এক্সক্লুসিভ
করোনাজয়ী তমার আর্জি
তামান্না মোমিন খান
২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ৮:০৯ পূর্বাহ্ন
রায়হান সুলতানা তমা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। সদা হাস্যোজ্জ্বল, চটপটে, নির্ভীক একজন মানুষ। করোনার শুরু থেকে সতর্ক থেকেছেন। করোনার পুরো সময়টি বাসা থেকে অফিস করেছেন। প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে বাসা থেকে বের হয়েছেন। তবে নিজ গাড়িযোগে। তার স্বামীই গাড়ি চালিয়েছেন। গত পাঁচ মাস এভাবে ভালোই চলছিল। প্রায় এক মাস আগে তমা করোনায় আক্রান্ত হোন। করোনায় এত কষ্ট এটা ভাবতেও পারেননি তিনি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এখন সত্যিই করোনাকে ভয় পান তমা। তাই নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে তমার একটি আর্জি- ‘সাবধানে থাকুন, সচেতন হোন, মাস্ক ব্যবহার করুন। আপনি বাকিদের জন্য শুধুমাত্র একটি সংখ্যা হলেও নিজ পরিবার ও কাছের মানুষের কাছে অনেক কিছু।’ রায়হান সুলতানা তমা মানবজমিনকে তার করোনা পজেটিভ থেকে নেগেটিভ হওয়া পর্যন্ত তিনি যে সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন। বলেন, ‘আজ প্রায় এক মাস হলো যখন থেকে আমার মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিয়েছে আর করোনা নেগেটিভ আসবার আজ ৮ম দিন। আমার স্বামীর জ্বর আসার পর থেকেই আমরা যতদূর পেরেছি নিজেদের বাকিদের কাছ থেকে আইসোলেট/বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলাম, সেটা ১৪ই আগস্ট থেকে শুরু। ওর জ্বর আসার এক সপ্তাহ পর থেকেই আমার ঠাণ্ডা-কাশি শুরু, আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে এমন হচ্ছে। একদিন মাঝরাতে শুধু কাঁপুনি এসেছিল আর জ্বর ছিল ১০০’র মতো- ওইটুকুই। আধাবেলার বেশি থাকেনি সে জ্বর, কিন্তু প্রচণ্ড দুর্বলতা ছিল পুরো সপ্তাহজুড়ে। ডাক্তারের পরামর্শে যখন আমি টেস্ট করি সেদিন ছিল আমার লক্ষণ দেখা যাবার ৯ম দিন। তার পরের দিন টেস্ট রেজাল্ট পজেটিভ পাই আমি।
আমি অনেক প্রশ্ন শুনেছি, বেশির ভাগ প্রশ্নই ছিল কীভাবে আক্রান্ত হলাম। অনেকে জেনুইনলি জিজ্ঞেস করেছেন আমাকে ভালোবেসে, কেয়ার করে। কিন্তু সে সময়েও কারো কারো প্রশ্ন শুনে মনে হয়েছে যেন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছি। তাদের প্রশ্ন শুনে মনে হচ্ছিল যেন আমরা এমন কোনো কিছু করেছি যার কারণে বা দোষে আমরা আক্রান্ত হয়েছি। এ ধরনের স্টিগমাটাইজেশন একজন কোভিড-১৯ রোগীকে মানসিকভাবে অনেক দুর্বল করে দেয়। তাই আমি চেষ্টা করি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সাহায্য করতে। তবে বলে নেই- এটা শুধুই আমার অভিজ্ঞতা। আরেকজন কোভিড-১৯ রোগীর ক্ষেত্রে এ অভিজ্ঞতা নিশ্চিতভাবেই ভিন্ন হবে। আরো চেষ্টা করি কাউকে যেন ভুল বা কনফিউজিং তথ্য না দেই বা আগ বাড়িয়ে অপ্রয়োজনীয় বুদ্ধি না দেই, যেন সে বা তারা বিরক্তি বোধ করে।
