দেশ বিদেশ

সিলেটে রানার কর্মকাণ্ডে আপত্তি ‘গুরুমা’ সুন্দরীর

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ৯:২৯ পূর্বাহ্ন

রানা ভূঁইয়াকে নিয়ে আপত্তি সুন্দরীর। সুন্দরীর দাবি- ‘রানা হিজড়া নয়। সে পুরুষ। তার সঙ্গে যারা থাকে তারা সমকামী পুরুষ। হিজড়া নয়। অথচ- সমকামী পুরুষদের হিজড়া বলে পরিচয় দিয়ে সিলেটে কুকর্ম চালাচ্ছে রানা।’ সিলেটের এই রানার কর্মকাণ্ডে ফুঁসেছেন হিজড়ারা। তারা এ নিয়ে পুলিশ কমিশনারের দ্বারস্থ হয়েছেন। দিয়েছেন অভিযোগও। অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার সন্ধ্যায় থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে রানা ভূঁইয়া ও তার সহযোগীদের তাড়িয়ে দিয়েছে। সুন্দরী হিজড়া। বাড়ি সিলেটেই। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হিজড়াদের ‘গুরুমা’ হিসেবে সিলেটে কাজ করছেন। সিলেট বিভাগ হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি তিনি। তার সংস্থায় প্রায় ৯০০ হিজড়া রয়েছে। সবাইকে তিনি দেখভাল করেন। গেল কয়েক বছর ধরে নগরীর সুরমা মার্কেটের বিপরীতে জালালাবাদ পার্ক এলাকায় রানা ভূঁইয়া নামের আরেক হিজড়া সর্দারের আবির্ভাব ঘটে। রানার কাছেও রয়েছে কয়েকজন যুবক। বিকাল হলেই এসব পুরুষরা হিজড়ার ছদ্মবেশ ধারণ করে চলে আসে পার্কের সামনে। তারা সমকামী বলে ইতিমধ্যে ওই এলাকায় পরিচয় লাভ করেছে। এমনকি তাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তোলপাড় শুরু হয়েছে। পার্কের সামনে সমকামী পুরুষ বিকিকিনির হাট বসছে এরকম খবরও সিলেটে প্রচার হয়েছে। হিজড়া দলপতি সুন্দরী গুরুমার আপত্তি তাদের নিয়ে। তারা পুরুষ হয়ে কুকর্ম করলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তারা হিজড়া পরিচয়ে অসামাজিক কাজ চালাচ্ছে। এতে করে সিলেটের হিজড়াদের প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাব জন্মাচ্ছে। কখনো কখনো রানা তার নিয়ন্ত্রণে থাকা যুবকদের হিজড়া পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করছে। আর ওই চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। সম্প্রতি সুন্দরীর কাছে হিজড়া সম্পর্কে অভিযোগও দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এসব অভিযোগের কারণে সুন্দরী হিজড়া পুলিশ কমিশনারের দ্বারস্থ হন। শনিবার হিজড়া পরিচয়কারী নকল হিজড়াদের গ্রেপ্তার দাবিতে এসএমপি পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন সিলেট হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি সুন্দরী হিজড়া, আলেয়া হিজড়া, বিউটি হিজড়া, লিপি হিজড়া, সাজু হিজড়া, রানী হিজড়া, পাখি হিজড়াসহ সংস্থার সকল সদস্যবৃন্দ। অভিযোগে উল্লেখ করেন, রানা ভূঁইয়া নামের এক যুবক সিলেট নগরীতে হিজড়া পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদা আদায় করে। এমনকি সিলেটস্থ বিভিন্ন স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের হিজড়া বানিয়ে সমাজের কাছে তাদের সমকামিতায় বাধ্য করে। এ সকল নকল হিজড়াদের নিয়ে একটি গ্রুপ  তৈরি করে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিভিন্ন ফায়দা হাসিল করছে। এমনকি সঠিক হিজড়াদের মারধর করছে বলে অভিযোগ করেন তারা। অভিযোগে তারা বলেন-‘রানা ভূঁইয়া সিলেট নগরীর জালালাবাদ পার্কের ভেতরে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর হলে নকল হিজড়াদের নিয়ে আড্ডা জমায় এবং ওই খান থেকে যুবকদের বিক্রি করে।’ হিজড়া কল্যাণ সংস্থার দাবি- এই নকল হিজড়া বানানোর কারিগর রানা ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক। এদিকে- সুন্দরীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে সিলেটের থানা ও ডিবি পুলিশ শনিবার সন্ধ্যায় জালালাবাদ পার্ক এলাকায় অভিযান চালায়। ওই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলো রানা ভূঁইয়াও। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- রানা ভূঁইয়ার বাড়ি ময়মনসিংহে। সে দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় লাউয়াই এলাকায় বসবাস করছে। সুরমা মার্কেট কেন্দ্রিক নানা অপরাধের সঙ্গে সে জড়িত। প্রায় ৩ বছর ধরে রানা ভূঁইয়া নিজেকে হিজড়া পরিচয় দিয়ে আরো কয়েকজন যুবককে তার সঙ্গে রেখেছে। ওই যুবকরাও হিজড়ার ছদ্মবেশ ধরে পার্ক এলাকায় অবস্থান নেয়। আর বিকাল হলেই রানা ভূঁইয়া নকল হিজড়াদের বিকিকিনি করে। এ নিয়ে হিজড়াই নয়, স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও তার ওপর ক্ষুব্ধ। শুধু অসামাজিক কাজই নয়, মাদক বেচাবিক্রির সঙ্গে রানা ভূঁইয়ার সিন্ডিকেটরা জড়িত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এদিকে- সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশ জানিয়েছে- কারা হিজড়া কারা হিজড়া নয় সেটি নির্ণয় করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সেটি পুলিশের দেখার নয়। তবে- যারাই মাদকসহ অসামাজিক কাজে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status