এক্সক্লুসিভ

রিমান্ডে সাইফুর অর্জুন ও রবিউল

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

সিলেটের এমসির ছাত্রাবাসে দলবেঁধে ধর্ষণের মূল হোতা ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর, অর্জুন ও রবিউলকে ৫ দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল সোমবার তাদের সিলেটের আদালতে হাজির করে এই রিমান্ড নেয়। তবে- আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হওয়া তিন আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, রাজন ও আইনুলকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশে হস্তান্তর করা হয়নি।  এখনো পলাতক ছাত্রলীগ কর্মী তারেক ও মাহফুজ। শুক্রবার রাতে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনার পর পালিয়ে গিয়েছিলো ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে রোববার ভোররাতে গোয়েন্দা পুলিশ ভারত পালানোর সময় মূল হোতা সাইফুরকে ছাতক থেকে এবং অর্জুন লস্করকে হবিগঞ্জের মনতলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর রাতে হবিগঞ্জের গোয়েন্দা পুলিশ রবিউলকে নবীগঞ্জের ইনাতগঞ্জের নিজগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর রাতে তাকে সিলেটে নিয়ে আসা হয়। গতকাল দুপুরে আলোচিত এ ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য প্রধান আসামি সাইফুর ও অর্জুনকে সিলেট মহানগর-২ এর বিচারক সাইফুর রহমানের আদালতে হাজির করেন। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা তাদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে কোর্ট পুলিশ ও এপিপিরা শুনানিতে অংশ নেন। এ সময় তারা আদালতের কাছে কুকর্মের জন্য এই আসামিদের রিমান্ডে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তবে- আদালতে ধর্ষক সাইফুর ও অর্জুনের পক্ষে কোনো আইনজীবীরা ছিলেন না। ফলে আদালত আসামিদের বক্তব্য শুনতে চান। আইনজীবীরা জানিয়েছেন- শুনানীকালে আদালতের কাছে ধর্ষক সাইফুর ও অর্জুন নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছে। তারা এ সময় জানায়- ‘তাদের সহকর্মী রাজন, তারেক ও আইনউদ্দিন এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’ শুনানি শেষে আদালত অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ৫ দিন ধরে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে আসামিদের আদালত থেকে বের করে আবার প্রিজনভ্যানে তোলে শাহপরান থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে- দুপুরে আসামি সাইফুর ও অর্জুনকে আদালতে আনার পথে তাদের দেখে উপস্থিত জনতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। উপস্থিত জনতা তাদের ফাঁসির দাবিতে সেøাগান দেন। আদালত থেকে বের করে নেয়ার সময়ও একই দাবি জানান। শুনানি শেষে বেরিয়ে এসে সিলেটের এসি প্রসিকিউশন অমুল্য কুমার চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুই আসামির ৭ দিন করে রিমান্ড চেয়েছিলেন। আদালত সাইফুর ও অর্জুনের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে শুনানীতে অংশ নেয়া এপিপি খোকন কুমার দত্ত জানান- ধর্ষণ মামলা আদালত আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এই মামলা আদালতে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবীই দাঁড়াননি। ফলে আদালত আসামিদের বক্তব্য শুনেন। এদিকে- বিকেল ৩টার দিকে আদালতে হাজির করা হয় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি রবিউলকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রবিউলেরও ৭ দিনের রিমান্ড চান। শুনানি শেষে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। শুনানি শেষে বেরিয়ে এসে কোর্ট ইন্সপেক্টর আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন- আদালত রবিউলকে ৫ দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন। তাকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিকেলে সিলেট মহানগর পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) জ্যোর্তিময় সরকার জানিয়েছেন- পুলিশ সাইফুর, অর্জুন ও রবিউলকে গ্রেপ্তার করেছিলো। এই তিনজনই তাদের হাতে রয়েছে। অন্যদের তাদের কাছে এখনো সমঝে দেয়া হয়নি। এ কারনে তাদের আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি। হাতে পেলে আজ তারা তিনজনকেই আদালতে হাজির করবেন। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন- গ্রেপ্তারের পর আসামি সাইফুর, অর্জুন ও রবিউল নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে। তারা নিজেদের রক্ষা করতে নানা গল্পের আশ্রয় নিয়েছে। এ কারণে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ এবং সঠিক ঘটনা উদঘাটের জন্য তাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলেই তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে। এদিকে- এই তিনজন ছাড়া আরো তিনজন র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে- সিলেটের র‌্যাব-৯ এর পক্ষ থেকে গতকাল পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। রোববার রাত ৯টার দিকে র‌্যাবের একটি দল হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালায়। ওই এলাকায় বাড়ি গণধর্ষণের অন্যতম হোতা শাহ মাহবুবুর রহমান রনির।  সেখান থেকে তাকে আটক করা হয়। রাতে র‌্যাব অভিযান চালায় ফেঞ্চুগঞ্জে। সেখানে কচুয়া নয়াটিলা এলাকা থেকে রাজন নামে আরো এক আসামিকে আটক করা হয়। রাজনের সঙ্গে আইনুল নামে আরেক জনকে আটক করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status