দেশ বিদেশ

সিলেটে যে কারণে ওসি আক্তারের ওপর ক্ষুব্ধ খাদিমপাড়াবাসী

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২১ মে ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:৫০ পূর্বাহ্ন

সিলেটে একের পর এক মামলায় বিপর্যস্ত শাহ্‌পরাণবাসী। আর মামলার বেশির ভাগই হচ্ছে জমি সংক্রান্ত বিরোধ। এসব বিরোধকে ফৌজদারি আইনে মামলা দায়ের নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে মানুষের মধ্যে। জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সালিশ ব্যক্তিত্ব আজমল আলী নেপু মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় সিলেটে ক্ষোভের মুখে পড়েছেন শাহ্‌পরাণ থানার ওসি আক্তার হোসেন। তার অপসারণ দাবিতে দেয়া হয়েছে আল্টিমেটাম। থানায় এজাহার নিয়ে যাওয়া ভুক্তভোগীদেরও আসামি করে হাজতে আটকে রাখা হচ্ছে। পরপর কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষিতে গতকাল সিলেটে রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন শেষে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছেন পুলিশ প্রশাসনকে। ওসি আক্তারকে দ্রুত সিলেট থেকে বদলি না করলে তারা লাগাতার আন্দোলনে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন। ঘটনা গত শনিবারের। ওইদিন নেপু মিয়া জমির একটি এজাহার নিয়ে গিয়েছিলেন শাহ্‌পরাণ থানায়। রাত ৯টার দিকে তিনি থানায় যান। এ সময় ওসি আক্তার হোসেন থানায় ছিলেন না। তিনি ওসির জন্য অপেক্ষা করেন। রাত ১০টার দিকে ওসি থানায় আসেন। তিনি থানায় আসলে নেপু মিয়া ওসির কাছে একটি এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু ওসি নেপু মিয়ার এজাহারকে গুরুত্ব না দিয়ে তাকে থানায় বসিয়ে রাখেন।

মধ্যরাতের দিকে নেপু মিয়ার কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেন ওসি। পরে তাকে ওই দিন দায়ের করা আরো একটি মামলায় আসামি দেখিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। রাখা হয় থানা হাজতে। সালিশি ব্যক্তিত্ব নেপু মিয়ার সঙ্গে পুলিশের এ আচরণ মেনে নেয়নি স্থানীয় এলাকাবাসী। ক্ষুব্ধ হন খাদিমপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে ওসি তাতে সাড়া দেননি। খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বিলাল অভিযোগ করেন বিচার প্রার্থী হয়ে থানায় গিয়েছিলেন নেপু মিয়া। তার এজাহার গ্রহণ না করে অন্য একজনের এজাহার তাৎক্ষণিক রেকর্ড করে ওসি নেপু মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছেন। এ ঘটনায় গোটা এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি সিলেট আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের অবগত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে নেপু মিয়ার বাড়ি সিলেট শহরতলীর মুরাদপুর গ্রামে। ওই গ্রামের নেপু মিয়ার ভাতিজি রাছনা বেগমের মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। রাছনা বেগম মামলার এজাহারে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গাছ কাটার অভিযোগ করেন। এবং এজাহারের শেষদিকে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এ কারণে শাহ্‌পরাণ থানা পুলিশ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলাটি গ্রহণ করেছে। এ মামলায় মুরাদপুর গ্রামে রাছনা বেগমের স্বজন ইলিয়াস মিয়া, রুবেল মিয়া, হুসেন মিয়া, তুরুত মিয়াকেও আসামি করা হয়েছে।

এলাকার লোকজন জানান, রাছনা বেগমের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদী ছিলেন নেপু মিয়া। তার বাসায় অপরিচিত লোকজনের যাওয়া-আসার কারণে পারিবারিক ভাবে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ দ্বন্দ্বের জের ধরে নেপু মিয়া সহ অন্যরা রাছনা বেগমের বাড়ির সামনে দিয়ে যাতায়াতের রাস্তা পরিবর্তন করতে নতুন করে রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এ নিয়ে রাছনা বেগম বাধা প্রদান করেন। আর এই বাধা প্রদানকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধ নিয়ে নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ব্যাপারে শাহ্‌পরাণ থানার ওসি আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, ‘নিয়মিত মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে দিয়েছি। এখন আদালতের বিষয়। আসামি আওয়ামী লীগের হলে গ্রেপ্তার করা যাবে না- এমন আইন তো নেই। সুতরাং আমি আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। আমি এর বেশি কিছু মন্তব্য করতে চাই না।’

ওসি আক্তারের অপসারণ দাবিতে আল্টিমেটাম : সিলেটের শাহ্‌পরাণ থানার আলোচিত ওসি আক্তার হোসেনের প্রত্যাহার দাবিতে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছে খাদিমপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও এলাকাবাসী। গতকাল সোমবার শাহ্‌পরাণ গেইটে রাস্তা অবরোধ শেষে সমাবেশে এ আল্টিমেটাম দেয়া হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, ওসি আক্তার হোসেন অর্থের লোভে শাহ্‌পরাণ থানায় একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়ে শাহ্‌পরাণ থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে নাগরিকদের হয়রানি করছে। এতে করে গোটা শাহ্‌পরাণ এলাকায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। এবার ওসি আক্তারের রোষানলে পড়ে হাজতবাস খাটছেন খাদিমপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজমল আলী নেপু। বিরোধপূর্ণ একটি ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে তাকে বসিয়ে রেখে গভীর রাতে মামলা দায়ের করে ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে। আর ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে খাদিমপাড়া এলাকায়। সড়ক অবরোধ শেষে সমাবেশে এলাকার লোকজন দাবি করেন- খাদিমপাড়া ইউনিয়নের সালিশ ব্যক্তিত্ব আজমল আলী নেপু মিয়া।

সাম্প্রতিক সময়ে নেপুরের ভাতিজির পক্ষ নিয়ে ওসি আক্তার হোসেন মামলা দায়ের করলে তাকে কারান্তরীণ করেছেন। তারা বলেন, পুরো ঘটনাটি ওসি আক্তারের সাজানো নাটক। সে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় বসবাস করার কারণে মিথ্যা মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করছে। ঘোষিত সময়ের মধ্যে ওসি আক্তারকে অপসারণ করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচির ডাক দেয়া হবে বলে জানান তারা। খাদিমপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল আজিজ রাজার সভাপতিত্বে ও সহ-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর আহমদের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, খাদিমপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নজরুল ইসলাম বিলাল, সহ-সভাপতি মোর্শেদ চৌধুরী মাসুম, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল হক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সিলেট জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি আবুল হোসেন, সিলেট মহানগর যুবলীগের সদস্য সাইফুর রহমান খোকন, সিলেট জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি আবুল হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালাম, ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজ উদ্দিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি গনি মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন কালা মিয়া, ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিক মিয়া, ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম নুর, আওয়ামী লীগ নেতা আমির উদ্দিন,  সিলেট সদর যুবলীগ নেতা আবুল হাসনাত, জয়নাল আবেদীন, রাসেল আহমদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা তজম্মুল আলী, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাসির আলী, পীযূষ কান্তি চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন আহমদ, সুমন আহমদ, মালাই মিয়া, শ্রমিক নেতা লিটন আহমদ প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status