শেষের পাতা

চিনি, পিয়াজ, ডালের দাম ঊর্ধ্বমুখী

হঠাৎ বাজারে উত্তাপ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২০ এপ্রিল ২০১৯, শনিবার, ৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

আগামীকাল শবেবরাত। সপ্তাহ দুয়েক পরই রমজান মাস। প্রতি বছর এই সময়ে রাজধানীর বাজারগুলোতে পাঁচ-ছয়টি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায় অথবা সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যায়। এবারও এর ব্যতিক্র হয়নি। আগেভাগেই নানা কৌশলে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে চিনি, পিয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, সবজি, মুরগি, গরুর মাংসের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দেশি ও ফার্মের মুরগির দাম কয়েক সপ্তাহ ধরেই বেশি। ৫০ টাকার নিচে বাজারে কোনো সবজি নেই। সবকিছুর দামই চড়া। রাজধানীর কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ী-ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

ক্রেতারা বলছেন, রমজান মাসের দুই সপ্তাহ আগেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। আর বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় পাইকারি বাজারে বাড়তি দাম গুনতে হচ্ছে তাদের। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। অবশ্য পাইকারি বিক্রেতাদের দাবি, শিলাবৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকায় খেতের সবজি নষ্ট হওয়ায় সরবরাহ কম। এছাড়া বিভিন্ন বাজারে আগুন লাগায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তারা। অন্যদিকে সংরক্ষণের অজুহাতে পিয়াজ ও রসুনের দাম বাড়ানোর যুক্তি দেয়া হচ্ছে।

অপরদিকে গত ২৭শে মার্চ এক বৈঠকে এবার রমজানে পণ্যের দাম বাড়ানো হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছিলেন, দেশে সব পণ্যেরই পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। অন্যদিকে বৃহস্পাতিবার চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেছেন, চাহিদার তুলনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য অনেক বেশি মজুদ রয়েছে, তাই আসন্ন রমজান মাসে পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।

বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে বস্তাপ্রতি চিনির দাম প্রায় ১৫০ টাকা বেড়েছে। বর্তামানে প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার টাকায়। পাইকারিতে তিন টাকা বেড়ে কেজিতে দাম পড়ছে ৫০ টাকা। খুচরায় তা গড়ে ছয় টাকা বেড়ে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহে খুচরায় প্রতিকেজি চিনি ৫০-৫২ টাকা ছিল।

কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী মতিন জানান, মিলগুলো চিনি সরবরাহ কম করছে। চিনি দিতে টালবাহানা করা হচ্ছে। এ কারণে চিনির দাম বেড়ে গেছে। বাজারে পাইকারিতে প্রতি বস্তা চিনি দুই হাজার ৫২০ টাকায় বিক্রি হয়।

বাজারে বেশি চাহিদা থাকা পণ্য পিয়াজের দামও কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। যা আগের সপ্তাহে ছিল ২০-২৫ টাকা। আর আমদানি করা ভারতীয় পিয়াজের দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ২৫ টাকা হয়েছে।

কাওরান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী শাহআলম জানান, গত কয়েক দিন ধরে পাইকারিতে পিয়াজ ও রসুনের দাম বেড়ে গেছে। এ কারণে খুচরায় বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ী আতিক বলেন, মুড়িকাটা পিয়াজের দর কিছুটা কম ছিল। তবে রমজানের আগে বাড়তি চাহিদায় দাম কিছুটা বেড়েছে। চাহিদা আরো বাড়লে পিয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।

পাশাপাশি রসুনের দামও কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে আমদানি করা চীনা রসুন ১০০ টাকা ও দেশি রসুন ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশি মসুর ডালের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৯৫-১০০ টাকায় পৌঁছেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে কিছু মসলার দামও বাড়তি রয়েছে। কেজিতে ১৫০ টাকা বেড়ে দুই হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এলাচ। জিরা, দারুচিনি, বাদামসহ অন্যান্য মসলা কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে বলে জানান খুচরা বিক্রেতারা। তবে ছোলার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।

বাজারে করলার দাম কেজিতে ৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫ টাকা। ঢেঁড়স ১০ টাকা থেকে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে। শিমের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ টাকা। লাউয়ের দামও বেড়েছে প্রতি পিস ১০ টাকা। এছাড়া কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে পেঁপে, পাকা টমেটো, শশা ও গাজরের দাম। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি, একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো, পটল, গাজর, শসা ও মুলা। আর ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি, ঝিঙ্গা, বেগুন, কাঁকরোল, সিসিঙ্গা ও বরবটি। এছাড়া লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা, ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা পিস।

ব্যবসায়ীরা বলেন, আগামী রমজানে বেগুন শসা ও পাকা টমেটোর দাম কিছুটা বাড়তে পারে তবে অন্যান্য সবজির দাম তেমন বাড়বে না। কারণ রোজার সময় পণ্যগুলোর চাহিদা অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি থাকে।

তেজতুরী বাজারের বাসিন্দা মুস্তাফিজ বলেন, রমজান আসতে প্রায় ১৫ দিন বাকি। অথচ এখনই যেসব পণ্যের চাহিদা থাকে সেগুলোর দাম বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিতভাবে এ দাম বাড়াচ্ছে। আসলে বাজারে কার্যকরি মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ীরা এভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৫৩০-৫৫০ টাকা দরে। আর খাসির মাংসের দর প্রতি কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা। প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, ফার্মের মুরগি ১৫৫-১৬০ টাকা, সোনালি জাতের মুরগি ২৫০-৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) নিত্যপণ্যের তালিকায় দেখা যায়, এক মাস আগেও গরুর মাংসের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫০০ টাকা। দুই মাসে আগে ছিল ৪৮০ টাকা।

এদিকে মাছের দাম আছে আগের মতোই। তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি ১৫০ টাকা, পাঙাস ১৮০ টাকা, রুই ৩৫০ টাকা, পাবদা ৬০০ টাকা, টেংরা ৭০০ টাকা, শিং ৪০০-৫০০ টাকা ও বোয়াল ৬০০-৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, রমজান মাসে কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না, সরবরাহেও ঘাটতি থাকবে না। কিন্তু এরই মধ্যে দাম বাড়ছে। তাই সরকারের নজরদারি জোরদার করতে হবে।
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2022
All rights reserved www.mzamin.com