নির্বাচিত কলাম
হালফিল বৃত্তান্ত
প্রতিবাদ এখন কেবলই স্মৃতি!
ড. মাহফুজ পারভেজ
২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবারঅন্যায় ও অসঙ্গতির প্রতিবাদ করা মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। এটাই মানুষের কর্তব্য। কিন্তু এই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করাও সম্ভব হচ্ছে না অনেকের পক্ষে। কেন পালন করা সম্ভব হচ্ছে না? কেউ বলবেন ভয়ে। কেউ বলবেন গা বাঁচানোর কারণে। কেউ কেউ রাজনৈতিক কারণকেও হাজির করবেন। আসলে সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে, নৈতিক শিক্ষা ও মানসিক শক্তির অভাব। এগুলো না থাকায় প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের পথে চলা সম্ভব হয় না অনেকের পক্ষেই। কারণ, পারিবারিক শিক্ষা তাদের আত্মকেন্দ্রিক, আত্মস্বার্থপর ও আত্মমুখী করেছে। সমাজ ও সমাজের অপরাপর মানুষের সমস্যা ও অসঙ্গতি নিয়ে তাকে ভাবতে ও সক্রিয় হওয়ার শিক্ষা দেয়া হয়নি পারিবারিক ও নৈতিক শিক্ষার মতোই ধর্মীয় শিক্ষার অভাবও প্রকট। যে কারণে, ভেজাল, মজুতদারি, মূল্যবৃদ্ধি চলছে লাগামহীনভাবে। এসব অসঙ্গতি নৈতিক দিক দিয়ে তো বটেই, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও চরমভাবে অগ্রহণযোগ্য। তথাপি দেখা যায় যে, অনেকেই সমস্যা বা অসঙ্গতির নীরব দর্শক হয়ে আছে। তা নির্মূলে বা প্রতিকারের জন্য কোনো ভূমিকা রাখছে না কিংবা রাখার চেষ্টাও করছে না। অন্যায়ের মোকাবিলায় ধর্ম এমন নীরব ভূমিকা সমর্থন করে না। বরং নিজ সাধ্য ও সামর্থ্যরে আলোকে অন্যায়-অপরাধের প্রতিবাদ করা ও তা নির্মূলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা একজন ধর্মনিষ্ঠ মানুষের প্রতি তার ধর্মের অপরিহার্য দাবি। বাস্তবে কিন্তু নীতি, নৈতিকতা, ধর্মের এইসব জরুরি দাবি মেনে অন্যায় ও অসঙ্গতির প্রতিবাদে কেউই এগিয়ে আসছেন না। যথাসময়ে ও যথেষ্ট সাহস আর শক্তির সঙ্গে যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা না হয়, তাহলে অন্যায়ের বাড়-বাড়ন্তই হয়, যার প্রতিফল শুধু একজন ব্যক্তি-মানুষই নয়, গোটা জাতিকে ভোগ করতে হয়
মানুষের ইতিহাসের প্রতিবাদ, বিদ্রোহ, বিপ্লব নামক গৌরবদীপ্ত ঘটনাগুলো স্মৃতি হয়ে মিউজিয়ামে চলে গেছে। সম্মিলিত গণআন্দোলন, অসহযোগ, দাবি আদায়ের সংগ্রাম এখন ইতিহাসের অংশ। সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চেয়ে যে মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়ে আন্দোলন করেছে, তারা এখন নিস্পৃহ, নির্লিপ্ত, ভীত ও উদ্যমহীন।
রাজনীতির বাইরেও বিভিন্ন আর্থসামাজিক অসঙ্গতির কারণে আন্দোলনের ধারা বিশ্বের সর্বত্র বিরাজমান ছিল বিগত ষাট, সত্তর, আশি দশকে। তখন, সম্ভবত ‘আমার ভালো অন্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত‘- এই চেতনার জাগরণে মনুষ্যত্বের উত্তরণ ঘটেছিল। আর তাতেই যারা নিয়মিত অন্যায় করে চলেছিল, যারা অবিচারকে নিয়মে পরিণত করেছিল, তাদের থামিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছিল। ঐতিহাসিকভাবেই তাই সামাজিক ন্যায়পরায়ণতার জন্য আন্দোলন, প্রতিবাদ অত্যন্ত জরুরি বলে বিবেচিত। প্রতিবাদ-আন্দোলন সেই কারণে ছিল গুরুত্বপূর্ণ, যা শিরদাঁড়া সোজা করে বেঁচে থাকার শক্তি দিয়েছিল সমাজবদ্ধ মানুষদের।
