বিনোদন

অনুদানের ছবির হালচাল

কামরুজ্জামান মিলু

২০ জুলাই ২০১৬, বুধবার, ৮:৫২ পূর্বাহ্ন

সরকার চলচ্চিত্রকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিবছরই ছবি নির্মাণে নির্মাতাদের অনুদান দিচ্ছেন। তবে অনেক নির্মাতারই অভিযোগ, এক্ষেত্রে বাজেট ভালো না থাকায় তারা ছবির কাজ শেষ করতে পারছেন না। অনেকে আবার সুর পাল্টিয়ে বলছেন, যারা অনুদান পাচ্ছেন তারাও নিয়ম ভাঙছেন। অনুদানের নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করছেন না চলচ্চিত্রের শুটিং। প্রথম চেক পাবার নয় মাসের মধ্যে চলচ্চিত্রের নির্মাণকাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। এজন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনেক নির্মাতাকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। বিগত বছরের হিসাব অনুযায়ী, মুক্তি না পাওয়া অনুদানের চলচ্চিত্রের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। ২০১০-১১ অর্থবছরে অনুদানপ্রাপ্ত একটি ছবি ফারুক হোসেনের পরিচালনায় ‘কাকতাড়ুয়া’। শিশুতোষ গল্প নিয়ে নির্মিত এ ছবিতে অভিনয় করেছেন শাহনূর, জয় চৌধুরী, আমান রেজা, আহমেদ শরীফ প্রমুখ। এ ছবির কাজ কয়েক বছর আগে শেষ হলেও এখনও সেন্সর বোর্ডে ছবিটি জমা পড়েনি। এ প্রসঙ্গে ছবির পরিচালক ফারুক হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ছবিটির কাজ অনেক আগেই শেষ করেছি। আর মন্ত্রণালয় ছবিটি দেখেছে। তবে নানা কারণে তা সেন্সরে এখনও জমা দেয়া হয়নি। গতকাল মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে ফোন করা হয়েছিল। আমি বলেছি শিগগিরই ছবিটি সেন্সরে জমা দেবো। ৯০ মিনিটের বেশি সময় নিয়ে করা এ ছবিটি দর্শকরা পছন্দ করবেন বলে আশা করছি। এদিকে ২০১১-১২ অর্থবছরে মারুফ হাসান আরমানের ‘নেকড়ে অরণ্য’, সৈয়দ সালাউদ্দীন জাকীর ‘একা একা’ ছবি দুটিও অনুদান পায়। এর মধ্যে ‘নেকড়ে অরণ্য’র পরিচালক ছবির কাজ এখনও শুরু করেননি। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে সৈয়দ সালাউদ্দীন জাকীর পরিচালনায় নির্মাণাধীন ‘একা একা’ ছবিটি নিয়ে তিনি বলেন, এ ছবির কাজ এখনও বাকি রয়েছে। আমি অসুস্থ থাকায় ছবিটি শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে। আমাকে যদি আরো কিছুদিন সময় দেয়া হয় তাহলে ছবিটির কাজ আমি শেষ করতে চাই। আর শরীরের অবস্থা না ভালো হলে ছবিটি আর আমার শেষ করা হবে না। তবে ছবিটি শেষ করার ইচ্ছা রয়েছে আমার। এছাড়া নারগিস আক্তারের ‘যৈবতী কন্যার মন’, আকরাম খানের ‘খাঁচা’, টোকন ঠাকুরের ‘কাঁটা’ ছবিগুলোও ২০১২-১৩ অর্থবছরের সরকারি অনুদানের ছবি। এ ছবিগুলোর কাজ সঠিক সময়ে নির্মাণ শেষ করে মন্ত্রণালয়ে জমা না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে এ ছবিগুলোর মধ্যে আকরাম খানের ‘খাঁচা’র কাজটি সম্প্রতি শেষ হয়েছে বলে মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছেন নির্মাতা। আকরাম খান বলেন, এরই মধ্যে আমি ‘খাঁচা’ ছবির ডাবিংসহ সকল কাজ শেষ এবং মন্ত্রণালয়ে দেখানোর জন্য আবেদনও করেছি। আশা করছি এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় আমার ছবিটি দেখবে। আর আমি মন্ত্রণালয় থেকে ছবিটি নিয়ে অভিযোগনামা বা কোনো চিঠি এখনও পাইনি। ‘খাঁচা’ ছবিতে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, আজাদ আবুল কালাম ও মামুনুর রশীদ। আশা করছি ছবিটি খুব দ্রুত দর্শকরা দেখতে পাবেন। এদিকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘লাল সবুজের সুর’, ড্যানি সিডাকের ‘কাঁসার থালায় রুপালি চাঁদ’, ড. সাজেদুল আওয়ালের ‘ছিটকিনি’ ও জানেসার ওসমানের ‘পঞ্চসঙ্গী’সহ অনেক ছবির কাজ এখনও শেষ হয়নি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নূরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’, মাহমুদ দিদারের ‘বিউটি সার্কাস’, এন রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতীর কথা’, ফাখরুল আরেফীনের ‘ভুবন মাঝি’, মাসুদ পথিকের ‘মায়া-দ্য লস্ট মাদার’ ও শামীম আখতারের ‘রীনা ব্রাউন’- এ ছয়টি চলচ্চিত্রকে অনুদান দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে তিনটি চলচ্চিত্রের। ২০১০-১১ অর্থবছরের পর ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় একটি অনুদান ছবির বাজেট ১৯ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ লাখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকা এফডিসির কারিগরি সহায়তার জন্য প্রদান করা হয়। বর্তমানে এই বাজেট বাড়িয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে একটি ছবি নির্মাণের জন্য সর্বমোট ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছে সরকার। তবে অনুদান পাওয়া অনেক নির্মাতার সঙ্গে কথা হলে তারা অভিযোগের সুর তুলে বলেন, অনুদানের জন্য যে অর্থ দেয়া হয় সেটা একটি ছবির জন্য যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি এফডিসি থেকে যে কারিগরি সুবিধা দেয়ার কথা থাকে বেশিরভাগ সময় সেই সুবিধা পাওয়া যায় না। ফলে ছবি নির্মাণ কিছুটা হলেও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আবার তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সঠিক সময়ে ছবির কাজ শেষ না করে অনেক নির্মাতা অনুদানের টাকা ছবিতে খরচ না করে ব্যক্তিগত কাজে শেষ করে ফেলছেন। তাই অনুদানের ছবি নিয়ে প্রতিবছরই চলছে ‘নয়-ছয়’। অনেকে ছবির কাজ শুরু করলেও শেষ করতে পারছেন না। আবার অনেকে অনুদানের টাকা পেলেও ছবির কাজে হাতই দিচ্ছেন না। ফলে শেষ হয়ে যাচ্ছে ছবি নির্মাণ ও জমা দেয়ার নির্ধারিত সময়। তাই শেষ না হয়ে শুধু আটকা পড়ছে একের পর এক সরকারি অনুদানের ছবি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status