ঢাকা, ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

দেশ বিদেশ

দুদকের অভিযান

অস্তিত্ব মিলেনি সিআরআই’র অফিসের, ব্যাংকে ৩৫ কোটি টাকার এফডিআর

স্টাফ রিপোর্টার
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার

নানা দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান চালাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন-সিআরআই’র কোনো অফিসই খুঁজে পাননি দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান দল। গতকাল দুপুরে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডের ২ নম্বর বাড়ি ও ধানমণ্ডি ৬/এ এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনটাই জানিয়েছেন দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ। ধানমণ্ডি ইদগাহ্‌ মসজিদের সামনের ৫৫ নম্বর জহির’স সাউথ লেকভিউ ভবনের সামনে এক বিফ্রিংয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ বলেন, মূলত সিআরআই তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতিসাধন করেছে এই সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা দুর্নীতি দমনের ৪ সদস্যদের একটি এনফোর্সমেন্ট দল অভিযানে আসি। আমরা তাদের অফিসের সন্ধানে এসেছিলাম। তাদের অফিসে গিয়ে বিভিন্ন রেকর্ড ও কাগজ-পত্র পর্যালোচনা করে দেখতে চেয়েছিলাম, যাচাই করে দেখতে চেয়েছিলাম বর্তমানে কী পর্যায়ে আছে। আমরা প্রথমে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডের ২ নম্বর বাড়ি ও ধানমণ্ডি ৬/এ এলাকার বিভিন্ন স্পটে সন্ধান চালাই। কিন্তু তাদের অফিস আমরা খুঁজে পাইনি। ইতিমধ্যে আমরা তাদের তিন থেকে চারটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে জানতে পেরেছি। সেগুলোও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। সব তথ্য হাতে পেলে আমরা কমিশন (দুদক) বরাবর রিপোর্ট জমা দিয়ে দিবো। তিনি বলেন, আমরা জেনেছি এই সিআরআই’র সভাপতি হিসেবে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। এ ছাড়াও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, আজমিনা সিদ্দিক, নসরুল হামিদ বিপুসহ অনেকেই এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। সিআরআই নন প্রফিট অরগানাইজেশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ওয়েল ফেয়ার, ফ্রিলেন্সার নিয়ে কাজ করতো। তবে এর আড়ালে তারা আর কী কী কাজ করতো সেটারই তথ্য আমরা খুঁজে বেড়াচ্ছি। এখন প্রাথমিকভাবে আমরা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছি। একাধিক ব্যাংকে তাদের অ্যাকাউন্ট আছে আমরা সেটা জেনেছি। ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহের প্রক্রিয়াও চলমান। কিন্তু অনেক রিপোর্টই আমরা পাচ্ছি না। এদিকে দুদক মহাপরিচালক আখতার হোসেন বলেছেন, সিআরআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ বিভিন্ন রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিলের অপব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ভিত্তিতে একটি অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান চলাকালে দুদক দল ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সিআরআইয়ের ব্যাংকিং রেকর্ড সংগ্রহ করেছে। রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের গবেষণা শাখা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন-সিআরআই’র নামে শুধু আইএফআইসি ব্যাংকে ৩৫ কোটি ২১ লাখ টাকার এফডিআর রয়েছে। দুদক এখন সংগৃহীত নথি ও আর্থিক লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিবে। উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল হিসেবে কাজ শুরু করে সিআরআই। সিআরআইয়ের চেয়ারম্যান শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ভাইস চেয়ারম্যান। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে আরও রয়েছেন শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। 
শেখ পরিবারের বাইরে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে অন্যতম সদস্য হচ্ছেন সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। শেখ পরিবার ও দলের হয়ে গবেষণা সংস্থাটির সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন তন্ময় আহমেদ। সিআরআই হোয়াইট বোর্ডের সম্পাদকীয় পরিষদে কো-এডিটরের দায়িত্বে রয়েছেন সৈয়দ মফিজ কামাল ও কপি এডিটর রুথ গ্রিফিথস। আওয়ামী লীগের এই গবেষণা সেল সিআরআইয়ের প্রধান কার্যালয় ছিল ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের ২ নম্বর ভবনে। এ ছাড়া ধানমণ্ডিতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় ও ধানমণ্ডি ৬/এ-তেও এই সংস্থার কার্যক্রম ছিল। 
সিআরআই এবং এর ট্রাস্টিরা বরাবর প্রতিষ্ঠানটিকে অরাজনৈতিক এ অলাভজনক বলে দাবি করলেও মূলত এটি আওয়ামী লীগ বিরোধী দল-মতের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হতো। রাজনৈতিক দলের গবেষণা শাখা হওয়ার পরও, সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ২০১৬ সালের ২রা অক্টোবর সিআরআইয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে।  সে অনুযায়ী, সারা দেশে ‘শেখ রাসেল কম্পিউটার অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব এর অধীনে স্থাপিত দুই হাজার ডিজিটাল ল্যাবের রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের জন্য সিআরআই সমন্বয়ক ও তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে। পরবর্তী সময়ে ১০ হাজার ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়। যা নিয়ন্ত্রণ করে সিআরআই। প্রথম পাঁচ হাজার ল্যাব স্থাপনে পরামর্শকের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৪৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ কেনাকাটা বাবদ ৬৪৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, ল্যাব ও পিআইইউ স্থাপন বাবদ ১৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা, কম্পিউটার সফটওয়্যার কেনা বাবদ ২৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এবং শিক্ষা ও শিক্ষণ উপকরণ বাবদ ১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। এ ছাড়াও বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে বুস্ট করে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দেয়া, সমন্বিত অনির্ভরযোগ্য আচরণ ও বাংলাদেশের স্থানীয় অডিয়েন্সকে টার্গেটের অভিযোগে ভুয়া পরিচয়ের ১৪৮টি অ্যাকাউন্ট ও পেজ ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলে মেটা। যেগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এর গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের যোগসূত্র পাওয়া গেছে।  

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status