ফেসবুক ডায়েরি
বাংলাদেশ আগামি ৩/৪ বছরের মধ্যে পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হতে পারে!
শেখ আবদুল মুকিত
২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, সোমবার, ২:৪১ পূর্বাহ্ন
২০১৯ সালে ভারত আচমকা পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশ এক মহা সংকটে পড়ে যায়। ফলে তখন পেঁয়াজের দাম রাতারাতি ২৫.০০/৩০.০০ টাকা কেজি থেকে বেড়ে ১৫০.০০/২০০.০০ টাকা প্রতি কেজিতে পৌঁছে যায়।
এরপর ভারত আবার একই কাজ করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে। ফলে বাংলাদেশ আবারো পেঁয়াজ নিয়ে গভীর এক সংকটে পড়ে। এই কারণে দেশের ইতিহাসে প্রথম বার পেঁয়াজ প্রতি পিস বা হালি (৪ টি) দরে বিকিকিনি হতে দেখারও অভিজ্ঞতা হয় দেশবাসির।
আমার ধারণা, বাংলাদেশ কৃষিক্ষেত্রে যথেষ্ঠ উন্নতি করলেও, পেঁয়াজ নিয়ে ঠিক তার অবস্থানটা কোথায়, এটা আমরা সাধারণ মানুষেরা কম জানি।
অতএব, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং ইন্টারনেট ঘেঁটে এই সংক্রান্ত কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে অবাক হয়ে দেখলাম, সরকার যদি আরো একটু সচেষ্ট হয় এবং জনগন যদি কৃষকদের একটু সহায়তা করতে রাজি থাকেন, তাহলে বাংলাদেশ আগামি ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদন করে জাতীয় চাহিদা সম্পূর্ণ পূরণ করার পর বিদেশেও পেঁয়াজ রপ্তানিতে সক্ষম হবে।
প্রথমে কিছু পরিসংখ্যান দেখে নেয়া যাকঃ
- বাংলাদেশে পেঁয়াজের বার্ষিক গড় জাতীয় চাহিদা - ২৯ লক্ষ মেট্রিক টন।
- ২০১৯ সালে উৎপাদন - ২৫ লক্ষ মেট্রিক টন।
- বার্ষিক গড় আমদানি - ৯ লক্ষ মেট্রিক টন
(উৎপাদন এবং চাহিদার মধ্যে পার্থক্য ৪ লক্ষ মেট্রিক টন হলেও, প্রতি বছরে গড়ে প্রায় ৫ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ পচে যায়। ফলে বাংলাদেশকে বছরে গড়ে ৯ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। এর প্রায় ৯০% আসে ভারত থেকে।)
- স্থানীয় পেঁয়াজের প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ - ১৫.০০ টাকা।
- গড় বিক্রয় মূল্য - ২৫.০০ টাকা কেজি।
FAO এর মতে ২০১৫-১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দশটি স্থানের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে গড়ে ৯% হারে।
২০১৪ সালের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, কৃষকেরা উৎপাদিত পেঁয়াজের ভালো দাম পেলে পরের মওসুমে অধিক পেঁয়াজ উৎপাদনে আগ্রহী হন।
এখন যদিও পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে পেঁয়াজের খুচরা গড় মূল্য কেজি প্রতি ২৫.০০ টাকা। তবুও এই ক্ষেত্রে কৃষকেরা লাভ করা তো দূরের কথা, অনেক সময়ে উৎপাদন খরচ কেজি প্রতি ১৫.০০ টাকাও পান না, এই ধরনের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি না ঘটলে।
কৃষকেরা অনেক সময়ে আর্থিক ক্ষতি সয়ে তাঁদের উৎপাদন খরচের (অর্থাৎ ১৫.০০ টাকা প্রতি কেজি) চেয়ে কমে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হলেও খুচরা পর্যায়ে ২৫.০০ টাকা গড়ে বিক্রি হয় পেঁয়াজ, যাতে অন্যান্য খরচসহ পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতার মুনাফা নিশ্চিত থাকে।
আগে বাংলাদেশে কেবল শীতকালীন পেঁয়াজের চাষ হতো। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (BARI) কয়েকটি গ্রীষ্মকালীন জাত উদ্ভাবন করে কৃষকদের দেয়ায়, বাংলাদেশে নিকট অতীতে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে তা আরো বাড়বে।
এখানে আরো একটা বিষয় বিবেচনায় নেয়ার মতো। বিশ্বে হেক্টর প্রতি পেঁয়াজ উৎপাদনের হার ১৮ টন হলেও, বাংলাদেশে তা মাত্র ১১ টন!
কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট বারি-৬ নামে এমন এক পেঁয়াজের জাত উদ্ভাবন করেছে, যার গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি ১৮ টনেরও বেশি। বাংলাদেশ যদি এই মানে পৌঁছাতে পারে, তাহলে কেবল বর্তমানে যেসব জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়ে থাকে, ঠিক ওই পরিমাণ জমিতেই চাষ করে বার্ষিক প্রায় ৪১ টন পেঁয়াজের উৎপাদন হতে পারে!
তখন বাংলাদেশ তার নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে, প্রায় একই পরিমাণ (বার্ষিক প্রায় ৯/১০ লক্ষ টন) পেঁয়াজ বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে, যদি বড়ো ধরনের কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটে।
এই পর্যায়ে আসতে হলে যা করতে হবেঃ
- সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যেন পেঁয়াজ চাষ করে চাষীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন না হন। কৃষকেরা যেন ন্যুনতম কেজি প্রতি ৭.০০/৮.০০ টাকা মুনাফা পান। এই ব্যাপারে জনসাধারণকেও সচেতন থাকতে হবে।
- সরকারকে পেঁয়াজের বীজ উন্নয়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি, পেঁয়াজ সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন - এইসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে লেগে থাকতে হবে।
তাহলে হয়তো এমন দিন বেশি দূরে নয়, যখন আমরা দেখবো বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানিকারক দেশ থেকে পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে!
[লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া]
এরপর ভারত আবার একই কাজ করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে। ফলে বাংলাদেশ আবারো পেঁয়াজ নিয়ে গভীর এক সংকটে পড়ে। এই কারণে দেশের ইতিহাসে প্রথম বার পেঁয়াজ প্রতি পিস বা হালি (৪ টি) দরে বিকিকিনি হতে দেখারও অভিজ্ঞতা হয় দেশবাসির।
আমার ধারণা, বাংলাদেশ কৃষিক্ষেত্রে যথেষ্ঠ উন্নতি করলেও, পেঁয়াজ নিয়ে ঠিক তার অবস্থানটা কোথায়, এটা আমরা সাধারণ মানুষেরা কম জানি।
অতএব, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং ইন্টারনেট ঘেঁটে এই সংক্রান্ত কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে অবাক হয়ে দেখলাম, সরকার যদি আরো একটু সচেষ্ট হয় এবং জনগন যদি কৃষকদের একটু সহায়তা করতে রাজি থাকেন, তাহলে বাংলাদেশ আগামি ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদন করে জাতীয় চাহিদা সম্পূর্ণ পূরণ করার পর বিদেশেও পেঁয়াজ রপ্তানিতে সক্ষম হবে।
প্রথমে কিছু পরিসংখ্যান দেখে নেয়া যাকঃ
- বাংলাদেশে পেঁয়াজের বার্ষিক গড় জাতীয় চাহিদা - ২৯ লক্ষ মেট্রিক টন।
- ২০১৯ সালে উৎপাদন - ২৫ লক্ষ মেট্রিক টন।
- বার্ষিক গড় আমদানি - ৯ লক্ষ মেট্রিক টন
(উৎপাদন এবং চাহিদার মধ্যে পার্থক্য ৪ লক্ষ মেট্রিক টন হলেও, প্রতি বছরে গড়ে প্রায় ৫ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ পচে যায়। ফলে বাংলাদেশকে বছরে গড়ে ৯ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। এর প্রায় ৯০% আসে ভারত থেকে।)
- স্থানীয় পেঁয়াজের প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ - ১৫.০০ টাকা।
- গড় বিক্রয় মূল্য - ২৫.০০ টাকা কেজি।
FAO এর মতে ২০১৫-১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দশটি স্থানের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে গড়ে ৯% হারে।
২০১৪ সালের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, কৃষকেরা উৎপাদিত পেঁয়াজের ভালো দাম পেলে পরের মওসুমে অধিক পেঁয়াজ উৎপাদনে আগ্রহী হন।
এখন যদিও পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে পেঁয়াজের খুচরা গড় মূল্য কেজি প্রতি ২৫.০০ টাকা। তবুও এই ক্ষেত্রে কৃষকেরা লাভ করা তো দূরের কথা, অনেক সময়ে উৎপাদন খরচ কেজি প্রতি ১৫.০০ টাকাও পান না, এই ধরনের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি না ঘটলে।
কৃষকেরা অনেক সময়ে আর্থিক ক্ষতি সয়ে তাঁদের উৎপাদন খরচের (অর্থাৎ ১৫.০০ টাকা প্রতি কেজি) চেয়ে কমে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হলেও খুচরা পর্যায়ে ২৫.০০ টাকা গড়ে বিক্রি হয় পেঁয়াজ, যাতে অন্যান্য খরচসহ পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতার মুনাফা নিশ্চিত থাকে।
আগে বাংলাদেশে কেবল শীতকালীন পেঁয়াজের চাষ হতো। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (BARI) কয়েকটি গ্রীষ্মকালীন জাত উদ্ভাবন করে কৃষকদের দেয়ায়, বাংলাদেশে নিকট অতীতে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে তা আরো বাড়বে।
এখানে আরো একটা বিষয় বিবেচনায় নেয়ার মতো। বিশ্বে হেক্টর প্রতি পেঁয়াজ উৎপাদনের হার ১৮ টন হলেও, বাংলাদেশে তা মাত্র ১১ টন!
কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট বারি-৬ নামে এমন এক পেঁয়াজের জাত উদ্ভাবন করেছে, যার গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি ১৮ টনেরও বেশি। বাংলাদেশ যদি এই মানে পৌঁছাতে পারে, তাহলে কেবল বর্তমানে যেসব জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়ে থাকে, ঠিক ওই পরিমাণ জমিতেই চাষ করে বার্ষিক প্রায় ৪১ টন পেঁয়াজের উৎপাদন হতে পারে!
তখন বাংলাদেশ তার নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে, প্রায় একই পরিমাণ (বার্ষিক প্রায় ৯/১০ লক্ষ টন) পেঁয়াজ বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে, যদি বড়ো ধরনের কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটে।
এই পর্যায়ে আসতে হলে যা করতে হবেঃ
- সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যেন পেঁয়াজ চাষ করে চাষীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন না হন। কৃষকেরা যেন ন্যুনতম কেজি প্রতি ৭.০০/৮.০০ টাকা মুনাফা পান। এই ব্যাপারে জনসাধারণকেও সচেতন থাকতে হবে।
- সরকারকে পেঁয়াজের বীজ উন্নয়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি, পেঁয়াজ সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন - এইসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে লেগে থাকতে হবে।
তাহলে হয়তো এমন দিন বেশি দূরে নয়, যখন আমরা দেখবো বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানিকারক দেশ থেকে পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে!
[লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া]