বাংলারজমিন
সরজমিন সিংগাইর
‘এমন ভোট জীবনেও দেই নাই’
রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে
৯ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবারজীবন ভর ব্যালটে ভোট দিছি, বাক্সে ফালাইছি। কিন্তু এই রকম মেশিনে ভোট জীবনেও দেই নাই। তিনবার টিপ দিছি, কাম অয় নাই। তাই রাগ করে দুইবার বাইর হইয়া গ্যালে সারেরা আবার ডাইক্যা আইন্যা ভোট কি কইরা দিয়ুন লাগে শিখায় দেয়। মূর্খ মানুষ তাই মাথায় কিছুই ধরে না।’ মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চান্দহর চরমাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন আবুল হাসেম নামের এক বৃদ্ধ। সরজমিন সকাল ১০টার দিকে চান্দহর চরমাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল এলাকার আবুল হাসেম পুরুষ ভোটকেন্দ্রের বুথে ভোট দিতে গিয়ে ইভিএম পদ্ধতি না বোঝায় সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। কমপক্ষে ৫ বার গোপন কক্ষে প্রবেশ করেন আর বের হন তিনি। ইভিএম পদ্ধতি না বোঝার কারণে যতক্ষণ ভোট দিতে পারেননি ততক্ষণ তার মধ্যে অস্থিরতা কাজ করতে দেখা যায়। সর্বশেষ সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার তাকে বোঝাতে সক্ষম না হওয়ায় গোপন কক্ষে এক আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে ভোট সম্পন্ন করেন আবুল হাসেম। ভোট দিয়ে বের হওয়ার পর বলেন, ‘আমি শেখ মুজিবুর রহমানের আমল থেকে ভোট দেই।
জীবনে কোনোদিন এরকম ভোট দিতে গিয়ে ভয় পাইনি। এদিকে এই ভোটকেন্দ্রে নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক দুটি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। স্কুলের পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ কক্ষে পুরুষ ভোটার এবং নতুন ভবনে নারী ভোটারদের কেন্দ্র করা হয়। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ভোটের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নারী ভোটকেন্দ্রে দুই ঘণ্টায় ৬টি বুথে মোট ২১৫৭ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র ২১টি। পুরুষ ভোটকেন্দ্রে ২২২১ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে প্রায় ৯০টি। এই ভোটকেন্দ্রে আরেকটি বড় সমস্যা তৈরি হয় ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং। কিছু সময় পরপর লোডশেডিংয়ের কারণে অন্ধকার হয়ে পড়ে গোপন কক্ষ। এতে ভোট দিতে আসা ভোটাররা ক্ষুব্ধ হন এবং অস্বস্তি বোধ করেন।
এখানকার নারী ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার তানভির হোসেন বলেন, অনেকে ইভিএম পদ্ধতিতে অভ্যস্ত না। তাই কিছু সমস্যা হচ্ছে। দুই ঘণ্টায় আমার ভোটকেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২১টি। তবে সকাল থেকে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে কেন্দ্রের ভেতরে অন্ধকার হয়ে পড়ছে। এতে সমস্যা হচ্ছে। এদিকে বেলা আড়াইটার দিকে সিংগাইর পৌরসভার ৮৪ নং পশ্চিম গোবিন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে অনেকটাই নীরব। বিশাল একটি মাঠে সকাল থেকে সারাদিন ভোটারদের কোনো লাইন চোখে পড়েনি। ভোটার উপস্থিতি সকাল থেকেই কম। পুরুষ ও মহিলা মিলে ৮টি বুথে ৩১৯৬ ভোটের বিপরীতে আড়াইটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৩৯৬ ভোট বলে জানিয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ আলী। এলাকাবাসী জানান, এই কেন্দ্রটি মূলত বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। যার কারণে এখানকার মানুষজনের ভোটে অনীহা রয়েছে।