প্রথম পাতা

অধ্যক্ষ-হোস্টেল সুপার কি দায় এড়াতে পারেন?

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

মার্চ মাস থেকেই বন্ধ সিলেটের এমসির ছাত্রাবাস। করোনার কারণে এখনো বন্ধ সেটি। কিন্তু ক্যাম্পাস নীরব থাকলেও সরব ছিল ছাত্রাবাস। কলেজ অধ্যক্ষ কিংবা হল সুপার কেউই খবর রাখতেন না হোস্টেলের। হোস্টেলে কী হচ্ছে, কারা বসবাস করছে সেদিকে খেয়াল ছিল না কারো। বরং ছাত্রলীগের কর্মীদের উপর ভরসার কারণেই এমসির হোস্টেলের দিকে ফিরে তাকায়নি কর্তৃপক্ষ। এ কারণে টিলাগড় কেন্দ্রিক ছাত্রলীগের একটি অংশ সকল ঘটনায় দায় চাপিয়েছে অধ্যক্ষ ও হল সুপারের ওপর। তারা দাবি করেছেন- অধ্যক্ষ ও হল সুপারের মদদের কারণেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলো ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর, শাহ রনি সহ অন্যরা। এ কারনে তারা অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ ও হল সুপার জামাল উদ্দিনের পদত্যাগও দাবি করেছে। এই পদত্যাগের দাবিতে তারা কলেজ ফটকেই সমাবেশ করেছে। ছাত্রাবাসের দায়িত্বরত সুপার হচ্ছেন, কলেজের সহকারী অধ্যাপক জামাল উদ্দিন। তিনি জানিয়েছেন- করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি তার বাড়ি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে রয়েছেন। করোনার কারণে হল বন্ধ। এ কারণে তার কোনো কাজ নেই। তিনি বাড়ি চলে যান। ঘটনার দিনও তিনি নিজ বাড়িতেই ছিলেন। খবর পেয়ে পরদিন শনিবার সকালে ছুটে আসেন এমসি কলেজে। এদিকে- হল সুপার হোস্টেলে দায়িত্বরত না থাকলেও হোস্টেলে ছাত্র ছিলো। কলেজ অধ্যক্ষ সালেহ উদ্দিন নিজেও স্বীকার করেছেন- হল বন্ধ করার পর কিছু সংখ্যক ছাত্র তার কাছে এসেছিলো। তারা শহরে টিউশনি করে। এ কারণে তারা থাকতে চেয়েছিলো। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের বসবাস করতে দেয়া হয়েছে। সংখ্যায় ছাত্র হবে ১৫-২০ জন। কিন্তু ঘটনার পর হলে গিয়ে দেখা গেছে ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন হলে বসবাস করছিলো। এতে করে সরব ছিলো হলের সব ক’টি ব্লক। খোলা ছিলো বিভিন্ন কক্ষ। গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনার পর হলে থাকা ছাত্ররা দুপুরের মধ্যেই হল ছাড়ে। এ সময় তাদের বইপত্র নিয়ে বের হতে দেখা যায়। প্রশ্ন করা হলে তারা জানায়- হলে বই ছিলো নিতে এসেছি। একজন শিক্ষার্থী জানায়- ঘটনাস্থল নতুন হোস্টেলের তিন তলায় কিছু ছাত্র ছিলো। তারা বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হলেই থেকেছিলো। ঘটনার সময় তারা হলেই ছিলো। নিচে নামতে চেয়েছিলো। কিন্তু ছাত্রলীগ কর্মীদের হুমকির কারণে তারা নামতে পারেনি। কলেজ অধ্যক্ষ শুক্রবারের ঘটনায় শনিবার দুপুরের মধ্যে বন্ধ থাকা ছাত্রাবাসকে নতুন করে বন্ধের ঘোষণা দেন। এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। মানবজমিনের কাছে অধ্যক্ষ স্বীকার করেছেন- ‘কিছু ছাত্র ছিলো। তাদের বের করে দেয়া হয়েছে। এখন হলকে সিলগালা করে দেয়া হবে।’ হলের ভেতরেই শিক্ষক বাংলো দখলে ছিলো ছাত্রলীগের ভয়ঙ্কর নেতা সাইফুরের। শিক্ষক বাংলোতে সে বসবাস করতো। ওই বাংলো থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ওই বাংলোতে সাইফুরের বসবাস সম্পর্কে কিছুই জানেন না হোস্টেল সুপার। পাল্টা বলেন-‘ ওখানে তো কেউ থাকার কথা না।’ এমসি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন- এমসি কলেজের হোস্টেল পুড়িয়ে দেয়ার পর ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় পুরো ছাত্রাবাস। এরপর থেকে হলের নিয়ন্ত্রক ছিলো সাইফুর ও শাহ রনি। তাদের কাছে অসহায় ছিলেন হোস্টেল সুপার। ছাত্রলীগ যা বলতো হোস্টেল সুপারও তাই করতেন। ফলে কলেজ অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারের পরোক্ষ মদদেই ছাত্রাবাসে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলো ছাত্রলীগের ওই কর্মীরা। শুধু ছাত্রাবাস নয়, ক্যাম্পাসেও ছিলো তাদের আধিপত্য। এমসির ক্যাম্পাস মনোরম পরিবেশের ক্যাম্পাস। বিকেল হলেই অনেকেই বেড়াতে যান এই ক্যাম্পাসে। প্রতি নিয়ত ক্যাম্পাসের নির্জন এলাকায় ছিনতাইয়ে ঘটনা ঘটে। এমনকি মহিলাদের শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা ঘটে। আর এসব ঘটনা ঘটাতো সাইফুর ও শাহ রনির নেতৃত্বে। এসব ঘটনা কলেজ কর্তৃপক্ষ অবগত থাকলেও কখনোই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। এমসির ক্যাম্পাসে ভয়ঙ্কর ছাত্রলীগ নেতা ছিলো সাইফুর ও শাহ রনি। টিলাগড়ের রনজিত গ্রুপের নেতা হওয়ার কারণে তারা ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করতো। ক্যাম্পাসের নানা কাজে তাদের ভাগ ছিলো। সাইফুর ও রনির যন্ত্রনায় অতিষ্ট ছিলো ছাত্রলীগের আজাদ গ্রুপের কর্মীরা। সাইফুর ও রনির অপকর্মের প্রতিবাদ করার কারনে বার বার ক্যাম্পাসে তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা হয়েছে। হুসেন আহমদ নামের এমসি কলেজের এক ছাত্রলীগ নেতা জানিয়েছেন- ‘ভাই কী বলবো। এমসি কলেজে ওরাই ছাত্রলীগ। আমরা কিছু না। তাদের সঙ্গে প্রশাসনের সম্পর্ক রয়েছে।’- এমসি কলেজ ও ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের হোস্টেল দখল, আধিপত্য বিস্তার কোনো কিছুতেই দায় এড়াতে পারেন না অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপার। তাদের দায়িত্বের গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। তবে- দায়িত্ব না জেনেশুনেই ভুল সেটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন- এমসি হোস্টেল পুড়িয়ে দেওয়ার সময়ও এই কলেজের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন, কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ। এরপরও তিনি ছাত্রলীগ থেকে কলেজ ও হোস্টেলকে রক্ষা করতে কার্যকর উদ্যোগ নেননি। আর তার দুর্বল প্রশাসনিক নেতৃত্বের কারনে শতবর্ষী এমসি কলেজে এবার কলঙ্কের কালিমা লেপন করা হলো। এদিকে- বিতর্ক দেখা দিয়েছে গণধর্ষণের ঘটনার পর এমসি কলেজের গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়েও। ওই কমিটিতে হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিনসহ আরেক হোস্টেল সুপারকে রাখা হয়েছে। যেখানে হোস্টেল সুপারদের গাফিলতির অভিযোগ সেখানে তাদেরকেই আবার তদন্ত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে তদন্ত কমিটি নিয়ে আশাবাদী হতে পারছেন সাবেক শিক্ষার্থী সহ সুধীজনেরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status