বিনোদন
সুচিত্রা সেন এবং আমাদের নায়িকারা
মনিজা রহমান
২০১৯-০১-২৪
পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় যেখানে আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা, তার খুব কাছেই সুচিত্রা সেনের দাদা-শ্বশুরের বাড়ি। গেণ্ডারিয়াকে আবাসিক এলাকায় রূপ দেয়ার পেছনে মানিকগঞ্জের জমিদার দীননাথ সেন নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা রেখেছিলেন। তার নামে গেণ্ডারিয়ায় একটা রাস্তার নাম আছে। সেই রাস্তার পাশেই গেণ্ডারিয়া হাইস্কুল ছিল দীননাথ সেনের জমিদার বাড়ি। ওনার নাতি দিবাকর সেনের সঙ্গে বিয়ের পরে সুচিত্রা সেন কিছুদিন সেই জমিদার বাড়িতে ছিলেন। ছোটবেলায় অন্য এলাকা থেকে কেউ গেণ্ডারিয়ায় আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এলে সেই গল্প বলতাম। আমরা সুচিত্রা সেনের শ্বশুরবাড়ির এলাকার মানুষ, এটা কি কম গর্বের ব্যাপার! ১৭ই জানুয়ারি ছিল সুচিত্রা সেনের চলে যাওয়ার পঞ্চম বর্ষ। ভেতর-বাইরের নানা রকম শূন্যতার মধ্যে ক’দিন ধরে খুব মনে পড়ছে তাকে। সেই জন্ম থেকে এখন পর্যন্ত নায়িকা বলতে তো একজনকেই বুঝতাম, তার নাম সুচিত্রা সেন। দিনে দিনে সেটা আরো টের পেলাম। একালের কথিত নায়িকাদের কাঙালপনা সত্যিই বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করে। কোনো কিছুই তারা ছাড়তে চান না। সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়ে তাদের হুড়োহুড়ি নিশ্চয়ই সবার নজর কাড়ছে। তাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইদানীং হাস্যরস এবং বিতর্কের ঝড় বইছে। বিশেষ করে কয়েকজনের খোলস পরিবর্তনে অনেকে হাসাহাসি করছেন। কিন্তু এসব নিয়ে সেইসব অভিনেত্রী বা কথিত নায়িকাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তাদের বক্তব্য, অভিনয় দিয়ে তারা জনগণের কাছাকাছি গিয়েছেন। এবার সংসদ সদস্য হয়ে সেই জনগণের সেবা করতে চান। কি সেবা তারা দিতে চান? সংসদ তো আইন ও নীতি তৈরির জায়গা! এ কাজের জন্য কতটা প্রস্তুত একেকজন নায়িকা বা অভিনেত্রী? আমজনতা তাদের কাছ থেকে আইন প্রণয়নের সেই সেবা নিতে চান কিনা সেটা কি তারা একবারও ভেবে দেখেছেন? অবশ্য আমজনতার চাওয়া-না চাওয়ার ধার কে ধারে! সংরক্ষিত নারী আসনের যৌক্তিকতা নিয়ে বিতর্ক আছে অনেকদিনের। কারণ এই পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য হওয়া নারীর ক্ষমতায়ন-প্রক্রিয়ার আদৌ সহায়ক কিনা সেই প্রশ্ন বেশ জোরালোভাবেই আছে। তাছাড়া এভাবে নারীকে দ্বিতীয় স্তরের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় কিনা তা নিয়েও বিতর্ক আছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী যেখানে নারী, স্পিকার নারী, মন্ত্রীরা নারী, একাধিক সংসদ সদস্য নারী- সেখানে এই করুণার দান নেয়ার প্রয়োজন কি! বরং সব আমলেই সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যদের সংকীর্ণ দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ আছে। যারা নিজেদের শয়নে-স্বপনে-জাগরণে নারীবাদী ভাবেন, বলে বেড়ান, তাদের যখন দেখি সংরক্ষিত আসনে ফরম কেনার লম্বা লাইন দিয়ে আছে, তখন তাদের বিশ্বাসবোধ সম্পর্কে বিস্ময় জাগে। নাটক সিনেমার কথিত নায়িকাদের বিরাট একটি অংশ এখন যেন দুধের মাছি! সবাই হতে চান সংসদ সদস্য। এজন্য তদবির করতে চাঁদে যেতে হলেও যাবেন। এক রিপোর্টে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ৪৩ জন নারী সংসদ সদস্যের বিপরীতে প্রায় দেড় হাজার মনোনয়ন ফরম জমা পড়েছে। মনোনয়ন ফরম বিক্রি বাবদ আওয়ামী লীগের কোষাগারে জমা পড়েছে ৪ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
(বাকি অংশ আগামীকাল)
(বাকি অংশ আগামীকাল)