অনলাইন

নাগরিক সমাবেশ

থানা নয়, তেঁতুলতলা খেলার মাঠ হবে

স্টাফ রিপোর্টার

২৬ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার, ৮:৪৯ অপরাহ্ন

‘তেঁতুলতলা মাঠ ঘিরে রয়েছে আমাদের প্রাণের স্পন্দন। সকাল হলেই আমর হাঁটতে আসি। বিকালে বাচ্চারা খেলা করে। এলাকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় এখানে। ঈদের নামাজ হয়। আমার স্বামীর জানাজা হয়েছে এখানে। এলাকাবাসীর ফুসফুস এই মাঠকে আমরা ধ্বংস হতে দিতে পারি না। মানবন্ধনে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলছিলেন এলাকার বাসিন্দা জিনাত রেহানা লুনা।

সোমবার বেলা ৩ টার দিকে তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার জন্য মানবন্ধন করে এলাকাবাসী। ওই মানবন্ধনে প্রায় ১৪ টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সংহতি প্রকাশ করেছে। সংগঠনগুলো হচ্ছে, টিআইবি, এএলআরডি, বাপা, বেলা, আসক, ব্লাস্ট, গ্রিন ভয়েস, নিজেরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। ওই মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দারাও অংশ নেন।

মানববন্ধনে মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন,  তেঁতুলতলা মাঠ উন্মুক্ত রাখতে হবে। এখানে কোনো থানা হবে না। এটি ক্লাবও বানানো যাবে না। এটা এলাকার সাধারণ মানুষের মাঠ হিসাবে থাকবে। এলাকাবাসী এটি সংরক্ষণ করবে। এই মাঠ সবার।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ অন্যায়ভাবে ১৭ ঘণ্টা মা ও ছেলেকে থানায় নিয়ে আটক রেখেছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পুলিশ বেআইনি কাজ করতে করতে তারা মনে করেছে যে, তারা বেআইনি কাজ করলে প্রতিবাদ করার কেউ নেই। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পুলিশকে বলবো যে, আগামীকালের মধ্যে থানার ভবন নির্মাণের সামগ্রী সরিয়ে ফেলতে হবে। আমরা এই সামগ্রীতে হাত দিবো না। তবে আগামীকালকের মধ্যে পুলিশ যদি এগুলো না সরায়, তাহলে আমার এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এগুলো সরিয়ে দেব।

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এই মাঠের ব্যবস্থাপনা এলাকাবাসীর হাতে ছেড়ে দিতে হবে। আমরা আর এই মাঠে পুলিশ দেখতে চাই না। মাঠে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে তুলে নিয়ে থানায় আটকে রাখার ঘটনাকে সম্পূর্ণ বেআইনি ও সংবিধানবহির্ভূত কাজ হয়েছে। পুলিশের কাজ মানুষকে ভয় দেখানো নয়।

তিনি আরও বলেন, আপনাদের কাজ (পুলিশের) মানুষকে ভীতি থেকে সুরক্ষা দেয়া। সেখানে আপনারা উল্টো ভয়-ভীতি দেখিয়েছেন। সরকারি কাজের নামে একজন নারীকে টেনে হিঁচড়ে ধরে নেয়া বেআইনি কাজ। আমরা পুলিশের সঙ্গে কাজ করতে চাই। তবে এই মাঠ থাকবে এলাকাবাসীর।  

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই মাঠ রক্ষার লড়াইয়ে একযোগে নামতে হবে। আমাদের আন্দোলন কোনো বাহিনী বা থানার বিরুদ্ধে লড়াই নয়। এটি পরিবেশ রক্ষা, নাগরিক অধিকার ও বাক স্বাধীনতার লড়াই। ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারায় এলাকাবাসী সেখানকার মাঠের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছেন। এখানেও স্থানীয়রাই ব্যবস্থাপনা করবেন।  তিনি আরও বলেন, মাঠ রক্ষায় আর আন্দোলন করা যাবে না এটা কী ধরনের মুচলেকা? মা-ছেলেকে আটক করে থানায় নিয়ে হেনস্তার ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।  এ সময় তিনি সরকারের কাছে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো: ১. স্থানীয়রাই দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও রাজউককে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এই মাঠ তারা কেমন করে ব্যবস্থাপনা করবে।
২. বিকল্প জায়গায় থানা করতে হবে। এই জায়গায় থানা হবে না।
৩. এই মাঠটিতে আবারও আগের মতো ঈদের জামাত করার জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
৪. বেআইনিভাবে রত্না ও তার ছেলেকে আটক রাখার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। যাতে সরকারি কাজের নামে নাগরিকদের অধিকারের ওপর আর কেউ হস্তক্ষেপ করতে না পারে।
৫. এলাকাবাসীকে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো যাবে না।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি মোবাশ্বের  হোসেন বলেন, আমি একজন স্থপতি হিসেবে বলতে চাই, ডাম্পিংসহ যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা একটি থানার থাকা প্রয়োজন, তার কোনোটি এখানে নেই। আর যদি জোর করেও এখানে থানা নির্মাণ করা হয়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এটি থানা নয়, শত্রু ভবন হিসেবে পরিচিত হবে।
তিনি আরও বলেন, এই মাঠ রক্ষার জন্য এলাকাবাসী একতাবদ্ধ হয়েছেন। এই মানববন্ধনে তা প্রমাণ হয়েছে। আমরা মাঠ রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, মাঠ রক্ষার জন্য যখন একজন মা প্রতিবাদে দাঁড়িয়ে যান, সেই মায়ের জাতকে যখন পুলিশ গারদে ভরার সাহস দেখায় তখন সেটা ধৃষ্টতা নয়, দুর্বৃত্তায়ন।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা বলেছেন কোনো এলাকায় উন্মুক্ত স্থান ও খেলার মাঠ দখল করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের মনে দুর্বৃত্তায়নের মনোভাব তৈরি হয়ে থাকে, তারা যেন জেনে নিন রত্না সেখানে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনার নির্দেশনা পালন করার জন্য।
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন বলেন, এই মাঠ আমরা ছাড়বো না। এই মাঠ এলাকাবাসী ও শিশুদের খেলার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এই মাঠ দখলের জন্য যদি  কোনো চক্রান্ত করা হয় তবে আমরা দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করবো।

এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বয়োবৃদ্ধ মকবুল আহমেদ বলেন, এই মাঠে আমাদের অনেক স্মৃতি রয়েছে। কলাবাগান এলাকার একমাত্র মাঠ এই তেঁতুলতলা মাঠ। এখানে থানা হলে শিশুরা খেলার জায়গা হারাবে। তাই এখানে থানা ভবন নির্মাণ না করে অন্যত্র করার দাবি জানাচ্ছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status