ঢাকা, ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

দেশ বিদেশ

চাঁদাবাজি বাড়াচ্ছে মূল্যস্ফীতি, নিয়ন্ত্রণ কঠিন: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার
mzamin

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণ হিসেবে চাঁদাবাজিকে চিহ্নিত করলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এই চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে কঠিন বলে স্বীকার করেছেন তিনি। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তার কথায় প্রকাশ পেয়েছে যে নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হবে না। রোববার এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কেন- বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বিরের এই প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, চড়া মূল্যস্ফীতি উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছেন তারা। তবে তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন নিয়ন্ত্রণে আনার। ‘মূল্যস্ফীতি আমরা একেবারে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নাই, তা না। কিছুটা করেছি। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি একটু বেড়েছে। কিন্তু নন-ফুডে আবার কিছুটা কমেছে। সামগ্রিকভাবে বেড়েছে।’
সরবরাহ শৃঙ্খলে চাঁদাবাজি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সাপ্লাই চেইন ইজ ব্রোকেন। আর অনেক মিডল ম্যান। মহাস্থানগড় থেকে একটি ট্রাক ঢাকায় আসবে। পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাঁদাবাজির কারণে ভাড়া পড়ে ১২ হাজার টাকা। চাঁদাবাজি তো কমে নাই।’
তাহলে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ কেন করা যাচ্ছে না- সেই প্রশ্নে সালেহউদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তী একটি সরকারের পক্ষে এটা করা কঠিন। নির্বাচিত সরকার এলে তাদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ তুলনামূলক সহজ।
সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকার, জোর করে লোকজনকে ধরে..। এর আগে যেমন চাঁদাবাজি কম হতো। কারণ রাজনৈতিক সরকারের সুবিধা হলো, তার পলিটিক্যাল আর্মস ছিল। আমাদের তো সেরকম নাই। ইউ নো দ্য লিমিটেশন।
‘চাঁদাবাজিতে এখন তিনটি বড় দল জড়িত। এক, আগে যারা ছিল তারাও আছে; দুই, যারা এখন পলিটিক্যালি ইমার্জিং মাঠ পর্যায়ে আছে, তারাও চাঁদাবাজি করছে; তিন, স্থানীয় জনগণ। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য ডিফিকাল্ট হয়ে যাচ্ছে।’
পুলিশ দিয়ে কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না- সেই প্রশ্নে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘খুবই সত্য যে, পুলিশ আগের মতো সক্রিয় নয়। তাদেরকে নানা কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না, যেমন বাজারে যাও, ধরে নিয়ে আসো।’
বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা করছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘ভাঙতে চেষ্টা করছি। আমাদেরকে এখন সরকারি কয়েকটি সংস্থার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যারা কি না পর্যাপ্ত নয়।’
‘টিসিবি কার্ড দিয়ে বা ডেপুটি কমিশনার, ইউএনও দিয়ে তো মার্কেট কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না। তারা একবার গেল, পরে চলে এলো। মূল বিষয় হচ্ছে, জনগণকে সচেতন হতে হবে।’
তাহলে কি নির্বাচিত সরকার আসার আগ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভবপর হবে না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি, জুনের মধ্যে মুল্যস্ফীতি ৮ এর নিচে নিয়ে আসতে পারবো। একেবারে পাঁচ-ছয়-চারে চলে যাওয়া অসম্ভব।’
উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে অনেক পণ্যে নতুন করে ভ্যাট বসানোর সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, তারা এমন পণ্যে ভ্যাট বসাননি, যা মানুষের নিত্যকার ব্যবহার্য।
