এক্সক্লুসিভ

সিলেটে যে ভিডিও ভাইরাল

সিল মারছিলেন প্রিজাইডিং অফিসার ধরলেন মুক্তাদির

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২০১৮-১২-৩১

 দু’তলার একটি তালাবদ্ধ কক্ষ। ভেতরে প্রিজাইডিং অফিসার আবদুল হক। সামনে একটি ব্যালট বাক্স। বসে বসে নৌকায় সিল মেরে বাক্সে ভরছিলেন প্রিজাইডিং অফিসার। এমন সময় কেন্দ্রে গিয়ে ঢুকলেন সিলেট-১ আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। কেন্দ্রের ভেতরের দৃশ্য সুশৃঙ্খল না। দৃশ্যপট দেখেই খুঁজতে লাগলেন প্রিজাইডিং অফিসার আবদুল হককে। কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। খন্দকার মুক্তাদিরকে একজন আনসার সদস্য দেখিয়ে দিলেন প্রিজাইডিং অফিসার উপরের কক্ষে আছেন। মুক্তাদির রুমের সামনে গিয়ে দেখেন দরোজা বন্ধ। ধাক্কা দিলেন দরোজায়। খুললো না। এভাবে তিনি কয়েক বার ধাক্কা দেয়ার সময় দরোজা খুললেন প্রিজাইডিং অফিসার। ভেতরে ঢুকে দেখা গেল ব্যালট ও বাক্স। হুলস্থূল পড়ে গেল। এমন সময় একজন  ভোটের বাক্স নিয়ে দৌড়ে দু’তলা থেকে নিচে নেমে এলো। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল দুপুরে সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহের শাহমীর ভোট কেন্দ্রে। কেন্দ্রের দৃশ্যটি এখন সিলেটে ভাইরাল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। নানা মন্তব্যের তীরে বিদ্ধ হচ্ছেন প্রিজাইডিং অফিসার আবদুল হক। এমন ঘটনায় সিলেটের ভোটের পরিবেশকেও জানান দিয়ে গেল। সকাল থেকে সিলেটের পরিবেশ ছিল প্রায় স্বাভাবিক। ৮টা বাজতেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। সকালে সিলেটের শেখঘাটের মইনুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়, কাজিরবাজার মাদরাসা কেন্দ্র, দুর্গাকুমার পাঠশালা, সিলেট অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র, এইডেড স্কুল ভোটকেন্দ্র, এমসি কলেজ ভোটকেন্দ্র, আলীয়া মাদরাসা ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের সময় দেখা যায় পুরুষ ও নারী ভোটারের উপস্থিতি লক্ষণীয়। দুপুর পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। কিন্তু দুপুরের পরপরই বদলে যায় পরিস্থিতি। অনেক কেন্দ্রেই দখল পর্ব শুরু হয়। এই দখল-পাল্টা দখলকে কেন্দ্র করে নগরীর মদিনা মার্কেটের শাহজালাল জামেয়া ভোটকেন্দ্রে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে ধানের শীষের সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এ সময় নৌকা ও ধানের শীষের নির্বাচনী বুথে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। একটি মোটরসাইকেলেও আগুন দেয়া হয়। পরে সেনা সদস্যরা এসে ধাওয়া করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। শাহজালাল জামেয়া কেন্দ্রের একটু দূরে অবস্থিত বীরেশচন্দ্র ভোটকেন্দ্র। ওই কেন্দ্রে বেলা পৌনে একটা পর্যন্ত স্বাভাবিক ভোট গ্রহণ হয়। এরপর কেন্দ্রটি দখলে নেয়ার চেষ্টা চালায় নৌকার সমর্থকরা। বাধা দেন ধানের শীষের সমর্থকরা। এ নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে প্রায় এক ঘণ্টা ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকে। বিকালে পরিবেশ স্বাভাবিক হলে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। নগরীর শেখঘাট বধির স্কুল ভোটকেন্দ্রে বেলা দেড়টার দিকে হঠাৎ করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কেন্দ্রের পেছন দিক থেকে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। এতে করে আতঙ্ক দেখা দেয়। এর পরপরই ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়। এদিকে ঘটনার পরপরই নগরীর আখড়া এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। নৌকার সমর্থকদের বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটে। বেলা দুইটার দিকে খাদিমপাড়া ইউনিয়নের জহিরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ধানের শীষের সমর্থকরা নৌকার সমর্থকদের তাড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্র দখলে নেয়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। সিলেটের অন্তত ৩০টি কেন্দ্রে গতকাল এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে দুপুরের পর থেকে অনেক কেন্দ্রেই ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। এদিকে বিকাল ৩টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিলেট-১ আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে তিনি বলেন- ‘সকালে শাহ মীর স্কুলের ভোটকেন্দ্রে গেলে সেখানে আমি দেখি ভোট কক্ষের দরজা বন্ধ করে জালভোট দেয়া হচ্ছে। হলিসিটি  স্কুলের প্রধান ফটক বন্ধ করে রেখে সেখানে ভোটারদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। সে কেন্দ্রে আমি নিজেও অনেক ধাক্কাধাক্কি করে ঢুকতে পারি নি।’ তিনি বলেন, ‘দারুসসালাম ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখি সেখানকার ভোটকেন্দ্র বন্ধ। ভেতরে ঢুকতে গেলে ভেতর থেকে গুলির শব্দ ভেসে আসে। স্কলারস হোমকেন্দ্রে আমি ভেতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।’ এসময় তিনি আরো কয়েকটি কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘এসব কেন্দ্রে আমার এজেন্টকে বের করে দিয়ে ব্যাপক জালভোট দেয়া হয়েছে।’ এ ছাড়াও তিনি বলেন, ‘শেখঘাট স্কুল কেন্দ্রে আমার প্রধান এজেন্টের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করা হয়েছে।’ এত অভিযোগ তুললেও শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে থাকবেন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত দেখতে চাই। দেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীকে দেখাতে চাই বর্তমানে বাংলাদেশে কেমন নির্বাচন হচ্ছে।’
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status