বিশ্বজমিন

বিশ্বের সবচেয়ে দামি বাড়ি, আছে ৩টি হেলিপ্যাড, সিনেমা হল, ৬০০ কাজের লোক (ভিডিও)

মানবজমিন ডেস্ক

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ১২:১৫ অপরাহ্ন

একটি বাড়ি। বানাতে খরচ ১০০ কোটি পাউন্ড। ২৭ তলাবিশিষ্ট এ বাড়িতে আছে তিনটি হেলিপ্যাড। আছে ৫০ আসনের একটি থিয়েটার। আর আছে ৬০০ স্টাফ বা কাজের লোক। এসবই মাত্র একটি পরিবারের জন্য।
বলতে পারেন কোন পরিবার এমন বিলাসী জীবন যাপন করে! খুব বেশি দূরের দেশে নয়। ভারতের মুম্বইতে তার বাস। আর বাড়িটিও সেখানে। এ বাড়ির মালিক পৃথিবী নামের এই গ্রহের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আমবানির।

একটি পরিবারের জন্য এক শত কোটি পাউন্ডেরও বেশি অর্থ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ওই বাড়ি। তাতে মাত্র একটি পরিবারের বাস। মাত্র একটি পরিবারের বসবাসের জন্য সম্ভবত বিশ্বে আর কোথাও এত বড় বাড়ি, তাদেরকে দেখাশোনার জন্য এত কাজের লোক আর কোথাও নেই। মুকেশ আমবানি সেই ব্যক্তি, যিনি নিজের এয়ারবাস জেটে করে চলাচল করেন। একটি বিশাল বিস্তৃত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকও তিনি। আর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ বা আইপিএলের একটি টিমের মালিকও।

২০০২ সালে স্ট্রোক করে মারা যান মুকেশ আমবানির পিতা। তারপর বিলিয়নিয়ার এই ব্যবসায়ী নিজের স্ত্রী ও তিন সন্তানের জন্য নিজের শহর মুম্বইতে একটি ভবন নির্মাণ শুরু করেন। এর নাম দেয়া হয় আন্তিলিয়া। বিশ্বের অন্যতম ধনীরা বাস করেন যে সড়কে সেই সড়কে তিনি এই বাড়ি নির্মাণ করেন।

রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি ভারতের শীর্ষ ধনীর খেতাব পান। জুলাই মাসে তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫০০ কোটি ডলার বা ৩৪০০ কোটি পাউন্ড। তার পিতা ধীরুভাই আমবানিও ভারতে ধনীদের তালিকায় ছিলেন। তিনি ম্যাটেরিয়াল ব্যবসা শুরু করেন। পরে তার পরিবার এই ব্যবসাকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পলিস্টার ফাইবার ও সুতা তৈরির কারখানায় পরিণত করে। ভারত থেকে বর্তমানে যে পরিমাণ পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয় তার ৫ ভাগের এক ভাগই সরবরাহ দেয় রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ।

২০১০ সাল থেকেই আন্তিলিয়া নামের ওই বাড়িতে একসঙ্গে বসবাস শুরু করেন মুকেশ আম্বানি, তার স্ত্রী নিতা আম্বানি, তিন সন্তান অনন্ত আম্বানি, আকাশ আম্বানি ও ইশা আম্বানি। তাদের এ বাড়িটি নির্মাণ যখন চলছিল তখনই একে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আবাসিক ভবন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  সুবিস্তৃত, কাচে আবৃত এই ভবনটি মুম্বইয়ের আকাশে উঠে গেছে ১৫০ মিটারেরও বেশি উপরে। ফলে ওই শহরে যে ২ কোটি মানুষ বসবাস করে এই টাওয়ার তা ছাড়িয়ে অনেক উপরে উঠে গেছে। মুম্বই শহরকে যে ধোয়ার শহর বলা হয়, সেই ধোয়ার আস্তরণ পাড় হয়ে আকাশের দিকে উঠে গেছে এই ভবন। আর তাতেই বসবাস আম্বানি পরিবারের।

আন্তিলিয়ার বিলাসিতা, বহুতলবিশিষ্ট বাগান, বিস্ময়কর পানির ফিচার, ছাদের ওপর তিনটি হেলিপ্যাড দেখাতে ২০১২ সালে ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিনের সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানান নিতা আম্বানি। ২৭ তলার এই ভবনটির বৈশিষ্ট হলো প্রতিটি তলার সিলিং এক একটি এক একদিকে বের করে দেয়া। আছে ৫০ আসনের সিনেমা হল। লবি থেকে আছে ৯ টি এলিভেটর বা লিফট। অতিথিদের বিনোদনের জন্য আছে একটি গ্রান্ড বলরুম।

