প্রথম পাতা

রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতির শঙ্কা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২০২০-০৬-১৩

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রস্তাবিত বড় বাজেটে বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা জানান, করোনা মহামারির মধ্যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ‘অবাস্তব’। ফলে বিশাল ঘাটতি থেকেই যাবে। এছাড়া ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে যে বড় অঙ্কের ঋণ নেবে সরকার, তা দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করবে বলেও আশঙ্কা তাদের। একই বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.২ শতাংশ ধরেছেন অর্থমন্ত্রী, সেটাও ‘বাস্তবসম্মত নয়’। সূত্র জানায়, মহামারির মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ায় রাজস্ব
আহরণে লক্ষ্যের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে এনবিআর। এরপরও অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৬৬ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এনবিআর’র মাধ্যমে আদায় করা হবে, যা তা বাস্তবভিত্তিক নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম। রাজস্ব আদায়ের যে টার্গেট নেয়া হয়েছে, এটা বাস্তবসম্মত নয়। এটা অর্জন করা সম্ভব নয়। এছাড়া অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তাও বাস্তবায়নযোগ্য নয়। ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কীভাবে হবে তার বাস্তবসম্মত ভিত্তি নেই। অথচ এই প্রবৃদ্ধি হলো বাজেটের মূল ভিত্তি। এটাই যদি দুর্বল হয় তখন রাজস্ব আদায়ের টার্গেট অর্জন হবে না। এতে বাজেটে ঘাটতির মাত্রা বাড়বে। সবমিলিয়ে এবারের বাজেট বস্তুনিষ্ঠ নয়। সাধারণত কিছুটা উচ্চাভিলাষ ও কিছুটা বস্তুনিষ্ঠতার সামঞ্জস্য রেখে বাজেট প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু আমি মনে করি এবারের বাজেটটিতে উচ্চাভিলাষ আছে বস্তুনিষ্ঠতা নেই।
সিপিডি বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সংসদে জাতীয় বাজেট পেশ করা হয়েছে, যা কিনা একটি অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আনুমানিক প্রবৃদ্ধি বিষয়ক প্রকাশনা। সামপ্রতিক বছরগুলোতে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান এবং অর্থনীতি সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট পারফরমেন্স সূচকগুলোর মধ্যে অসামঞ্জস্যতার গুরুতর ঘাটতি প্রকাশ পেয়েছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা থেকে রাজস্ব আয়ের ঘাটতি হতে পারে সোয়া লাখ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না বলে প্রতিয়মান হচ্ছে।
প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করতে গিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের অবস্থা খুবই খারাপ। বছর শেষে খুব বেশি হলে ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় হবে। এর চেয়ে ৫০/৫৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এই মহামারির সময় কীভাবে আদায় হবে? এমন উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার কোনো মানে নেই বলে আমি মনে করি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকার যেভাবে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা কিন্তু অর্জিত হবে না। এছাড়া অর্জিত হবে না রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাও। আর এ দু’টো অর্জিত না হলে সরকারের ব্যয় অর্জিত হবে না। বিষয়টি বড় সমস্যা মনে করছেন তিনি।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হানেরও একই মত। রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, আমি মনে করি সেটা খুব বাস্তবসম্মত নয়।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: news@emanabzamin.com
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status