আমার বাসায় দুইজন বয়স্ক রোগী আছেন যাদের দীর্ঘদিনের শারীরিক অসুস্থতা আছে এবং এক ছোট ভাই আছে যে ইমিউনো-কমেপ্রামাইজড। যেহেতু মার্চের শেষ থেকেই বাসায় থেকে অফিস করছি সেহেতু বাইরে যাওয়া সীমিত করতে পেরেছিলাম। কিন্তু শতভাগ কমানো যায়নি। কারণ যতোই বলি অনলাইন কেনাকাটা বেড়েছে; কিন্তু এটাও সত্য যে, দেশে অনলাইননির্ভর কেনাকাটার ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব তৈরি হয়নি। কিন্তু যে কয়েকবারই ঘরের বাইরে যাওয়া হয়েছে আমরা করোনা বিষয়ক সব রকম সতর্কতা মাথায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে গিয়েছি।
এখন যখন আমার করোনা নেগেটিভ এসেছে, হয়তো অনেকেই ধরে নিতে পারে আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। কিন্তু আসল কথা হলো এখনো আমার টানা কাজ ও ভারী কাজ করলে বুক ধড়ফড় করে, সারাক্ষণ মনে হয় কিছু চেপে থাকে বুকের মধ্যে, অস্থির লাগে আর দুর্বলতা তো মনে হয় চিরসখাই হয়ে গেল। আমি করোনাভাইরাসের কারণে মাঝারি মাত্রায় কষ্ট পেয়েছি, বাসায় থেকেই কোনো রকম বড় অসুবিধা ছাড়াই সুস্থ হয়েছি। তবে যাদের কো-মরবিডিটি আছে বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস ভিন্ন আচরণ করবে।
তাই অসতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার কোনো অবকাশ নেই। আশেপাশের মানুষ ও নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝি করোনা নেগেটিভ এলেও স্বস্তি পাওয়া যাবে না। কারণ শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেই গেল এই ভাইরাস। করোনা-পরবর্তী শারীরিক অসুবিধার কারণে গত সপ্তাহে টেস্ট করতে হাসপাতালে যাবার পথে দেখি মাস্ক পরা বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবার কি করুণ দশা! সচেতনতার পাশাপাশি জনগণ যেন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে ব্যাপারে আরো বেশি এনফোর্সমেন্ট প্রয়োজন।
আমরা প্রতিদিন জানতে পারছি দেশে করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। আমিও নিজেও সুস্থ হয়েছি। পাশাপাশি এটাও সত্য যে, গত কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ২৫ থেকে ৪০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। তারা আমাদের কাছে সংখ্যা হলেও কারো না কারো বাবা-মা, ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজন। আমার এক্সটেনডেড পরিবারে আমরা দুটো মৃত্যু দেখেছি করোনার কারণে আর আমার ইমিডিয়েট পরিবারের বয়স্ক দুজন মানুষ হাসপাতালে ছিল বেশ কয়েকদিন। আমরা জানি কেমন কঠিন হয় সে সময়গুলো যখন কাছের মানুষরাও আপনাকে স্টিগমাটাইজড করে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে। একটু সচেতন ও সহমর্মী যেন আমরা হই এই কঠিন সময়ে। আর যতটুকু পারা যায় সাবধানে থাকতে হবে, নিজেদের কম এক্সপোজড করতে হবে।
আমি অনেক প্রশ্ন শুনেছি, বেশির ভাগ প্রশ্নই ছিল কীভাবে আক্রান্ত হলাম। অনেকে জেনুইনলি জিজ্ঞেস করেছেন আমাকে ভালোবেসে, কেয়ার করে। কিন্তু সে সময়েও কারো কারো প্রশ্ন শুনে মনে হয়েছে যেন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছি। তাদের প্রশ্ন শুনে মনে হচ্ছিল যেন আমরা এমন কোনো কিছু করেছি যার কারণে বা দোষে আমরা আক্রান্ত হয়েছি। এ ধরনের স্টিগমাটাইজেশন একজন কোভিড-১৯ রোগীকে মানসিকভাবে অনেক দুর্বল করে দেয়। তাই আমি চেষ্টা করি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সাহায্য করতে। তবে বলে নেই- এটা শুধুই আমার অভিজ্ঞতা। আরেকজন কোভিড-১৯ রোগীর ক্ষেত্রে এ অভিজ্ঞতা নিশ্চিতভাবেই ভিন্ন হবে। আরো চেষ্টা করি কাউকে যেন ভুল বা কনফিউজিং তথ্য না দেই বা আগ বাড়িয়ে অপ্রয়োজনীয় বুদ্ধি না দেই, যেন সে বা তারা বিরক্তি বোধ করে।
