শেষের পাতা
রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না
স্টাফ রিপোর্টার
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার
দেশে যথেষ্ট আমদানি ব্যবস্থা ও মজুত আছে। তাই আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়বে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বণিক বার্তা কর্তৃক আয়োজিত ‘খাদ্যপণ্যের যৌক্তিক দাম: বাজার তত্ত্বাবধানের কৌশল অনুসন্ধান’ শীর্ষক নীতি সম্মেলনে তিনি এ আশ্বাস দেন।
উপদেষ্টা বলেন, এস আলম পালিয়েছে তারপরও বাজারে তেমন বিপত্তি নেই। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে বিগত সরকার। এটা থেকে বের হওয়া এত সহজ না। ব্যাংকের ডিপোজিট, কর, ঋণ ও এক্সচেঞ্জ রেট কৃত্রিমভাবে ধরে রেখেছিল বিগত সরকার। বাজারে তেমন কোনো সংকট নেই। তেলের সংকট জানতে পেরেছি। সবাইকে মজুতদারির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। দরকার হলে ভ্যালু ক্যাম্পেইন, প্রাইজ ক্যাম্পেইন করতে চাই আপনাদের সঙ্গে নিয়ে।
তিনি বলেন, সিন্ডিকেট হচ্ছে এটা সত্য, এটা অস্বীকার করা যায় না। মিলমালিকরা নিজেরাও সমস্যা তৈরি করছেন। ব্যাংকে বিগত ১৫ বছরে ক্রিমিনালাইজেশন করা হয়েছে। ৮৫-৯০ ভাগ নন পারফমিং লোন রয়েছে। দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বশিরউদ্দিন বলেন, আমাদের আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্য- চিনি, তেল, ছোলা, খেজুর, পিয়াজ ও আলু। আপনাদের নিশ্চিত করতে চাই, আল্লাহ্র রহমতে বাজারে কোনো সংকট নাই।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, খুচরা বাজারকে টার্গেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত সমস্যা অন্য জায়গায়। যারা ব্যবসা করছেন তাদের তথ্য-উপাত্ত সরকারের জানা থাকতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কিছু আইনগত পরিবর্তন আনতে হবে। এখন যে কাঠামো আছে, তাতে একজন যত বড় হতে চান, তত বড় হতে পারেন। কোনো বাধা নেই। বাজারে যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সেজন্য আইনি সংস্কার দরকার। প্রত্যেককে ম্যান্ডেটরি লাইসেন্স করতে হবে। একজন ডিস্ট্রিবিউটর একজনের পণ্য বিপণন করে। এটি বন্ধ করতে হবে। বড় গ্রুপ একটা পণ্যের পুরো সাপ্লাই চেইন কিনে নেয়। এসব থেকে বের হতে হবে।
বাজারে পণ্যের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের মতোই পদক্ষেপ নিয়েছে; যা মর্মাহত করেছে। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ালে মিডিয়া চাপ দিতে শুরু করেন। সরকার কিছু একটা উদ্যোগ তড়িঘড়ি করে নেন। আবার ব্যবসায়ীরা চাপ দিচ্ছেন দাম বাড়াতে হবে। সরকার ডিউটি কমিয়ে দিচ্ছে। ফুড সাপ্লাই চেইনে এই যে নীতির দুষ্টচক্র তৈরি হয়েছে তা ভাঙতে হবে। এজন্য আমাদের ফুড মার্কেট দরকার, যার সঠিক অবকাঠামো থাকবে। এখানে রেজিস্টার্ড এজেন্টস ছাড়া কেউ কাজ করবে না। সঠিক জবাবদিহিতা থাকবে।
সরকারের কাছে বাজারের পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত না থাকায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না জানিয়ে সিপিডি’র এই গবেষক বলেন, সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার বড় কারণ হলো, বাজারের পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সরকারের কাছে নেই। বার্ষিক উৎপাদন ও সরবরাহের তথ্য হয়তো জানা আছে। কিন্তু প্রাত্যহিক উৎপাদন ও সরবরাহের তথ্য সরকারের জানা থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশক ও সরবরাহের তথ্য স্থানীয় পর্যায়ে না থাকলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীদের কাছেও এ তথ্য থাকে। এ রকম একটা পরিস্থিতি দিয়ে সরকারের পক্ষে কখনো বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ধনীদের ট্যাক্স যতটা আদায় করার কথা ছিল, আমরা আদায় করতে পারিনি। আমাদের কোষাগার এখনো গরিবের টাকায় পূর্ণ হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, উৎপাদক যৌক্তিক দাম পাচ্ছে না। ভোক্তা যৌক্তিক দামে কিনতে পারছে না। আমরা যে পণ্য কিনছি, তা কতোটা নিরাপদ। ক্যান্সার হাসপাতালে যারা অসুস্থ হয়ে ভর্তি আছেন বেশির ভাগই কৃষক। চাঁদাবাজ সরকার চলে যাওয়ার পরও চাঁদাবাজি কমছে না। চাঁদাবাজির ধরন পরিবর্তন হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে রাজনীতিবিদদের সৎভাবে উপার্জনের পথ তৈরি করতে হবে। অসৎভাবে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ে কাজ করছে। ব্যবসায়ীদের লোভ কমাতে কাজ করতে হবে। সরকারকে বাজারে লোক দেখানো মনিটরিং বন্ধ করতে হবে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
প্যানেল আলোচনায় প্রবিধান ও সরকারি সংস্থার বিষয়ে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন চেয়ারপারসন এএইচএম আহসান, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন চেয়ারম্যান (সচিব) ড. মইনুল খান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফয়সল আজাদ।
পণ্য আমদানি, সরবরাহ ও ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য রাখেন- এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও এমডি মোস্তফা কামাল, টি কে গ্রুপের গ্রুপ ডিরেক্টর মোহাম্মাদ মুস্তাফা হায়দার। অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন ও বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা করেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি’র চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
খুচরা বাজার নিয়ে বক্তব্য রাখেন- এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেডের (স্বপ্ন) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির, কাওরান বাজার ২ নম্বর কাঁচামাল আড়ৎ ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদ আহমেদ রাসেল। ভোক্তা অধিকার নিয়ে আলোচনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এবং কনজিউমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন। এ ছাড়া খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতাসহ সারা দেশের দুই শতাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
পাঠকের মতামত
সরকারের কোন স্তরে কার্যকর কোন কর্মসূচি নাই। উপদেষ্টারা ছুটাছুটি করছেন আর আমলারা সবাই তামাশা দেখছে। পুলিশবাহিনির কোন তৎপরতা নেই। সরকারি অফিসে কোন কাজ নেই। শুধুই দেখি কী হয়।
কোন গ্যারান্টি নেই। ব্যবসায়ীদের উপর সরকারের কোন কার্যকর নিয়ন্ত্রণ নেই। দ্রব্যমূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বরং ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।