কিন্তু সমসাময়িক পৃথিবী বড্ড আত্মকেন্দ্রিক। ‘আমি আর আমার পরিবার’- এর বাইরে ভাবতে ভুলে যাচ্ছে মানুষ। বাবা-মায়েরা চান, তাদের সন্তানেরা চাকরি করুক। নিরাপদ ও সুখী থাকুক। ফলে নাগরিক সমাজ দিনে দিনে প্রতিবাদহীন ও নিরুত্তাপ হয়ে গিয়েছে। সমাজের এই নিস্পৃহ রূপ ক্রমশ সামাজিক ব্যাধির আকার নিচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকটি ঘটনা ছাড়া স্বতঃস্ফূর্ত জন-আন্দোলন যা গোটা দেশকে আলোড়িত করেছিল, তেমন ঘটনা সাম্প্রতিক কালে বিশেষ ঘটেনি। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ মানুষ যেন ভুলে গেছে। আর এতেই সমাজে অন্যায়কারীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
সভ্যতার ইতিহাসে মানুষ জোট বেঁধেছিল নিজেদের স্বার্থে। নিজেদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভালোর জন্য বৃহত্তর সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বাঁচতে চেয়েছিল মানুষ। সমাজকে কলুষমুক্ত করতে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করেছিল। এভাবেই, মানুষ একে অন্যকে জড়িয়ে সংঘবদ্ধ থেকে সমাজকে অন্যায়মুক্ত করেছে।
অতীতের এই গৌরবময় চিত্রের বিপরীতে আজকাল দৈনন্দিন জীবনের নানাবিধ অসঙ্গতি ও সমস্যা নিয়ে কেউ কথাই বলতে চায় না। কথা বলার বিপদ অনেক। ঝুঁকি নিতে চায় না কেউই। ‘যা চলছে চলুক’, নীতিতে সব অসঙ্গতি ও অন্যায় সহ্য করছে মানুষ। সম্ভবত, প্রতিবাদ না করে মুখ বুজে থাকতেই আমজনতা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে এবং নিরাপদ বোধ করছে। এই নিষ্ক্রিয়তার ফলাফল হচ্ছে ভীষণ মারাত্মক। ‘প্রতিবাদহীন’ থাকায় সমস্যা ও অসঙ্গতি সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো আমাদের কাঁধে সওয়ার হয়ে আছে। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের পথে না চলায় কোনো প্রতিকারই আসছে না। প্রতিনিয়ত সমস্যা ও অসঙ্গতির পাকচক্রে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হচ্ছে প্রতিবাদহীন মানুষ।
প্রতিবাদ ও সমালোচনা না করায় মানুষ ভোঁতা ও ভাবলেশহীন হয়ে পড়ছে। মানুষের পাতলা চামড়া হয়ে গেছে মোটা, অসংবেদনশীল ও স্পর্শকাতরহীন। তাই, প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ, মানুষ হাসিমুখে সহ্য করছে দৈনন্দিন জীবনে অসঙ্গতি ও সমস্যা সৃষ্টিকারী কথা ও কার্যক্রম। কেউ কটু কথা বলছে। অশ্লীলতা করছে। দাপট দেখিয়ে সন্ত্রাস করছে। একে মারছে। ওকে ধরছে। কাউকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছামতো দাম বাড়ানো হচ্ছে। পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে সিন্ডিকেট। খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে। রেপ করছে কোনো অবলা নারী বা তরুণীকে। অপহরণ করছে কাউকে। মুক্তিপণ নিচ্ছে। পাহাড় কেটে ফেলছে। নদী দখল করে নিচ্ছে। চতুর্দিক থেকে ভীতি ও আতঙ্কের দানব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সহ-নাগরিক ও প্রতিবেশীদের জীবন ও বসবাস বিপন্ন করছে। করুক। কুছ পরোয়া নেহি। আমার কিছু না হলেই হলো।
