অর্থ-বাণিজ্য
বিদেশি বিনিয়োগ পেতে ঋণমান বাড়ানোর আহ্বান এফআইসিসিআইয়ের
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(১ মাস আগে) ১৩ মার্চ ২০২৪, বুধবার, ৬:৫৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন
কাঙ্ক্ষিত প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পেতে বাংলাদেশের ঋণমান বাড়াতে হবে। ঋণমান কম থাকার কারণে বিদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আস্থা হারায়। ঋণমান উন্নয়নে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বাণিজ্যনীতি আরও উন্মুক্ত হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া ব্যবসায় পরিবেশ উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে সংস্কার উদ্যোগ নেয়া এবং চলমান সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। সংস্কারে সহজ ব্যবসায় পরিবেশ দাঁড়ালে দুর্নীতিও কমবে।
বিনিয়োগ-সংক্রান্ত এক সেমিনারে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা। ‘বাংলাদেশে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুঘটক হিসেবে বিনিয়োগ নীতি কাঠামো শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে বিদেশি উদ্যোক্তাদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)। সোমবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে এ আয়োজন করা হয়।
বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন– এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং, জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) সভাপতি মায়ং হু লি, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ। এফআইসিসির পরিচালক এবং এইচএসবিসি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী মাহবুব উর রহমান সেমিনার সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন বলেন, বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য নিরাপদ মুনাফার সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারে বাংলাদেশ।
আলোচনায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং বলেন, কোনো দেশে বিনিয়োগ করার আগে উদ্যোক্তারা ওই দেশের ঋণমানের চিত্র আগে দেখেন। নিম্ন ঋণমানকে দুর্বলতা হিসেবে দেখে থাকেন তারা। এফডিআই পেতে বাংলাদেশের ঋণমান বাড়াতে হবে। ঋণমান উন্নয়নে অনুকূল পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তা জানাতে হবে। তিনি বলেন, ব্যবসায় পরিবেশ আরও বেশি উন্মুক্ত এবং সংস্কারমূলক হওয়া প্রয়োজন। দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এডিবির সদস্য সব দেশেই কিছু দুর্নীতি হয়ে থাকে। বিশেষ করে ক্রয় প্রক্রিয়াতেই দুর্নীতি বেশি হয়ে থাকে। ক্রয় প্রক্রিয়া এবং বিভিন্ন ধরনের সেবা ডিজিটালাইজ হলে দুর্নীতি কমবে।
প্রসঙ্গত, গত মে মাসে বাংলাদেশের ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে বিএ-৩ থেকে বিএ-১ এ নামিয়ে আনে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মুডিস। গত ১৫ ডিসেম্বর অন্য সংস্থা ফিচ রেটিংও ঋণমান নেতিবাচক বহাল রাখে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে তারা বাংলাদেশের ঋণমান ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’-এ নামিয়ে আনে।
এডিমন গিনটিং তাঁর প্রবন্ধে বিনিয়োগ পরিবেশের কিছু চ্যালেঞ্জের কথা তুলে আনেন। তিনি বলেন, ব্যবসা শুরু করতে ১৫০টি সেবা নিতে হয়, যা অনেক বেশি। আবার এসব সেবা পেতে সরকারি ২৩টি নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বারে যেতে হয় তাদের। বিশ্বব্যাংকের লজিস্টিকস সূচকে ১৩৮ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম। প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্যে পণ্য দ্রুত পৌঁছানোর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ পরিবহন খাতে অনেক দুর্বলতা রয়েছে।
দুর্নীতি প্রসঙ্গে জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) সভাপতি মায়ং হু লি বলেন, ব্যবসায় পরিবেশ উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত সেবাগুলো সহজ হলে দুর্নীতির সুযোগ কমে যাবে। তিনি বলেন, জাপানের উদ্যোক্তারা এ দেশে আরও বিনিয়োগ করতে চান।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, আধুনিক বাণিজ্য ব্যবস্থা সুসমন্বিত। অথচ বাংলাদেশের বাণিজ্যনীতি এখনও একলা চলোর মতো। যুগোপযোগী নীতিকৌশল নিতে হবে। আবার যে নীতিই নেয়া হয়, তা বাস্তবায়ন হয় না। এই দ্ুেয়র মধ্যে বড় ব্যবধান রয়েছে।
ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, গত চার বছরে এফডিআইর গড় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশেরও কম। মাত্র ০.৪৮ শতাংশ। অথচ আগামী ২০৩১ সালের মধ্যে এ হার ৩ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।
এফআইসিসিআইর সভাপতি জাভেদ আক্তার বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে নির্বিঘ্ন বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।