ঢাকা, ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার
mzamin

মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের এবং বর্তমান গভর্নরের প্রথম মুদ্রানীতি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মুদ্রানীতির ওপর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশ নামিয়ে আনা হবে। সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৭.৫ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে যা হয়েছে ১৮.১০ শতাংশ। আগামী জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন আগের মতোই ৯.৮ শতাংশ রাখা হয়েছে। অবশ্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.২৮ শতাংশ। 
মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে গত এক বছর ধরে সুদের হার টানা বাড়িয়ে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই ধারা থেকে বের হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা দেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে গভর্নরের আশা, জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশ এবং ২০২৬ সালের শুরুতে তা ৫ এর ঘরে নেমে আসবে। সেইসঙ্গে রেমিট্যান্স গ্রোথ গেল সাত মাসে ২৩.৬ শতাংশ হওয়ায় উচ্ছ্বসিত তিনি।
এক মনিটরি পলিসি দিয়ে সবকিছুর সমাধান করা যাবে না উল্লেখ করে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, চ্যালেঞ্জ থাকলেও জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশ এবং ২৬-এর শুরুতে তা ৫ এর ঘরে নেমে আসবে। গত সাত মাসে রেমিট্যান্স গ্রোথ প্রায় ২৪ শতাংশ হওয়া সন্তোষ প্রকাশ করে গভর্নর বললেন, রোজা ও হজের আগে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। পাচার করা অর্থ উদ্ধারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা আছে বলেই নতুন বিনিয়োগের স্বপ্ন দেখছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এক্সচেঞ্জ রেট নিয়ে বড় বড় কোম্পানি মার্কেট অস্থির করছে। এক টাকা বেশি দিয়েও ডলার কিনবেন না আপনারা।’ ডলারের দামও আপাতত আর বাড়ছে না বলে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, চলতি অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশ নামানোর লক্ষ্য ঠিক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগের মুদ্রানীতিতেও মূল্যস্ফীতির ৬.৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য ধরা হয়েছিল, যদিও বাস্তবে তা হয়েছে ১০ শতাংশের কাছাকাছি। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, নীতি সুদহার আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে। যতদিন মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে না নেমে আসে, ততদিন নীতি সুদহার কমানো হবে না।
পাচার করা অর্থ ফেরাতে দেশের সাপোর্টের পাশাপাশি বিদেশের সাপোর্ট নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের দুর্বলতা আছে। তবে অ্যাসেট রিকভারে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্নভাবে কাজ করা হচ্ছে। ফলে উদ্ধার হবে, কিন্তু সময়সাপেক্ষ।’
প্রয়োজনে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আরও তারল্য সহায়তা দেয়া হবে; সেইসঙ্গে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ব্যাংক সংস্কার কাজ শেষ হবে হলেও আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর।

নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটির (এসএলএফ) বিদ্যমান সুদহার ১১.৫০ শতাংশ এবং নিচের সীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটির (এসডিএফ) হার ৮.৫০ শতাংশে বহাল রাখা হয়েছে।
নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়, বিভিন্ন ধরনের কঠোর আর্থিক নীতি পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। তবে এসব নীতির কারণে গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। এতে করে নভেম্বরে ১১.৩৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি জানুয়ারিতে কমে ৯.৯৪ শতাংশে নেমেছে। মুদ্রানীতির বিবৃতি অনুসারে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল করা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনাই প্রধান লক্ষ্য।

নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি আগের মতো রাখা হয়েছে। গত ?ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭.২৮ শতাংশ। আগামী জুন পর্যন্ত বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ৯.৮ শতাংশ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

গত ডি?সেম্বর পর্যন্ত সরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৮.১০ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৭.৫০ শতাংশ লক্ষ্য ঠিক ক?রা হয়েছে। য?দিও গত ছয় মা?সে লক্ষ্য ছিল ১৪.২ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংক খাত থেকে সরকারকে ঋণ নেয়ার সুযোগ ক?মি?য়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে (রিজার্ভ মানি) মুদ্রার সরবরাহ বাড়াবে না বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
গত জুনে রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৯ শতাংশ। ডিসেম্বরে এ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ২ শতাংশ নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়। নতুন মুদ্রানীতিতে আগামী জু?ন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ১ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।

খেলাপি ঋণ ৩০ শতাংশ ছাড়াতে পারে: বাংলাদেশ ব্যাংক দেশে খেলাপি ঋণের মোট ঋণের ৩০ শতাংশ অতিক্রম করে যেতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাতের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু জরুরি ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক মূলত নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা জোরদার, ব্যাংকিং খাতের সুশাসন নিশ্চিত ও যথাযথভাবে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার ওপর জোর দিয়েছে। তারা মনে করছে, এর মধ্যদিয়ে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

দেশের ব্যাংকগুলোয় গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের প্রায় ১৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। তখন দেশের ব্যাংকগুলো থেকে বিতরণ করা ঋণের ১২.৫৬ শতাংশ ছিল খেলাপি।

 

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status