ঢাকা, ৪ মে ২০২৪, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক

খেলাপি ঋণ কমানোর পদক্ষেপ জানতে চায় আইএমএফ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

(১ সপ্তাহ আগে) ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন

২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কি ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে  আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটি। এ ছাড়া অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে চলতি ও আগামী বাজেটে ব্যয় সংকোচন এবং ভর্তুকি কমিয়ে বাজেট ঘাটতি কম রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ব্যাংক খাত সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে। খাতটির টালমাটাল এই পরিস্থিতির মধ্যে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে আইএমএফ’র একটি প্রতিনিধি দল।

বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর গড় খেলাপি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কি ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফ।

ইতিমধ্যে আইএমএফ’র ৪.৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড়ে রিজার্ভের বেধে দেয়া লক্ষ্য পূরণে বারবার ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে সুদের হার বাস্তবায়ন, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা এবং বাজার ভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় চালু করার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।

আইএমএফ’র দেয়া গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলোই পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রা বিনিময়ে চাপিয়ে দেয়া দরের কারণেই দেশের আর্থিক হিসাব ঋণাত্মক ও রিজার্ভে পতন অব্যহত রয়েছে বলে মনে করে সংস্থাটি।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের বিদেশি বাণিজ্যের স্থিতিশীলতা, রিজার্ভ সংরক্ষণ ও খেলাপি ঋণ কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কি ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি বাজার ভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার ও সুদের হার বাস্তবায়নে কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মুদ্রা বিনিময় ও ক্রলিং পেগ বাস্তবায়ন নিয়ে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ায় ক্রলিং পেগ বাস্তবায়ন নিয়ে আপাতত কোনো পরামর্শ দেয়নি বাংলাদেশে অবস্থানরত আইএমএফের প্রতিনিধি দল।

বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আর্থিক খাত সংস্কার, খেলাপি ঋণ, সুদের হার বাস্তবায়ন, মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি, বিদেশি বাণিজ্যের ভারসাম্য ও আউটলুক, মুদ্রা বাজার ও তারল্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করেছে আইএমএফ।

তিনি আরও বলেন, আইএমএফের মিশনের সঙ্গে বুধবার বৈঠক শুরু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
এখন সংস্থাটি আমাদের কাছ থেকে বিশ্লেষণ করার জন্য তথ্যগুলো সংগ্রহ করছে। এরপর হয়তো বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দিবে।

খেলাপি ঋণ কমানোর পাশাপাশি দেশে স্মার্ট সুদের হার বাস্তবায়নের ফলে অর্থনীতিতে কি ধরনের প্রভাব পড়েছে সে বিষয়েও তথ্য চেয়েছে। এছাড়া বিদেশি বাণিজ্যের স্থিতিশীলতা, রিজার্ভ সংরক্ষণ, মুদ্রানীতি কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে সে সব বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে।

এদিকে বুধবার অর্থ বিভাগের বাজেট এবং ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠকে মূলত চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বাস্তবায়ন ও আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় শর্ত এবং  সার্বিক অর্থনীতির অন্যান্য ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। ঋণ কর্মসূচির অন্যতম শর্ত হচ্ছে চলতি অর্থবছরের পাশাপাশি আগামী অর্থবছরেও কর জিডিপির অনুপাত ০.৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। তবে সার্বিক বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় নির্বাচন থাকায় বাংলাদেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তৃতীয় কিস্তির জন্য গত ডিসেম্বরভিত্তিক রিজার্ভ ও কর আহরণের বেশকিছু লক্ষ্যমাত্রা কমাতে সম্মত হয় আইএমএফ। এর আলোকে বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড় মোটামুটি নিশ্চিত।

বৈঠকে উপস্থিত অর্থ বিভাগের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, শুধু আইএমএফের শর্ত পূরণই নয় দেশের সার্বিক উন্নয়নে রাজস্ব বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বিষয়টি নিয়ে অনেক বছর থেকে আলোচনা হলেও তেমন উন্নতি হয় নি। বরং ২০১৫ সালের তুলনায় কিছুটা কমে গত কয়েক বছর কর জিডিপির অনুপাত ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এ জন্য করনীতি এবং কর আহরণ কর্তৃপক্ষ আলাদা করার পুরানো আলোচনাও পুনরায় উঠে এসেছে। তিনি জানান, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আগামীতে সহজ শর্তের এবং কম সুদের বৈদেশিক ঋণ কমে যাবে। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর ঋণের সুদহার বেড়েছে। আগামী আরও বাড়বে। বাজেট সহায়তা নিলে বিভিন্ন ধরনের শর্ত বিষয় আসে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানো গেলে বাজেট সহায়তা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।

আইএমএফ গত বছরের ৩০শে জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে। ইতিমধ্যে দুই কিস্তিতে ১১৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার ছাড় করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মে মাস নাগাদ তৃতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ডলার ছাড় করা হতে পারে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে পুরো অর্থ দেয়ার কথা। এ ঋণ কর্মসূচির আওতায় বেশকিছু শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় কিস্তির জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত ৬টি পরিমাণগত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়া পাঁচটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে সরকার।
 

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status