অনলাইন

সরজমিন পাটুরিয়া ঘাট

ভোগান্তি এড়াতে আগেভাগেই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে

২৬ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার, ১২:০৬ অপরাহ্ন

গেল দুই বছর করোনার কারণে গ্রামে গিয়ে বাবা-মায়ের সাথে ঈদ করতে পারিনি। আপনজনদের সাথে ঈদ করতে না পারায় খুব কষ্ট পেয়েছি। তাই এবার আর সে কষ্ট পেতে চাই না। তাইতো আগেভাগেই গ্রামে চলে যাচ্ছি বাবা মায়ের কাছে। কথাগুলো বললেন পাটুরিয়া ঘাটে গোল্ডেন পরিবহন বাসে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় থাকা ফরিদপুরের ওয়াসিম মিয়া। দুই মেয়ে এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে গাড়ির ভেতর ভ্যাঁপসা গরমে নাভিশ্বাস হয়ে উঠলেও বাড়িতে যাওয়ার আনন্দ চোখে মুখে ফুটে উঠেছে তার।

তার পিছনের সিটে রয়েছেন আলফাডাঙ্গার রেবেকা বেগম। স্বামীর চাকরির সুবাদে পরিবারের সদস্য নিয়ে থাকেন ঢাকায়। স্বামী ছুটি পায়নি তাই দুই সন্তানকে নিয়ে চলেছেন গ্রামের বাড়ি। বলেন, করোনা আমাদের জীবন থেকে আনন্দ-উল্লাসের গেল দুই বছরের চারটি ঈদ কেড়ে নিয়েছে। এখন করোনা নেই তাই নির্বিঘ্নেই বাড়ি যেতে পারছি। তবে যাওয়ার পথে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছি পাটুরিয়া ঘাটে। একদিকে ভ্যাপসা গরম অন্যদিকে ফেরির অপেক্ষা। এক ধরনের যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই না। তারপরও প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শত ভোগান্তি মাথায় নিয়েও যেতে হচ্ছে। পরিবারের সাথে ঈদ করবো এই ভেবে দুর্ভোগকে দুর্ভোগ মনে হচ্ছে না।

রাজবাড়ীর রোজিনা বেগম বলেন, প্রচণ্ড গরমে গাড়ির ভিতরে বসে থাকা যায় না। বাচ্চা মেয়েটা খুব কান্নাকাটি করছে। সকাল নয়টা থেকে বসে আছি কখন ফেরি পার হতে পারব জানি না। ভেবেছিলাম ঈদের কয়েকদিন আগে গেলে রাস্তাঘাট ফাঁকা পাবো কিন্তু সেটাও পেলাম না। দুর্ভোগ সঙ্গী করেই যেতে হচ্ছে। বাসযাত্রী সমীর সাহা বলেন, কলকাতা যাওয়ার উদ্দেশ্যে সোমবার মধ্যরাত থেকে পাটুরিয়া ঘাটে বসে আছি । রাতভর অপেক্ষা শেষে সকাল আটটার দিকে ফেরির দেখা পেয়েছি। অসুস্থ মাকে নিয়ে গাড়ির ভিতরে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকাটা কি যে কষ্টের তা বলে বোঝানো যাবে না।

এদের মত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষের মুখে একই কথা করোনা নেই, তাই বাড়ি যেতে হবে প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। শত কষ্ট আর ভোগান্তি নিয়েই চলছে যে যার আপন ঠিকানায়।
সরজমিন মঙ্গলবার সকাল থেকেই মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, যানবাহনের দীর্ঘ সারি ঘাট ছাড়িয়ে কয়েক কিলোমিটার অতিক্রম করেছে। বিশেষ করে ব্যক্তিগত গাড়ি অর্থাৎ প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসের লম্বা লাইন বেশি। পাশাপাশি যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকেও ফেরি পারাপার হতে পারছে না। এছাড়া পাটুরিয়া ঘাটে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো। মঙ্গলবার থেকে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পাটুরিয়া ঘাটে ট্রাকের শাড়ি এতই লম্বা যার কারণে বাস-ট্রাক একসাথেই ফেরি পারাপার করা হচ্ছে সকাল থেকেই। ৫শ থেকে ৬শ’ ট্রাক গেল দুদিন ধরে পাটুরিয়া ঘাটে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় আটকে পড়েছে।


খুলনাগামী ট্রাকচালক রহিজ উদ্দিন জানান, ট্রান্সপোর্টের মাল নিয়ে সোমবার সকাল থেকে পাটুরিয়া ঘাটে বসে আছি ফেরি পারাপারের অপেক্ষায়। কিন্তু এদিকে উঠাতে পাচ্ছি না ওদিকেও যেতে পারছি না চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দেখা গেছে, করোনার কারণে গেল দুই বছর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষই গ্রামের বাড়ি গিয়ে ঈদ করতে পারেনি। যার কারণে এবার ঈদে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ হবে কয়েকগুণ বেশি হবে বলে মনে করছেন যাত্রী, বাস শ্রমিক ও ঘাট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পুলিশ প্রশাসনের দাবি বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে এবারের ঈদে মানুষজন বেশি পারাপার হবে। এদিকে ঈদে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ২১টির ফেরি চলাচল করার কথা রয়েছে। তবে মঙ্গলবার বেলা ১০টা পর্যন্ত এই নৌরুটে ১৭ টি ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে।

এব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি'র ডিজিএম শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আমরা ২১টি ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারের ব্যবস্থা করছি। বর্তমানে ১৮টি ফেরি চলাচল করছে। আরো ৩টি ফেরি রহরে যুক্ত হবে। আশা করা যাচ্ছে ২১টি ফেরি সচল থাকলে যানবাহন ও মানুষজন নির্বিঘ্নে পারাপার হতে পারবে। তবে গেল দুদিন ধরে পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ অনেকাংশে বেড়ে গেছে।

পাটুরিয়া ঘাট পরিদর্শন করতে এসে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) জিহাদুল কবির বলেন, গেল দুই বছর করোনার কারণে বেশিরভাগ মানুষজন ঈদের সময় মুভমেন্ট করতে পারেনি। তাই এবার যেহেতু করোনা কমে গেছে সেই কারণে মুভমেন্ট হবে অনেক বেশি। মানুষজনকে নির্বিঘ্নে যাতায়াতে সহায়তার করার জন্য পুলিশ প্রশাসন দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। ঘাটে অজ্ঞানপার্টি, মলম পার্টিসহ কোন অপরাধীরা যেন কোন ধরনের ক্রাইম করতে না পারে তার জন্য পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status