ঢাকা, ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

দেশ বিদেশ

গ্যাসের দাম না বাড়াতে চার ব্যবসায়ী সংগঠনের চিঠি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২৮ জানুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার
mzamin

শিল্পখাত ও ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টগুলোয় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও টেকসই মূল্য নির্ধারণে নীতিমালা প্রণয়নের দাবিও জানিয়েছেন তারা। সোমবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে এক চিঠিতে এ আহ্বান জানান দেশের চার শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা। যৌথভাবে এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল ও বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) চেয়ারম্যান হোসেন মেহমুদ। 

চিঠিতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, শিল্পখাতে বিরাজমান গ্যাসের সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ (যেমন- সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা) এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ (জ্বালানি নিরাপত্তা) নিশ্চিত করার জন্য মধ্য-দীর্ঘমেয়াদি িকৌশল ও সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়।

শিল্প ও অর্থনীতির স্বার্থে উপরোক্ত সুপারিশগুলো সরকারের সঙ্গে বিশদ আলোচনার জন্য এবং প্রয়োজনীয় আরও তথ্য সরবরাহ করতে সংগঠনগুলো প্রস্তুত আছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
চিঠিতে আশঙ্কা করা হয়, সরকার শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্য পুনরায় বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে, যা প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৭৫ টাকা করা হতে পারে। এরূপ মূল্য বৃদ্ধি কার্যকর করা হলে তা শিল্পায়ন ও অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির উদ্যোগটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন আমাদের কারখানাগুলো গ্যাসের অপর্যাপ্ত চাপ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে এবং ব্যাপক আর্থিক লোকসানের শিকার হচ্ছে। আমাদের শিল্প ঘন এলাকাগুলোতে, বিশেষ করে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভারে অবস্থিত কারখানাগুলোয় গ্যাস সংকটের কারণে ৫০%-৬০% হারে উৎপাদন কমে গেছে। ফলে কারখানাগুলোর প্রোডাকশন শিডিউল এবং সরবরাহ চেইন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে পোশাক খাতে সময়মতো কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে শিল্পে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি রপ্তানি বিঘ্নিত হচ্ছে, লিড টাইম ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর ফলে ক্রেতাদের আস্থা হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে যখন শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্য ১৫০% বৃদ্ধি করা হয়েছিল, তখন শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তার সুফল শিল্প পায়নি বলে জানান তারা।

শিল্পখাতে গ্যাসের দাম প্রায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাবে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পখাতের ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, গ্যাসের দাম বাড়লে পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোতে বছরে অতিরিক্ত প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। শিল্পায়ন ও অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বিনিয়োগ স্থবিরতার কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি বস্ত্র ও পোশাকখাতে বিনিয়োগে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে পোশাক শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৮.৯৫% এবং বস্ত্রখাতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ১৮.১১%। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে তা বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং চলমান মিল ও কারখানাগুলোকে সংকটে ফেলবে। মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রাক্কালে যখন ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ খাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন, তখন এ রকম একটি উদ্যোগ বিনিয়োগ সহায়ক নয়।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশে গ্যাসের মোট সরবরাহ ছিল ২৫ হাজার ৯৪৭ এমএমসিএম, যার ১৮ শতাংশ সরবরাহ করা হয়েছে শিল্পখাতগুলোয়। শিল্পে ব্যবহৃত মোট গ্যাসের প্রায় ৩০ শতাংশ সরবরাহ হয় পোশাকখাতে, সেই হিসেবে এই শিল্পের বার্ষিক গ্যাস চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৪০০ এমএমসিএম। গ্যাসের মূল্য যদি প্রতি ঘনমিটারে ৪৫ টাকা বৃদ্ধি পায়, তবে এই খাতে বার্ষিক অতিরিক্ত প্রায় ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা খরচ বৃদ্ধি পাবে, যা রপ্তানি আয়ের প্রায় ১.৫ শতাংশ। পাশাপাশি, টেক্সটাইল শিল্পের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো দেশের মোট গ্যাস সরবরাহের প্রায় ১০ শতাংশ ব্যবহার করে, যার পরিমাণ বছরে প্রায় ২ হাজার ৫৯৫ এমএমসিএম। ৪৫ টাকা হারে মূল্য বৃদ্ধি করা হলে টেক্সটাইল শিল্পের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোকে বছরে প্রায় অতিরিক্ত ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা খরচ বহন করতে হবে, যা বার্ষিক পোশাক রপ্তানি আয়ের প্রায় ২.৭ শতাংশ। অর্থাৎ এই ব্যাপক হারে খরচ বৃদ্ধি শিল্পের সক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে, ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা রয়ে গেছে বলে ব্যবসায়ীরা তাদের চিঠিতে উল্লেখ করেন।
 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status