শেষের পাতা
সিলেট নগরে ‘কিশোর গ্যাং’ দ্বন্দ্বে খুন আলী
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৬ মে ২০২৪, সোমবারআধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল সিলেট নগরের ছড়ারপাড় ও কামালগড়ের কিশোর গ্যাংয়ের। এলাকায় মহড়া-পাল্টা মহড়া হয়েছে। এ নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হয়েছে কিশোর মো. আলী নিশো। ঘরে ভাত খাওয়া থেকে ডেকে নিয়ে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর সিলেটের পুলিশ আসামি গ্রেপ্তারে নামে। ইতিমধ্যে একে একে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা ৪ জনই কিশোর। গতকাল সন্ধ্যায় কোতোয়ালি পুলিশ তাদের আদালতে প্রেরণ করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, আদালতে তাদের স্বীকারোক্তি প্রদানের কথা রয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার জামলাবাজ গ্রামের চাঁন মিয়ার পুত্র ফরহাদ মিয়া, কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার মজলিশপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেল নূরনবী নুনু ও একই থানার নোয়াহাটা গ্রামের নুর জামাল মিয়ার ছেলে রাহিম আহমদ এবং হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানার বগি গ্রামের জাকারিয়া মিয়ার ছেলে সাকিব আহমদ তারা বর্তমানে সবাই ছড়ারপাড়ের বিভিন্ন কলোনিতে থাকেন। এদের মধ্যে ফরহাদ এ মামলার মূল আসামি। শনিবার রাত ১১টার দিকে বানিয়াচং থানাধীন দত্তগ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি গতকাল বিকালে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। খুন হওয়া কিশোর মো. আলী নিশোা কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুরের নূর আলীর ছেলে। পরিবারের সঙ্গে সে সিলেট মহানগরের ছড়ারপাড়ের একটি কলোনিতে বসবাস করতো। নিহতের পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জন্মদিনের কেক কাটার কথা বলে তিনজন বন্ধু মো. আলীকে চালিবন্দরের পার্শ্ববর্তী মাছিমপুর ডেকে নেয়। এ সময় আলী ভাত খাচ্ছিল। আলীকে সেখানে যাওয়ার পর তার উপর ছুরি দিয়ে হামলা চালানো হয়। এ সময় মো. আলী দৌড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালায়। চালিবন্দর ভৈরব মন্দির সংলগ্ন এলাকায় আসার পর সে পড়ে গেলে তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- সিলেট নগরীর ছড়ারপাড় ও কামালগড় এলাকার দুটি কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। ওই দ্বন্দ্বের জের ধরে খুন হয় মো. আলী। ঘটনার পরদিন আলীর মা সফিনা খাতুন বাদী হয়ে ১১ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জনকে আসামি করে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এসএমপি’র মিডিয়া অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারের পর প্রধান আসামি ফরহাদের দেয়া তথ্যমতে চালিবন্দরস্থ একটি গ্যারেজের পিছনে ময়লা ফেলার স্থান হতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাকু উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত ছিল বেশি। কলোনিকেন্দ্রিক কিশোররা এলাকায় আড্ডা দিতো। এ নিয়ে এলাকার লোকজন ছিলেন ত্যক্ত বিরক্ত। গত কয়েক মাসে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা কিশোররা নিজেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। কেউ কেউ অপরাধে সম্পৃক্ত ছিল। মাদকসহ নানা ঘটনায় জড়িত কিশোররা জড়িত থাকায় মুলত আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তারা রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া ছিল। ঘটনার পর থেকে এলাকায় স্বস্তি ফিরেছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানান তারা।