ঢাকা, ৫ মে ২০২৪, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

উপজেলায় অংশগ্রহণ আরও কম

স্টাফ রিপোর্টার
২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার
mzamin

কয়েক বছর ধরে নির্বাচনে আগ্রহ হারাচ্ছেন ভোটাররা। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে টানতে ব্যর্থ হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন- এমন অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে দূরে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। গেল জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেয়নি বিএনপি-জামায়াতসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। বিভিন্ন কারণে কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশ নিলেও তাদের আশায়ও গুড়েবালি। নির্বাচনী ফলাফলে কেবল আওয়ামী লীগ ও তার স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরই জয়জয়কার। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও। যেখানে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের সংখ্যা হাতেগোনা। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য যারা প্রথম দফার নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে সেটিও কেবল ৩-৪টি করে উপজেলায়। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও নামমাত্র অংশ নিচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে।

বিজ্ঞাপন
দলটি প্রার্থী দিতে পেরেছে মাত্র ৩টি উপজেলায়। এমন অবস্থায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রয়েছে কেবল আওয়ামী লীগ। তাও দলীয় প্রতীক ছাড়া। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে মাঠ উন্মুক্ত করে দিয়েছে দলটি। কারণ নির্বাচন করছে না বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। তাই নিজেরা নিজেরাই নির্বাচনে লড়াইয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলে দলটির অন্তঃকোন্দল প্রকাশ্যে। সংঘাতের খবরও পাওয়া গেছে অনেক জায়গায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এমপি মন্ত্রীদের আত্মীয়স্বজনদের নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যেতে নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। যদিও মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় পার হওয়ার পরও এখনো অনেকে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। 

ক্ষমতাসীনরা দেড় দশক ধরে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বাংলাদেশ থেকে উচ্ছেদ করেছে এবং তাদের আমলে কখনোই জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি অভিযোগ করে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ১৬ই এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে ১৫ই এপ্রিল রাতে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের অধীনে সব জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দলের প্রার্থীদের নানাভাবে হামলা, মামলা ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেয়া এবং নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা ও শারীরিক আক্রমণসহ পথে পথে বাধা দেয়া হয়। অনেককেই মনোনয়নপত্র জমা দিতেও দেয়া হয়নি।

জাতীয় নির্বাচনের পর এবার উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করেছে জামায়াত, চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজিপি), খেলাফত মজলিস, ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জেএসডি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, গণফোরাম, জাগপা, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, জাতীয় পার্টি (জাফর), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এনডিএম, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। 

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এরমধ্যে চারটি উপজেলায় কোনো নির্বাচনেরই প্রয়োজন পড়ছে না। কারণ এসব উপজেলার সবক’টি পদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন প্রার্থীরা। সেগুলো হলো- বাগেরহাট সদর, মুন্সীগঞ্জ সদর, মাদারীপুরের শিবচরে ও ফেনীর পরশুরাম। আগামী ৮ই মে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম দফার নির্বাচনে ১৫০ উপজেলায় তিন পদে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৬৯৩ জন প্রার্থী। যদিও শুরুতে ১ হাজার ৮৯১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। মনোনয়ন যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাহার শেষে বর্তমানে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬০১ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৪৫ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৪৪৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।  

সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও নামমাত্র অংশ নিয়েছে নির্বাচনে। নির্বাচনের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। দলটির ভোট ব্যাংকও তলানিতে। সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর আরও কোণঠাসা দলটির অবস্থান। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে অর্থ নষ্ট করতে চাচ্ছেন না তৃণমূলের নেতারা। তারা আস্থা রাখতে পারছেন না নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর। নির্বাচনের জন্য মাত্র ৮টি ফরম বিক্রি করতে পেরেছে দলটি। জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু নির্বাচন কমিশনকে বলছেন দন্তহীন বাঘ। আবার নেতৃত্ব নিয়ে দলাদলি করলেও উপজেলা নির্বাচনে নেই রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিও। জাতীয় পার্টির দপ্তরের তথ্যানুযায়ী মাত্র ৮টি ফরম বিক্রি হয়েছে। ফরম বিক্রি হয়েছে রংপুরে ৩টি এবং দিনাজপুর, নরসিংদী, খাগড়াছড়ি সদর, বরিশাল সদর ও মুলাদীতে একটি করে। এরমধ্যে প্রথম দফার নির্বাচনে মাত্র তিনজনকে প্রার্থী করতে পেরেছে দলটি। কেন নির্বাচনে যাচ্ছেন না তারা? গাইবান্ধার জাতীয় পার্টির নেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, সারাজীবন দলের রাজনীতি করে আসছি। কিন্তু এখন জাতীয় পার্টির অবস্থান তলানিতে। একটা নির্বাচন করতে মিনিমাম একটা খরচ হয়ে থাকে। এই টাকাটাই পানিতে ফেলে দেয়া হবে। 

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, আমরা প্রথম দফার নির্বাচনে তিনটি উপজেলায় প্রার্থিতা ঘোষণা করেছি। তারা ৮ই মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আমাদের দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সামনের ধাপেও জাসদ দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করবে। প্রথম ধাপের নির্বাচনে যে তিনটি উপজেলায় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো হলো- শেরপুরের ঝিনাইগাতী, মানিকগঞ্জের ঘিওর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, আমরা আমাদের জোট নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থিতা ঘোষণা করিনি। কাউকে দলীয় প্রতীক দেয়া হয়নি। সবার জন্য নির্বাচনী মাঠ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। যে যেখানে ইচ্ছা নির্বাচনে লড়তে পারছেন। তিনি জানান, প্রথম ধাপের নির্বাচনে তার দল থেকে কেউ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন না। তবে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিভিন্ন উপজেলায় ২২ জন প্রার্থী রয়েছে। 

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা প্রার্থী দিয়েছি। প্রথম ধাপের নির্বাচনে আমরা ৪টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ঘোষণা করেছি। তারা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে লড়বেন। অন্য ধাপের নির্বাচনেও আমরা প্রার্থী ঘোষণা করবো। এদিকে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দল মেটাতে তৎপর আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। নির্বাচনকে এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাবমুক্ত রাখতে তাদের আত্মীয়স্বজনদের নির্বাচন না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে সে নির্দেশনা মানেনি অনেকে। গতকালও ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পার্টির যারা মন্ত্রী-এমপি পর্যায়ে আছেন তাদের জন্য নির্দেশনা রয়েছে, তাদের সন্তান ও স্বজনরা যেন উপজেলা নির্বাচনে না আসে। প্রথম পর্যায়ের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় চলে গেছে। কেউ কেউ বলেছেন আমরা বিষয়টি আরও আগে অবহিত হলে সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের সুবিধা হতো। তারপরেও প্রত্যাহার কেউ কেউ করেছেন, কেউ কেউ করেননি। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের যে সময়সীমা তারপরেও ইচ্ছা করলে করতে পারবেন। তিনি বলেন, দলীয় নির্দেশনা অমান্য করলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের ব্যাপারে চিন্তা করা হবে। সময়মতো এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই করা হবে।
 

পাঠকের মতামত

এই আওয়ামী মার্কা নির্বাচনে,যারা অন্য লেবাসে নির্বাচন করছেন তাদের দ্বারা জনগণের ভাগ্য তো দূরের কথা নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে কি না সন্দেহ আছে।

রায়হান
২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৭:২০ পূর্বাহ্ন

তামাসার নির্বাচন বর্জন করছে সবাই, তারপরও নির্বাচন হবেই। ধন্যবাদ।

SM. Rafiqul Islam
২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:২৮ অপরাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status