শেষের পাতা

দু’মাসেও খোঁজ মেলেনি ব্লগার পিনাকীর উৎকণ্ঠায় পরিবার

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

২০১৮-০৯-২৮

এখনো খোঁজ মেলেনি ব্লগার পিনাকী ভট্টাচার্যের। চলতি বছরের ৫ই আগস্ট পিনাকী নিখোঁজ হয়েছেন। তার নিখোঁজ হওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল। আইশৃঙ্খলা বাহিনীও তাকে খুঁজে পায়নি। পিনাকী নিখোঁজ প্রায় দু’মাস ধরে। অপরদিকে পিনাকীর বাবা শ্যামল ভট্টাচার্য বলেছেন ছেলের নিখোঁজে তারা উৎকণ্ঠা উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তার খোঁজ আদৌ করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে তিনি ছেলের খোঁজের জন্য পুলিশের কাছে যাননি। বৃহস্পতিবার পিনাকীর বাবা শ্যামল ভট্টাচার্য মানবজমিনের কাছে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার ছেলে নিরাপত্তাহীনতায় আত্মগোপনে আছেন। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি ছেলের নিখোঁজের বিষয়ে তার ধারণার কথা বলেছেন।

এসময় তিনি বলেন, ‘আগস্টের ৪ তারিখ পর্যন্ত আমি তার সঙ্গেই ছিলাম। আমার এক নাতির বিয়েতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে গিয়েছিলাম নেত্রকোনায়। সেখান থেকে পর দিন ফেরার পথে তিনি পরিবার নিয়ে গাজীপুরের ভাওয়াল রিসোর্টে রাত যাপন করেন। পরের দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে গাজীপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তারা।

এসময় শ্যামল ভট্টাচার্য ঢাকায় তার ছোট ছেলের বাসায় ওঠেন। পিনাকী তার বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের ছোটভাইয়ের বাসায় নামিয়ে দিয়ে তার অফিসের উদ্দেশে চলে যান। এর পরের দিন রাত থেকে পিনাকী নিখোঁজ হয়ে যায়। তারা বাবা এসময় আরো বলেন, নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার আগে তার ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, তিনি অফিসে থাকাকালীন বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে একজন তাকে ফোন করেন।

এসময় তাকে বলা হয়, আপনার সঙ্গে জরুরি কিছু কথা আছে, আপনি আমাদের অফিসে আসুন। পিনাকী জবাবে বলেন, জরুরি কোনো কথা থাকলে বরং আপনারাই আমার অফিসে চলে আসুন, এখানে বসে কথা বলতে কোনো অসুবিধা হবে না। এর পর তিনি অফিস থেকে বের হয়ে বাসার পথে রওনা হন। পরে তিনি আর বাসায় ফেরেননি।

শ্যামল ভট্টাচার্য এসময় আরো জানান, ছেলের এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পেছনে ফেসবুকের পাঠকদের কোনো হাত থাকতে পারে। কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন পিনাকী ফেসবুকে যেসব লেখা লিখতো এই লেখাগুলো মারাত্মক আক্রমণাত্মক। আমি নিজেও তার অনেক মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছি। এসব লেখা সব পাঠক গ্রহণ করেনি। কিছু পাঠক আছে তারা সেই লেখা বিরূপ মন্তব্য করেছে। তিনি ধারণা করছেন, ফেসবুকে কোন গোষ্ঠী তাকে জীবননাশের হুমকি দিয়ে থাকতে পারে। এর ফলে সে মোবাইল, ফেসবুক সব কিছু ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছে।

পিনাকীর এভাবে আত্মগোপন হোক আর নিখোঁজ হোক এর প্রভাব পরিবারের উপর পড়েছে। শ্যামল ভট্টাচার্য নিজের এবং পরিবারকে নিয়ে হুমকির মুখে আছেন বলে জানান। তিনি এই হুমকির বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন করেন একটি জাতীয় দৈনিকের মাধ্যমে। তার সেই চিঠিটি ওই পত্রিকা তাদের অনলাইন ভার্সনে আপলোড করেছিলেন।

নিখোঁজের পর মাঝে মাঝে ফেসবুকে আসতেন: পিনাকীর বাবা জানান, ছেলে নিখোঁজের পর বেশ কয়েকবার ফেসবুকে এসেছিলেন তিনি। তাকে ফোন করে কারা ডেকেছিলেন তাদের সম্পর্কে লিখেছেন। সর্বশেষ তিনি ফেসবুকে লিখেছেন আমি ভালো আছি।

পিনাকীর শিক্ষা জীবন: বাবা শ্যামল ভট্টাচার্য বগুড়া জেলা স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। ফলে পিতার হাত ধরেই তিনি এসএসসি পর্যন্ত জেলা স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন। পরে এইএসসিতে ভর্তি হন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে। এর  পর তিনি ভর্তি হন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে। সেখান তিনি এমবিবিএস শেষ করেন। পিনাকী রাজশাহী মেডিকেলে পড়াশোনা চলাকালীন থেকেই ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ওই সময় তিনি এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। একদিন তাকে মেরে ক্যাম্পাসে ফেলে রাখাও হয়েছিল। পরে আবার গ্রেপ্তার হলে মেডিকেলের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে ওই সময়ের প্রশাসন ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

পিনাকীর স্ত্রী মুসলমান: পিনাকীর সঙ্গে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তো আঞ্জুমান আরা বেগম। পড়াশোনা শেষ করে পিনাকী তার সহপাঠী আঞ্জুমান আরাকেই বিয়ে করেন। বর্তমানে তাদের একটি পুত্র সন্তান আছে। রাসেভ আঞ্জুম শুভ। সে নবম শ্রেণির ছাত্র। পিনাকীর স্ত্রী এফসিপিএস ডাক্তার।

পিনাকীর কর্মজীবন: পিনাকী কর্মজীবন হিসেবে ব্যবসাকেই বেছে নেন। তিনি ঢাকার গুলশানে গড়ে তুলেছেন একটি ঔষধ তৈরির কারখানা। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বি সিক্সটিন বায়োটেক এ্যান্ড ফার্মা’। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি লেখালেখিতে ব্যাপক সক্রিয়। তার লেখা এ পর্যন্ত ১৭টি বই প্রকাশ হয়েছে বলে জানান তার বাবা।

এদিকে পরিবার পিনাকীর এই নিখোঁজ হওয়ায় উদ্বেগের মধ্যে আছে। তারা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের দারস্থ না হলেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছেলের খোঁজ চেয়েছেন।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status