‘ফর এক্সাম্পল, বাংলাদেশে প্রতি পাউন্ডের একটা বিস্কিটের দাম ২০০ টাকার উপরে হলে.. ইউসুফ বেকারির বিস্কিট তো ২০০ টাকা দিয়ে কেনেন না, ৪০-৫০ টাকা দাম।’
ভ্যাটের হার ‘যৌক্তিকীকরণের’ অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভ্যাট বাড়ানোর বিষয়ে আমরা রেশনালাইজড হতে চাই। পৃথিবীর কোনো দেশে ভ্যাট ২.৪, ৫, ৭, ৭.৫-এ রকমও না। বেশির ভাগ দেশে ন্যূনতম ভ্যাট ১৫ শতাংশ।
‘আমরা ভাবছিলাম, ৫ যেগুলো আছে ১০ করি, সাড়ে ১০ করি। অলরেডি কয়েকটা পণ্যে আছে। এজন্য আমরা কিছুটা রেশনালাইজড করতে চেয়েছি। আর আমি চেষ্টা করবো, বাজেটে ভ্যাটের ওপর নির্ভরতা কমাতে।’ তবে বাজেটে প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন।
‘আমরা অবশ্যই ট্যাক্স নেটটা (করজাল) বাড়াবো। প্রথমত, ট্যাক্স লিকেজ হয়, যারা ট্যাক্স দেয়ার কথা, যত টাকার দেয়ার কথা, তা দেয় না। কারণ, তারা টেবিলের নিচে সেটেল করে। এটা আমাদের কর সংগ্রহে বড় একটি দুর্বলতা।’
কর প্রশাসনে সংস্কার আনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অলরেডি কেবিনেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে, করনীতি ও কর প্রশাসন আমি আলাদা করে দিচ্ছি। এনবিআর কেবল কর সংগ্রহ করবে। অ্যান্ড পলিসি ইজ ইউল বি ডান বাই ডিফারেন্ট বডি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
‘২০০৮ সালে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল, করনীতি ও কর প্রশাসন আলাদা হবে। কিন্তু এটা হয়নি। কারণ, এনবিআর অফিশিয়ালস এটিকে এলাউ করেনি। নিজেরা যদি পলিসি করি, ওটা আমার মনমতো করে করবো। সেটা তো হয় না। পলিসি যারা করবে, তারা সিদ্ধান্ত নেবে।’
সরকারের পরিচালন ব্যয় কমানোর কথা জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো অলরেডি শুরু করেছি। নতুন গাড়ি কেনা, নতুন বিল্ডিং করা, বড় বড় ইনফ্রাস্ট্রাকচার করা, এখন তো টোটালি বন্ধ।
‘দ্বিতীয়ত আমরা যেটা করতে চাচ্ছি, বড় বড় মেগা প্রকল্পের দিকে আমরা যাবো না। যেসব মেগা প্রকল্প পাইপলাইনে আছে আমরা সেগুলো তো করছি। যেমন মাতারবাড়ি করছি, মোংলারটা করছি।’
সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তা আপাতত হচ্ছে না বলে সালেহউদ্দিনের কথায় প্রকাশ পেয়েছে।
‘পে কমিশন করে পে বাড়াবো, এসবে আমরা কিন্তু হাত দিচ্ছি না। এটা আমাদের কাজও না। রাজনৈতিক সরকার আসবে, তারা পে কমিশন করবে।’
তাহলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো নিয়ে এখন কিছু হচ্ছে না- এই প্রশ্নে মাথা নেড়ে না সূচক বক্তব্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘কেবল স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের ওভারটাইম, অন্যান্য কিছু বিষয় আমরা দেখবো, যদি সম্ভব হয়। আমরা কোনো পে স্কেল পরিবর্তন করবো না।’
আগামী বাজেট নিয়ে মার্চ বা এপ্রিল থেকে আলোচনা শুরু করবেন জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রথমে আমি চেম্বার বডি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করবো। তারপর কিছু মানুষের সঙ্গেও কথা বলবো।
‘চেম্বার বডি ক্ষুদ্র পর্যায়ের মানুষের স্বার্থ রিপ্রেজেন্ট করে না। ডিফারেন্ট টাইপের বিজনেস বডির সঙ্গে কথা বলতে চায়। মানে সব ধরনের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছি। স্পেশালি বিজনেস পিপল।’
সংসদ না থাকায় বাজেট কীভাবে পাস হবে- সেই প্রশ্নে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘এর আগেও কেয়ারটেকার সরকারের সময়ে বাজেট হয়েছে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে।’
‘উপদেষ্টা পরিষদে কথা বলবো, তারা যদি বলেন যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৃহৎ আকারে কথা বলবে, তখন আমরা শেয়ার করতে পারি, এটি সবচেয়ে ব্যয়বহুল। আল্টিমেটলি ইট ইউল বি অ্যাডমিনিস্ট্রেটেড বাজেট। আমরা ঘোষণা দেবো, তারপর বাস্তবায়ন করবো... যতদিন আছি।’

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status