প্রথম পাতা

‘ভাড়ায়’ চরিত্র হনন করে ওরা

স্টাফ রিপোর্টার

২০ এপ্রিল ২০১৯, শনিবার, ৯:৫০ পূর্বাহ্ন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন জনের কুৎসা রটানো তাদের কাজ। অচেনা, অজানা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে যেকোনো ধরনের অপপ্রচার করে চক্রটি। ফেসবুকে নামে-বেনামে একাধিক পেইজ, গ্রুপ রয়েছে তাদের। কুৎসা রটাতে, ভুয়া সংবাদ ভাইরাল করতে ব্যবহার করা হয় এসব। এই চক্রের দুই জনকে গ্রেপ্তারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে সিটিটিসি’র সাইবার ক্রাইম ডিভিশন। এমনকি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিও দিয়েছে গ্রেপ্তারকৃতরা।

রাজধানীর রামপুরা এলাকার শাম্মি আক্তার সীমা নামের এক নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে নামে সিটিটিসি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তদন্তে পাওয়া যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইউটিউব ও বিভিন্ন  অপরিচিত পোর্টালে ওই নারীকে নিয়ে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করেছে চক্রটি। গ্রেপ্তারের পর তারা জানায়, অর্থের বিনিময়ে ওই নারীকে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও দেহব্যবসায়ী সাজিয়ে অপপ্রচার করছিলো তারা। এতে আরও বেশ কয়েক জনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে মুখ খুলেছে। যদিও বাস্তবে ওই নারী সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতো না তারা। গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, শুধু শাম্মি না, এরকম আরও অনেক মানুষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় এভাবেই অপপ্রচার করেছে তারা। খিলগাঁও এলাকায় রয়েছে তাদের এ সংক্রান্ত অফিস। নিজেদের অনলাইন এক্টিভিস্ট, ইউটিউবার, সাংবাদিকসহ নানা পরিচয়ে পরিচয় দেয় তারা।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তিরা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। অনেক সময় সরাসরি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, আবার অনেক সময় বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে তাদের এই ধরণের অপকর্ম করার দায়িত্ব দেয়া হয়। ব্যক্তির আর্থিক অবস্থা ও কাজের ধরণ বুঝেই টাকা আদায় করা হতো। কখনও কখনও ভিত্তিহীন সংবাদ, ভিডিও তৈরি করে তা বুস্ট করে লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। এই চক্রের অপকর্মের শিকার শাম্মি আক্তার সীমা। গত বছরের ঘটনা।

তিনি জানান, হঠাৎ করেই বিভিন্নস্থান থেকে আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত জনরা তাকে ফোন করে জানান সংবাদটি। শোনার পর তিনি যেন আকাশ থেকে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গিয়ে দেখেন তার ছবি দিয়ে ভিত্তিহীন সংবাদ ভাইরাল হয়ে গেছে। তারপর দীর্ঘদিন তিনি বাসার বাইরে বের হননি। তার স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়েও গৃহবন্দি ছিলো। লজ্জ্বায় বের হতো না তারা। বাইরে বের হলে, কারও সঙ্গে দেখা হলেই নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হতো। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণেই একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। তার ধারণা ওই পক্ষই অর্থের বিনিময়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নামে। একের পর এক ফেসবুকে, ইউটিউবে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছিলো।

ফেসুবুকের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছিলো, তিনি মাদক ও অনৈতিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এমনকি তাকে পুরুষ শিকারী নারী হিসেবে প্রচার করা হয়। বাধ্য হয়েই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেন তিনি। থানায় সাধারণ ডায়রি করেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিলো না। গত বছরের শেষ দিকে এ বিষয়ে একটি মামলা করেন তিনি। ওই মামলার তদন্তে নামে সিটিটিসি’র সাইবার ক্রাইম ডিভিশন। তারপরই গ্রেপ্তার করা হয় দু’জনকে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে, খিলগাঁওয়ের ৪১৬/বি উত্তর গোড়ানের আব্দুল হামিদের পুত্র জাভেদ শোয়েব। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের মকিমাবাদে। গ্রেপ্তার অপর জন হচ্ছে, সিলেট সদরের শাহপরাণ থানার নবারুন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মৃত আব্দুল খালিকের পুত্র সলিম আহমেদ সলু। দুজনেই থাকতো ঢাকার খিলগাঁও এলাকায়।
গ্রেপ্তারের পর গত বছরের ২৬শে সেপ্টেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় জাভেদ শোয়েব। পরবর্তীতে তার দেয়ার তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় সলিম আহমেদ সলুকে।

গত ১১ই এপ্রিল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সলু। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুল্লাহ আল মাসুদ জানান, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে সলু স্বীকার করেছে মানহানিকর পোস্টগুলো সে ফেসবুক পেইজ থেকে প্রচার করেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এটি একটি সিন্ডিকেট। যারা অর্থের বিনিময়ে এসব অপকর্ম করে। নামে বেনামে বিভিন্ন ফেসবুক পেইজ, গ্রুপ ও অনলাইনপোর্টাল রয়েছে তাদের। পেইজ ও গ্রুপগুলোতে লাখ-লাখ সদস্য রয়েছে। অর্ধকোটি সসদ্যের একটি গ্রুপ রয়েছে এই চক্রের। এসব গ্রুপে, ফেসবুকে পোস্ট করার পর অল্প সময়েই তা ভাইরাল হয়ে যায়।

এসব বিষয়ে সিটিটিসি’র সাইবার ক্রাইম ডিভিশনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, চক্রটি ফেইসবুক আইডি ও ফেইক ইউটিউব কন্টেন্ট বানিয়ে শাম্মি আক্তার সীমার নামে মিথ্যাচার করেছে। এ ঘটনায় দুই জন মিথ্যা প্রোপাগান্ডাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। এটি একটি চক্র। যারা অর্থের বিনিময়ে ভিত্তিহীন প্রচার করে অন্যের মানহানি করে। এতে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2022
All rights reserved www.mzamin.com