এহেন মানসিকতার কারণে, একটি বা দুইটি বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদ হলেও বৃহত্তর সামাজিক প্রতিরোধ হচ্ছে না। জগন্নাথে একটি ছাত্রীকে তীব্রভাবে জর্জরিত করতে করতে আত্মহত্যার পথে মরতে বাধ্য করা হলে বা জাহাঙ্গীরনগর বা অন্য ক্যাম্পাসগুলোতে যৌন লোলুপতা ছড়িয়ে গেলেও মানুষ ক্ষোভে-প্রতিবাদে ফেটে পড়ছে না। দল-মত-ধর্ম-বর্ণ-বিশ্বাস-মতাদর্শ নির্বিশেষে অসঙ্গতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদে এককাতারে শামিল হয়ে মাঠে নেমে আসছে না। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ না থাকায়, এইসব জান্তব সামাজিক সমস্যা ও পাশবিক অসঙ্গতিই শক্তিশালী হচ্ছে এবং থাকছে প্রতিকারহীন।
ব্যক্তিগত ও সামাজিক প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মতোই বুদ্ধিজীবী ও গণমাধ্যমের তরফে শক্তিশালী উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। একটি-দুইটি ব্যতিক্রম থাকলেও সামগ্রিকভাবে এমন কোনো পদক্ষেপ বুদ্ধিজীবী ও গণমাধ্যমের পক্ষেও নেয়া সম্ভব হচ্ছে না, যাতে সমস্যা ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সংবেদনশীলতা তৈরি হয়, মজবুত জনমত গড়ে ওঠে এবং যার পটভূমিতে বড় পরিসরে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ সঞ্চারিত হয়।
কেন প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ সঞ্চারিত হচ্ছে না, সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যে প্রশ্নের সঙ্গে সামাজিক অসঙ্গতির চেয়ে বেশি সম্পর্ক অর্থনীতি ও রাজনীতির। করপোরেট অনুগত এবং রাজনৈতিক আজ্ঞাবাহী কিসিমের বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া সামাজিক সমস্যা ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো ও প্রতিরোধের ডাক দেয়া শক্তি বা সাহস, কোনোটিই রাখে না। বাস্তবতা আসলে এমনই।
অথচ সামরিক শাসনের মতো কঠিন পরিস্থিতিতেও বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া প্রতিবাদমুখর ভূমিকা পালনে দ্বিধান্বিত ছিল না। নিয়মের চাপে নাম প্রকাশ করা সম্ভব না হলেও ‘পদাতিক’, ‘নাগরিক’, ‘সুপান্থ’ ছদ্মনামে নির্মল সেন, আহমেদ হুমায়ুন সামাজিক অসঙ্গতি ও সমস্যার বিরুদ্ধে তীব্র কষাঘাত হেনেছেন। রণবী ‘টোকাই’ চরিত্র অন্যায়, অসাম্য, অসঙ্গতির প্রতিবাদ করেছে। এইসব প্রতিবাদের সূত্রে অসঙ্গতির বিরুদ্ধে জনমতের সৃষ্টি হয়েছে। কর্তৃপক্ষ প্রতিকার করতে নৈতিক দায় ও বাধ্যবাদকতা অনুভব করেছে। অনেক ইতিবাচক পরিবর্তনও হয়েছে অতীতে। অনেক অসঙ্গতির অবসান করাও সম্ভব হয়েছে।
