ঢাকা, ৫ মে ২০২৪, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

দাবদাহে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে চায়ের কুঁড়ি

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

এখন পাতা তোলার মৌসুম। বাগানিরা অপেক্ষায় থাকেন এই সময়ের জন্য। কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহে দিচ্ছে ভিন্ন বার্তা। টানা খরার কারণে চায়ের বাগানে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাতা সংগ্রহের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। একদিকে যেমন চায়ের বাগানে নানা রোগ-ব্যাধি দেখা দিচ্ছে; তেমনি শ্রমিকরাও নিরবচ্ছিন্ন কাজ করতে পারছেন না। ফলে পাতা সংগ্রহের পাশাপাশি সিলেট অঞ্চলের অন্তত ১৩৫টি চা বাগানে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারাপুর চা বাগান। গতকাল দুপুরে এ বাগানে গিয়ে দেখা গেল বেশির ভাগ এলাকায় শ্রমিকরা নেই। পাতা তোলার মৌসুম থাকলেও সব শ্রমিক কাজে নামেননি এর কারণ কী প্রশ্ন করা হলে বাগানের সর্দার মিন্টু সর্দার মানবজমিনকে জানিয়েছেন তীব্র গরমের কারণে বিশেষ করে মহিলা শ্রমিকরা সব সময় কাজ করতে পারছেন না। গরমে চায়ের পাতা বেঁকে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও কালো হয়ে যাচ্ছে। এতে পাতা উত্তোলনে সমস্যা হচ্ছে। এরপরও প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন- প্রতিদিন ২৪ কেজি চা পাতা সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু পাতা কমে যাওয়ার কারণে সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। বাগানের ম্যানেজার মিন্টু চক্রবর্তী বাগানের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখান। এতে দেখা গেছে; চা পাতা উৎপাদনের জন্য কুঁড়িই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমিকরা কুঁড়িকেই সবচেয়ে বেশি যত্ন করেন। বাগান সংশ্লিষ্টরা সেটিতেও বেশি গুরুত্ব দেন। কিন্তু চায়ের কুঁড়িতে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো কুঁড়ি লাল হয়ে যাচ্ছে। আবার কুঁড়ির পাতায় নানা পোকা আক্রমণ করেছে। চা বাগানের শেড প্রয়োজন। কিন্তু প্রায় বাগানেই পর্যাপ্ত শেড নেই। ম্যানেজার মিন্টু চক্রবর্তী জানালেন- এই মৌসুমটি হচ্ছে পাতা সংগ্রহের মৌসুম। কিন্তু সেভাবে পাতা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। আর কুঁড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পরিমাণ কুঁড়ি বৃদ্ধি পেতো। কিন্তু সেটি এখন এক ইঞ্চি পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তীব্র গরমে চায়ের বাগানে এই প্রভাব পড়ছে। সিলেটে রয়েছে প্রায় ২২টি চা বাগান। প্রতিটি বাগানের দৃশ্যপট একই। বাগান নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা। সরকার থেকে এ ব্যাপারে পরামর্শ দিলেও কার্যত কোনো সহযোগিতা নেই। সিলেট ছাড়াও মৌলভীবাজার জেলা হচ্ছে চায়ের জন্য বিখ্যাত। এ জেলার চা উৎপাদন নিয়ে বাগান মালিকরা বিপাকে রয়েছেন। ৯২টি বাগানের বেশির ভাগ বাগানেই এখন কুঁড়ি বৃদ্ধি সহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাগান মালিক ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন- কুঁড়ি বৃদ্ধি ছাড়াও বাগানের কুঁড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি মশার আক্রমণ ও রেড স্প্রাইডারে আক্রান্ত হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য বৃষ্টির অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে যে বৃষ্টি হয়েছে সেটি বাগানের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পক্ষে যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট শাখার চেয়ারম্যান গোলাম মো. শিবলি জানিয়েছেন- বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গরম কমলে এবং বৃষ্টি হলে হয়তো ক্ষতি কম হবে। এর বাইরে যেসব বাগানে কৃত্রিম ভাবে সেচ ব্যবস্থা চালু আছে সেখানে সেচ দিলে ক্ষতি কিছুটা কমানো সম্ভব। এ জন্য বাগান মালিকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে বলে জানান তিনি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- চলমান দাবদাহ চায়ের জন্য ক্ষতিকর। চা গাছের জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রয়োজন। যেমন, ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পর্যন্ত চা গাছ ভালো উৎপাদন দিতে সক্ষম। ৩০-৩৩ বা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে উৎপাদন মাঝারি হয়। কিন্তু তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে চা গাছের উৎপাদন একদম কমে যায়। এতে চায়ের উৎপাদন ব্যাহত হয়। শ্রীমঙ্গল চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- তীব্র খরা থেকে চা পাতা কুঁড়িকে রক্ষা করতে হলে এই অবস্থায় কিছু কৃত্রিম পদ্ধতি ব্যবহার প্রয়োজন। এ জন্য বাগান মালিক ও শ্রমিকরা চা গাছের মধ্যখানে পচা গোবরের সঙ্গে কিছু টিএসপি মিশিয়ে দিলে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমে আসবে। এ পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে মালিক ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন- চা বাগানের আয়তন বিশাল। বৃষ্টি ছাড়া যেকোনো পদ্ধতিই ব্যবহার করা বাগান কর্তৃপক্ষের জন্য কষ্টকর। আর এজন্য প্রস্তুতি নিতে সময় লাগে। ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা সম্ভব হবে না। 

পাঠকের মতামত

ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি উত্তলোন করে পানি স্প্রে করছেনা কেন এখন প্রযুক্তি অনেক আধুনিক।

মিলন আজাদ
২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১:৫১ অপরাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2022
All rights reserved www.mzamin.com