প্রথম পাতা
ফের প্রাণঘাতী সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি
স্টাফ রিপোর্টার
২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবারমতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিন আহমেদ (১৩)। পরিবারের সঙ্গেই রাজধানীর মুগদা এলাকায় থাকতো। তার বাবা মাসুম মিয়া এক সময় ব্যবসা করলেও এখন বেকার। মা গৃহবধূ। অভাব অনটনের সংসারে তারা পাঁচজন সদস্য। মা-বাবা ছাড়া দুই ভাই ও এক বোন। বড় ভাই এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পরিবারে অর্থের জোগান দিতে তেজগাঁওয়ের একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। আর ছোট বোন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মেধাবী শিক্ষার্থী মাহিনকে নিয়ে পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল।
মাহিনের ফুপাতো ভাবী আইরিন আক্তার বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তার মায়ের সঙ্গে ইফতার করেছে মাহিন। ইফতার করে মাকে বলেছে সে খেলাধুলা করে চাচার বাসায় গিয়ে রাতে থাকবে। এই কথা শুনে মা তাকে প্রথমে বাধা দিয়ে চাচার বাসায় না যেতে বলেন। কিন্তু মাহিনের বায়না মা ফেলতে পারেননি। তখন মা তাকে বলেন কিছু সময় খেলাধুলা করে চাচার বাসায় যেন চলে যায়। মায়ের এই কথা শুনে বাসা থেকে বের হয়ে যায় মাহিন। পরে রাতে মুগদা হাসপাতাল থেকে তার মায়ের মোবাইলে ফোন করে এক চিকিৎসক বলেন, আপনার ছেলে গুরুতর আহত এখুনি হাসপাতালে আসতে হবে। তখন তার মা-বাবাসহ অন্যরা হাসপাতালে যান। ততক্ষণে মাহিনকে এম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) উদ্দেশ্যে নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। পরে ঢামেকেই তার মৃত্যু হয়। পানি খেতে চেয়েছিল তার মায়ের কাছে। কিন্তু পানি খাওয়ানোর আগেই চলে যায় না ফেরার দেশে। তিনি বলেন, মুগদা হাসপাতালে যাওয়ার পরও মাহিনের সব কথা মনে ছিল। পথচারীরা তাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল। পরে চিকিৎসকরা তাকে জিজ্ঞাসা করেছেন তার বাড়ির কারও মোবাইল নম্বর বলতে পারবে কিনা। তখন মাহিন তার মায়ের মোবাইল নম্বর দিয়েছে। তার নাম, বয়সও বলেছে।
তার ফুপাতো ভাই শাকিল বলেন, সিটি করপোরেশনের যে গাড়িতে মাহিনকে ধাক্কা দিয়েছে ওই গাড়ির চালকের আসনে ছিল হেলপার রুবেল। সে নেশাগ্রস্ত ছিল। নেশার ঘুরে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল। মাহিনের বাবা বাদী হয়ে মুগদা থানায় মামলা করেছেন। আসামিকে ঘটনার সময়ই আটক করেছে পুলিশ। মাহিনের মা জোছনা আক্তার বলেন, আমাকে বলেছে খেলাধুলা করে চাচার বাসায় গিয়ে রাতে থেকে সকালে বাসায় ফিরবে। আমি মানা করেছিলাম। কিন্তু তবুও গেল। আর ফিরলো না। তিনি বলেন, ময়লার গাড়ি বেপরোয়াভাবে চালাচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, যে চালাচ্ছিল সে নেশাগ্রস্ত ছিল।
মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারিকুজ্জামান বলেন, মাহিন রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় সিটি করপোরেশনের গাড়িটি তাকে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতরভাবে আহত হয় মাহিন। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরপরই আমরা ঘাতক গাড়ি ও চালককে আটক করেছি। চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছি সে আসলে হেলপার। নিহতের বাবা যে মামলা করেছেন ওই মামলায় আসামি হিসেবে তার নাম উল্লেখ করেছেন। আমরা তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠাবো। আর ঢামেকে মাহিনের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।