বর্তমানে তেমন কোনো প্রতিবাদই হচ্ছে না মারাত্মক সামাজিক ও নাগরিক সমস্যা ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে। বিভিন্ন পর্যায় থেকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ না থাকায় সংশ্লিষ্টরা প্রতিকারের চাপ অনুভব করে না। বরং অন্যায়কারীর পাল্লা ভারী হওয়ায় তাদের দিকেই ঝুঁকে যাচ্ছে অধিকাংশ। ফলস্বরূপ, অসঙ্গতি ও সমস্যা বাড়তে বাড়তে কিশোর গ্যাং তাণ্ডব চালাচ্ছে। মাদকচক্রের মৃত্যুকূপ তৈরি হচ্ছে। এমনকি, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন ও নেতিবাচক চাপ দিয়ে অনেক তরুণ-তরুণীকে মানসিকভাবে আহত এবং আত্মহত্যায় বাধ্য করাও সম্ভব হচ্ছে। মোদ্দা কথায়, ব্যক্তি বা সমাজ বা বুদ্ধিজীবী বা গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ না থাকায় সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকেও প্রতিকারের দৃঢ় পদক্ষেপ আশা করা সম্ভব হচ্ছে না।
অথচ অন্যায় ও অসঙ্গতির প্রতিবাদ করা মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। এটাই মানুষের কর্তব্য। কিন্তু এই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করাও সম্ভব হচ্ছে না অনেকের পক্ষে। কেন পালন করা সম্ভব হচ্ছে না? কেউ বলবেন ভয়ে। কেউ বলবেন গা বাঁচানোর কারণে। কেউ কেউ রাজনৈতিক কারণকেও হাজির করবেন। আসলে সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে, নৈতিক শিক্ষা ও মানসিক শক্তির অভাব। এগুলো না থাকায় প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের পথে চলা সম্ভব হয় না অনেকের পক্ষেই। কারণ, পারিবারিক শিক্ষা তাদের আত্মকেন্দ্রিক, আত্মস্বার্থপর ও আত্মমুখী করেছে। সমাজ ও সমাজের অপরাপর মানুষের সমস্যা ও অসঙ্গতি নিয়ে তাকে ভাবতে ও সক্রিয় হওয়ার শিক্ষা দেয়া হয়নি।
পারিবারিক ও নৈতিক শিক্ষার মতোই ধর্মীয় শিক্ষার অভাবও প্রকট। যে কারণে, ভেজাল, মজুতদারি, মূল্যবৃদ্ধি চলছে লাগামহীনভাবে। এসব অসঙ্গতি নৈতিক দিক দিয়ে তো বটেই, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও চরমভাবে অগ্রহণযোগ্য। তথাপি দেখা যায় যে, অনেকেই সমস্যা বা অসঙ্গতির নীরব দর্শক হয়ে আছে। তা নির্মূলে বা প্রতিকারের জন্য কোনো ভূমিকা রাখছে না কিংবা রাখার চেষ্টাও করছে না। অন্যায়ের মোকাবিলায় ধর্ম এমন নীরব ভূমিকা সমর্থন করে না। বরং নিজ সাধ্য ও সামর্থ্যরে আলোকে অন্যায়-অপরাধের প্রতিবাদ করা ও তা নির্মূলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা একজন ধর্মনিষ্ঠ মানুষের প্রতি তার ধর্মের অপরিহার্য দাবি। বাস্তবে কিন্তু নীতি, নৈতিকতা, ধর্মের এইসব জরুরি দাবি মেনে অন্যায় ও অসঙ্গতির প্রতিবাদে কেউই এগিয়ে আসছেন না।
যথাসময়ে ও যথেষ্ট সাহস আর শক্তির সঙ্গে যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা না হয়, তাহলে অন্যায়ের বাড়-বাড়ন্তই হয়, যার প্রতিফল শুধু একজন ব্যক্তি-মানুষই নয়, গোটা জাতিকে ভোগ করতে হয়। আর প্রতিবাদহীন হওয়ার অপরাধে, প্রতিকারহীন অবস্থায় থাকতে হয় পুরো সমাজব্যবস্থাকে। আমজনতাকে অসঙ্গতি ও সমস্যায় হাবুডুবু খেতে হয় প্রতিনিয়ত। ফলে এখন চলছে ‘প্রতিবাদহীন’ থাকার শাস্তির কাল, যা আরও অন্যায় ও অসঙ্গতির মাধ্যমে আমাদেরকে নিত্য ঘিরে ধরছে।
লেখক: প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওন্যাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।