দেশ বিদেশ
ইউরোপের বাজারে টানা পাঁচ মাস ধরে পোশাক রপ্তানি বাড়ছে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২২ জানুয়ারি ২০২৫, বুধবার
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে টানা ৫ মাস ধরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। ইউরোপের বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে পরিসংখ্যান সূত্রে জানা গেছে। গেল বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৪.০৯ শতাংশ বেড়ে ১.৫৩ বিলিয়ন ইউরোতে (১.৫৭ বিলিয়ন ডলার) পৌঁছেছে।
ইউরোপের ২৭-দেশের পরিসংখ্যান অফিস ইউরোস্ট্যাট-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম ১১ মাসের মধ্যে ৬ মাস পোশাক রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময় প্রবৃদ্ধির অঙ্ক ছিল ২০ শতাংশ থেকে প্রায় ৩৪ শতাংশের মধ্যে। আর বাকি ৫ মাসে পোশাক রপ্তানিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
চাহিদা বাড়তে থাকায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একক পোশাক বাজার ইইউতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পোশাক রপ্তানি গড়ে ২.৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এ খাতে বৈশ্বিক গড় প্রবৃদ্ধি ০.৩৪ শতাংশের চেয়ে বেশি। গেল বছরের চার মাসে রপ্তানির পরিমাণ ১৬.৭২ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ১৬.৩১ বিলিয়ন ইউরো। ইউরোস্ট্যাট বলছে, নিটওয়্যার রপ্তানি ০.৮৯ শতাংশ বেড়ে ১০.০৫ বিলিয়ন ইউরো হয়েছে; এছাড়া ওভেন খাতের রপ্তানি ৫.১৩ শতাংশ বেড়ে ৬.৬৭ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে।
প্রাথমিকভাবে পশ্চিমা দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার হ্রাস পাওয়ায় পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস এবং সুদের হার কমে যাওয়ায় রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এতে করে পোশাকের চাহিদাও বেড়েছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশে উচ্চমূল্যের পণ্যের অর্ডার বেড়েছে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের বিজিএমইএ’র সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, বাণিজ্য সংক্রান্ত উত্তেজনায় চীনের কিছু অর্ডার বাংলাদেশে এসেছে। এতে বাংলাদেশ উপকৃত হয়েছে। সরকার যদি যথাযথ নীতি সহায়তার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত রাখে, তাহলে আগামী মাসগুলোতে অর্ডারের এই ধারা অব্যাহত থাকার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আবদুল্লাহ হিল রাকিব।
ইউরোস্ট্যাট এর তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪ সালের প্রথম ১১ মাসে বিশ্ববাজার থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সামগ্রিক পোশাক আমদানি ০.৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ, গত বছরের একই সময়ের ৭৮.৩৩ বিলিয়ন ইউরো থেকে বেড়ে ৭৮.৬০ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে এ রপ্তানি। রপ্তানিকারকদের মতে, ব্যয়-কার্যকারিতা এবং টেকসই বা স্থায়িত্ব বিবেচনায় চীনের পরে ইইউতে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হলো বাংলাদেশ। গত বছরের প্রথম ১১ মাসে ইইউতে চীনের পোশাক রপ্তানি ১.১৯ শতাংশ বেড়ে ২২.১১ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছায়, যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ২১.৮৫ বিলিয়ন ইউরো। ইইউতে চীনের নিটওয়্যার রপ্তানি ৩.৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে ওভেন গার্মেন্টসের চালান ১.৩১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে তুরস্ক থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি ৬.৯৯ শতাংশ কমে ৮.৬০ বিলিয়ন ইউরোতে দাঁড়িয়েছে, এর আগের বছরে যা ৯.২৪ বিলিয়ন ইউরো ছিল।
একই সময়ে ভারত থেকে ইইউতে পোশাক রপ্তানি ০.৭০ শতাংশ বেড়ে ৩.৯১ বিলিয়ন ইউরো হয়েছে, যা এক বছর আগে ছিল ৩.৮৮ বিলিয়ন ইউরো।
ইইউতে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি ২.৮৭ শতাংশ বেড়ে ৩.৬৩ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে। আগের বছরে যা ছিল ৩.৫৩ বিলিয়ন ইউরো। আলোচ্য সময়ে ইইউতে কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কম্বোডিয়া থেকে ইইউতে পোশাক রপ্তানি গত বছরের ১১ মাসে ১৯.৯৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩.৫৮ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে, যা এর আগের বছরে ছিল ২.৯৯ বিলিয়ন ইউরো। আর পাকিস্তানের পোশাক রপ্তানি ১১.১৬ শতাংশ বেড়ে ৩.২০ বিলিয়ন ইউরো হয়েছে, যা আগের বছরে ২.৮৮ বিলিয়ন ইউরো ছিল।
এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, নতুন বা অপ্রচলিত বাজারে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে ৬৩৩ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। নতুন বাজারে ওভেনের চেয়ে নিট বেশি রপ্তানি হয়েছে। আলোচ্য সময়ে ওভেন রপ্তানি হয়েছে ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের এবং নিট রপ্তানি হয়েছে ৩২২ কোটি ৫৩ লাখ ডলার।
২০২৪ সালে বাংলাদেশ ৩৮.৪৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি করেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে। যেখানে রপ্তানির পরিমাণ ৫০.৩৪ শতাংশ। সে হিসাব ইইউতে রপ্তানি হয়েছে ১৯.৩৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক। রপ্তানির দিক থেকে ইইউ’র পরেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে রপ্তানির পরিমাণ ৭.২ বিলিয়ন ডলার (মোট রপ্তানির ১৮.৭২ শতাংশ)।
এদিকে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে অনুষ্ঠিত হোমটেক্সটিল প্রদর্শনীতে গত বছরের তুলনায় ভালো ক্রয়াদেশ পেয়েছে বাংলাদেশি প্রদর্শকরা। মেসে ফ্রাঙ্কফুর্ট আয়োজিত ১৪ থেকে ১৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এই প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের ১৫ প্রদর্শক অংশ নেন। বাংলাদেশি প্রদর্শক তাদের পণ্য যেমন; বিছানার চাদর, তোয়ালে, রান্নাঘরের লিনেন এবং অন্যান্য হোম টেক্সটাইল পণ্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রদর্শন করে।
এসিএস টেক্সটাইল, নোমান টেরিটাওয়েল, টাওয়েল টেক্স ও জাবের অ্যান্ড জুবায়েরের মতো বিশিষ্ট ব্র্যান্ডগুলো ৮ ও ৯ হলে তাদের উদ্ভাবনী পণ্যের মাধ্যমে ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ইপিবি একটি প্যাভিলিয়নের আয়োজন করে, যেখানে চারটি কম্পানি অংশ নিয়েছে। দেবোনিয়ার প্যাডিং অ্যান্ড কুইল্টিং সলিউশনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল হক বলেন, এবারের মেলা আমাদের দিয়েছে নতুন ও বিদ্যমান উভয় ক্রেতার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার সুযোগ।