ে গেছে। আবার অপারেশন করতে হবে। ঈদের পরে হয়তো তার শরীরে অস্ত্রোপচার শুরু হবে। ঢামেকে ভর্তি হওয়ার পরপরই প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করেন। তাই আগের নিয়মেই অপারেশন এবং যাবতীয় চিকিৎসা খরচ সরকারি ভাবেই করা হবে।

গত ১০ বছর ধরে হাত-পায়ে শেকড়ের মতো গজিয়ে ওঠা বিরল এক জেনেটিক রোগে ভুগছিলেন বাজানদার। খুলনার পাইকগাছার বাসিন্দা আবুল বাজানদারকে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার চিকিৎসার জন্য পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। পরবর্তীতে দু’বছরে তার শরীরে মোট ২৫ দফা অস্ত্রোপচার চালানো হয়েছিল। তিনি প্রায় দু’বছর হাসপাতালে ছিলেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পৃথিবীতে বাংলাদেশসহ এখন পর্যন্ত হাতেগোনা কয়েকজনকে এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। তাদের ইন্দোনেশিয়া, রোমানিয়া এবং সর্বশেষ বাংলাদেশে দেখা গেল। এই রোগী বাংলাদেশে প্রথম।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status