আমার বাসায় দুইজন বয়স্ক রোগী আছেন যাদের দীর্ঘদিনের শারীরিক অসুস্থতা আছে এবং এক ছোট ভাই আছে যে ইমিউনো-কমেপ্রামাইজড। যেহেতু মার্চের শেষ থেকেই বাসায় থেকে অফিস করছি সেহেতু বাইরে যাওয়া সীমিত করতে পেরেছিলাম। কিন্তু শতভাগ কমানো যায়নি। কারণ যতোই বলি অনলাইন কেনাকাটা বেড়েছে; কিন্তু এটাও সত্য যে, দেশে অনলাইননির্ভর কেনাকাটার ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব তৈরি হয়নি। কিন্তু যে কয়েকবারই ঘরের বাইরে যাওয়া হয়েছে আমরা করোনা বিষয়ক সব রকম সতর্কতা মাথায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে গিয়েছি।
এখন যখন আমার করোনা নেগেটিভ এসেছে, হয়তো অনেকেই ধরে নিতে পারে আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। কিন্তু আসল কথা হলো এখনো আমার টানা কাজ ও ভারী কাজ করলে বুক ধড়ফড় করে, সারাক্ষণ মনে হয় কিছু চেপে থাকে বুকের মধ্যে, অস্থির লাগে আর দুর্বলতা তো মনে হয় চিরসখাই হয়ে গেল। আমি করোনাভাইরাসের কারণে মাঝারি মাত্রায় কষ্ট পেয়েছি, বাসায় থেকেই কোনো রকম বড় অসুবিধা ছাড়াই সুস্থ হয়েছি। তবে যাদের কো-মরবিডিটি আছে বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস ভিন্ন আচরণ করবে।
তাই অসতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার কোনো অবকাশ নেই। আশেপাশের মানুষ ও নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝি করোনা নেগেটিভ এলেও স্বস্তি পাওয়া যাবে না। কারণ শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেই গেল এই ভাইরাস। করোনা-পরবর্তী শারীরিক অসুবিধার কারণে গত সপ্তাহে টেস্ট করতে হাসপাতালে যাবার পথে দেখি মাস্ক পরা বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবার কি করুণ দশা! সচেতনতার পাশাপাশি জনগণ যেন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে ব্যাপারে আরো বেশি এনফোর্সমেন্ট প্রয়োজন।
আমরা প্রতিদিন জানতে পারছি দেশে করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। আমিও নিজেও সুস্থ হয়েছি। পাশাপাশি এটাও সত্য যে, গত কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ২৫ থেকে ৪০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। তারা আমাদের কাছে সংখ্যা হলেও কারো না কারো বাবা-মা, ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজন। আমার এক্সটেনডেড পরিবারে আমরা দুটো মৃত্যু দেখেছি করোনার কারণে আর আমার ইমিডিয়েট পরিবারের বয়স্ক দুজন মানুষ হাসপাতালে ছিল বেশ কয়েকদিন। আমরা জানি কেমন কঠিন হয় সে সময়গুলো যখন কাছের মানুষরাও আপনাকে স্টিগমাটাইজড করে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে। একটু সচেতন ও সহমর্মী যেন আমরা হই এই কঠিন সময়ে। আর যতটুকু পারা যায় সাবধানে থাকতে হবে, নিজেদের কম এক্সপোজড করতে হবে।