বিনোদন

‘এখন সবকিছুই চলছে উল্টো’

ফয়সাল রাব্বিকীন

৩০ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ৭:৫৪ পূর্বাহ্ন

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্বনামধন্য সংগীতশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার গাওয়া দেশাত্মবোধক গানের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। একজন কণ্ঠযোদ্ধা হিসেবে তার গাওয়া অনেক দেশের গানই কালজয়ী হিসেবে রূপ পেয়েছে। স্বাধীনতার পর একজন লোকসংগীতশিল্পী হিসেবে নিজেকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে গেছেন রথীন্দ্রনাথ রায়। বিশেষ করে ভাওয়াইয়া গানে তিনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন শীর্ষে। পাশাপাশি চলচ্চিত্রের গানেও অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘তুমি আরেকবার আসিয়া যাও মোরে কান্দাইয়া’, খোদার ঘরে নালিশ করতে দিল না আমারে’, ‘ছোটদের বড়দের সকলের’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবরে’, ‘সবাই বলে বয়স বাড়ে’, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে’, ‘ও যার অন্তরে বাহিরে’, ‘আমি কি তোর আপন ছিলাম না’, ‘বাওকুমটা বাতাস যেমন’, ‘হীরামতি হীরামতি ও হীরামতি’, নদীর কূলে বইসা রে’, ‘কবিরাজি এলোপ্যাথি’, ‘বায়োস্কোপের বাক্স’, ‘একদিন রাজা ফকির’ প্রভৃতি। ১৯৭৯ ও ১৯৮১ সালে দু’বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান রথীন্দ্রনাথ রায়। ভাওয়াইয়া ও দেশাত্মবোধক গানের বাইরেও তিনি ভজন, কীর্তন, রামপ্রসাদী, শ্যামাসংগীত, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, মারফতি, লালনসহ সিলেটের গীতিকবিদের গান গেয়েছেন নিয়মিত। ১৯৯৪ সালে একুশে পদকও লাভ করেন রথীন্দ্রনাথ রায়। ২০১১ সাল থেকে এ শিল্পী পরিবারসহ বসবাস করছেন আমেরিকায়। তবে মাঝে মধ্যে শেকড়ের টানে ছুটে চলে আসেন দেশে। বর্তমানে তিনি ঢাকায়। বেশ কিছু অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে কেমন আছেন? দিনকাল কেমন চলছে? রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ভালো চলছে। যতবারই ঢাকায় আসি শহরটিকে নতুন করে আবিষ্কার করি। দিন দিন আমরা উন্নতির দিকে যাচ্ছি সেটা ঢাকা শহর দেখলেই বোঝা যায়। এবার ঢাকায় এসেও ভালো লাগছে। বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে? রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, আসলে দেশে এলেই বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নেয়ার চেষ্টা করি। টিভি লাইভেও গাই। এই যেমন সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে গেয়েছি। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল ‘প্রাণের খেলায়’। শুদ্ধ এবং দেশীয় সংগীতের প্রসারে বেঙ্গলের নিরলস চর্চা প্রশংসার দাবি রাখে। তাদের আয়োজনেই এটি হয়েছে। এর আগেও ‘প্রাণের খেলায়’ আসরে গান করেছি। স্বাধীনতার এই মাসে এমন আসরে গাইতে পেরে ভালো লেগেছে। ঢাকায় আর কদিন থাকবেন? বিশেষ কোন পরিকল্পনা আছে? রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, আসলে এক মাসের জন্য এসেছিলাম। কিন্তু বেশ দীর্ঘায়িত হয়ে গেল সফরটা। দেশে এলে যেতেও মন চায় না। তবে এখন বেশ গরম পড়েছে ঢাকায়। আমি আবার এটা সহ্য করতে পারি না। তবে আরো কিছুদিন হয়তো থাকা হবে। এর মধ্যে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে ভালো অনুষ্ঠানগুলোতে এবার গেয়েছি, গাইছি। এটাই আমার কাছে বড় বিষয়। এখন আমাদের দেশের গানের অবস্থা কেমন দেখছেন? রথীন্দ্রনাথ রায় বেশ আগ্রহের সুরে বলেন, আসলে এখন সব কিছু চলছে উল্টো। যেখানে যেটা হওয়ার কথা না সেখানে সেটা হচ্ছে। যেমন এফডিসিতে এখন সিনেমার চাইতে নাটক ও বিজ্ঞাপনের শুটিং বেশি হয়। আমাদের গানের অবস্থাও একই রকম। মাঝে মধ্যেই ইসলামপুর যাই। একটা সময় ক্যাসেট ও সিডির রমরমা ব্যবসা ছিল সেখানে। এখন দেখলাম সিডির দোকানই নেই। অন্য ব্যবসা চলছে সেসব দোকানে। এমনতো হওয়ার কথা ছিল না! আমি এখনকার সংগীতের এমন অবস্থা দেখে খানিক হোঁচটই খেয়েছি। এই সময়ের গান কি শোনা হয়। কেমন লাগে? রথীন্দ্রনাথ রায় হেসে বলেন, একদমই না। যে গানের সুর হৃদয় ছুঁয়ে যায় না তা আমি শুনি না। এখন বাইরের দেশের অনুকরণে গান হচ্ছে। কিন্তু কোনো ব্যাকরণ মানা হচ্ছে না। যে গান অনুভূতিকে নাড়া দেয় না সেটাতো গান নয়। আসলে এখন গানে মানের দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে না। আর যেটা আমার মনে হয়েছে সেটা হলো এখনকার শিল্পীদের মধ্যে সাধনার কমতি আছে। সংগীতের অনেক প্রতিযোগিতা হচ্ছে। অনেক ভালো কণ্ঠও উঠে আসছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাদের স্কুলিং হয় না। সাধনার অভাবে তারা হারিয়ে যায়। গানের ক্ষেত্রে সাধনার কোনো বিকল্প নেই। এটা ব্যক্তিগতভাবে হলেও চালিয়ে যেতে হবে। না হলে দীর্ঘদিন সংগীতে টিকে থাকা যাবে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status