এপার্টমেন্টের একপ্রান্তে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে সুইমিং পুল। ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। সেখানে রাখা যায় মোট ১৬০টি গাড়ি। আর বাড়িটি দেখাশোনা, পরিষ্কার করতে রয়েছেন ৬ শতাধিক স্টাফ। তারা ২৪ ঘন্টা পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। এত কাজের লোক থাকা সত্ত্বেও যখন মুকেশ ও নিতা আম্বানির সন্তানরা বিদেশের পড়াশোনা রেখে বাড়ি আসে বেড়াতে তখন নিজেদের রুম তারা নিজেরাই পরিষ্কার করে নেয়।

ভ্যানিটি ফেয়ারকে নিতা আম্বানি বলেছেন, ভারতীয় হার্টকে ধারণ করে এটি একটি আধুনিক বাড়ি। এতটা উপরে আমরা বাড়ি করেছি এ জন্য যে, আমরা পর্যাপ্ত সূর্যের আলো চাই। তাই এটি একটি বাগানের ভিতর একটি বাঁকানো বাড়ি। বাড়িটির মডেল করা হয়েছে একটি পদ্মফুলের ওপর ও সূর্য্যরে ভিত্তিতে। এতে ডেকোরেশন করা হয়েছে বিরল কাঠ, মার্বেল ও মুক্তো দিয়ে।

এই বাড়িটিতে যে পরিমাণ প্রযুক্তিগত সম্পদ রয়েছে তার চেয়ে মাত্র একটি আবাসিক ভবনে বেশি খরচের প্রযুক্তি আছে। আর সেটা হলো বাকিংহাম প্যালেস। কিন্তু বৃটেনের রাজপরিবারের এই বাড়ি হলো ক্রাউন ল্যান্ড বা রাজকীয় জমিতে। কিন্তু মুকেশ আম্বানির বাড়ির মালিক শুধু তিনি নিজে।

মুকেশ আম্বানির বাড়ি নিয়ে ২০১০ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখক জ্ঞান প্রকাশ বলেছিলেন, এ বাড়িটি হলো আকাশ ছোঁয়ার গেট। ধনীরা কিভাবে শহর থেকে দূরে মুখ রাখতে চান, বাস করতে চান তারই ভাবমূর্তি ফুটে উঠেছে সেখানে।
মুকেশ আম্বানি পরিবার যে শুধু এই বাড়িতেই বসে বিলাসিতা ভোগ করেন তা নয়। যখনই তারা ভারতের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত প্রিয়জনকে দেখতে চান তখনই ব্যক্তিগত এয়ারবাসে উঠে বসেন। তারপর আকাশে উড়ে পৌঁছে যান তাদের কাছে। এই এয়ারবাসটি স্ত্রী নিতাকে তার জন্মদিনে উপহার দিয়েছিলেন মুকেশ আম্বানি ২০০৭ সালে।

কিনেছেন ৬ কোটি ডলার দিয়ে। এই বিমানটি কেনার পর তিনি তা ১৮০ জন আরোহী চলাচলের উপযোগী করিয়ে নেন। বর্তমানে ওই এয়ারবাসে রয়েছে একটি লিভিং রুম, বেডরুম, স্যাটেলাইট টিভি, একটি স্কাই বার ও একটি স্পা।


আম্বানি দম্পতির মেয়ে ইশা আম্বানি (২৬)। সম্প্রতি তিনি ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। তিনি বলেন, তিনি জানেন যে ভারতের ভবিষ্যত তার হাতে। তার ভাষায়, সারা জীবন আমি দেখেছি আমার পরিবার রিলায়েন্স গ্রুপকে বড় করতে এবং সারা ভারতবাসীর জীবনমানের উন্নতি ঘটানোর জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছে।

এই কোম্পানি ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা আমি বুঝতে পারি। সত্যিকার অর্থে আমি বিশ্বাস করি যে, রিলায়েন্সকে আরো বড়ো করা হলো আমার স্বপ্ন। আমার রোল মডেল হলেন আমার পিতা। তার কারণে আমি নির্ভয় একটি জীবন পেয়েছি। আমি যদি সাহসী হই, কঠোর পরিশ্রমী হই এবং যদি আত্ম প্রত্যয়ী হই তাহলে আমি সব কিছু অর্জন করতে পারবো। তিনি আমাকে এভাবেই বড়ো করেছেন। তিনি আমাকে শিখিয়েছেন, আকাশের দিকে তাকাও। কোনো গ্লাস সিলিং নেই। যতদূর উঠতে চাও উঠতে পারো। আমার পিতা ভারতপ্রেমী।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status