মত-মতান্তর
রাজনীতিতে কোরাসবাজি
শামীমুল হক
২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, সোমবার, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন
চারদিকে কোরাসবাজির জয় জয়কার। কোরাস হচ্ছে নেতাকে নিয়ে, দলকে নিয়ে, দলের কর্মসূচি নিয়ে। রোববার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বিএনপির আন্দোলনের কথা শুনলে জনগণ হাসে। ওদিকে এদিনই বিএনপি করোনাপরবর্তী তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছে। মাঠের রাজনীতি তাহলে আবারও সরব হচ্ছে? সরব হলেইবা কি? দেশবাসী দেখছে গত কবছর ধরে দুদলের কোরাসবাজি। এতে অবশ্য একা আওয়ামী লীগই ছক্কা হাঁকাচ্ছে। বিএনপি বলের নাগালই পাচ্ছেনা। অন্য দলগুলো তো দুটি দলের পেছনে দৌড়াচ্ছে। রাজনীতির এ বিভক্তি নিয়ে সর্বত্র আলোচনা। অনেকে অবশ্য বলবেন, স্বামী-স্ত্রী, পিতা-পুত্র থেকে শুরু করে সমাজে কোথায় নেই বিভক্তি? তাহলে রাজনীতিতে থাকলে সমস্যা কি? যুক্তি-পাল্টা যুক্তি তো মুখে মুখে। ঝগড়া, ফ্যাসাদ লেগেই আছে। তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে কথায় কথায়। এতে পরিবেশ বদলে যাচ্ছে। পাশাপাশি বদলে যাচ্ছে মানুষের মনও। প্রেম, ভালবাসা মানুষের জন্য নেই। আছে যতটুকু তা প্রেমিকের জন্য, স্ত্রী-সন্তানের জন্য। পিতামাতার ঠাঁইও নেই সেখানে। জগৎ-সংসার মুখ্য না হয়ে মুখ্য হয়ে উঠেছে অন্য কিছু। এখানেও স্বার্থ। লোভ, লালসা মানুষকে ধ্বংস করে জানার পরও সবাই ছুটছে সেদিকে। চোখের সামনে দেখছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ রেখে মানুষকে কবরে যেতে হচ্ছে শূন্য হাতে। তারপরও কেন অর্থের লোভ ছাড়তে পারছে না মানুষ। এর পেছনে কাজ করছে কে? শয়তান? হয়তো তাই। কিন্তু এই শয়তানের হাত থেকে বাঁচার উপায়ও তো আছে। তারপরও কেন আমরা ছুটছি শয়তানের পেছনে? কেন বিবেককে জিজ্ঞেস করে পথ চলি না? পৃথিবী সৃষ্টির পেছনেও নাকি শয়তান কাজ করেছে? বেহেশতে আদম আর হাওয়া তো সুখেই ছিলেন। মহাসুখে। এটা শয়তানের ভাল লাগেনি। তাই সৃষ্টিকর্তার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তারা শয়তানের পাল্লায় পড়ে গন্ধম ফল খেয়েছিলেন। যার পরিণতিতে তাদের বেহেশতছাড়া হতে হয়েছিল। এই শয়তান এখনও মানুষের পেছনে লেগে আছে। যে মানুষের মাধ্যমে শয়তানি কাজ করায়। এ সময় বিবেক মজবুত হলে শয়তান পরাস্ত হয়। না হলে শয়তানের জয় হয়। আবার ক্ষমতা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। এ অন্ধত্বের সুযোগও নেয় শয়তান।
সবচেয়ে বড় কথা- যুগে যুগে ক্ষমতাবানদের কাছে পছন্দের ছিল কোরাসবাজরা। যারা ক্ষমতাবানদের সব কাজের কোরাস গাইতেন। এখনও গাইছেন। জি হুজুর নামের এ কোরাসবাজদের দাপট সবখানে। ভালো করলেও ভালো, চরম খারাপ হলেও তারা কোরাস ধরেন- ভালো হয়েছে সব ভালো। আর ক্ষমতাবানরাও কোরাসদের এ কোরাস শুনতে ভালোবাসেন। সবার আগে তাই কোরাসবাজ থেকে সাবধান থাকতে হবে সবাইকে। তাহলেই হয়তো অনেকটা নিরাপদে থাকতে পারবেন সবাই।
কোরাস নিয়ে লিখতে গিয়ে একটি গল্প মনে পড়ে গেল- গ্রামের কিছু লোক গেছে বাজারে। গ্রাম থেকে বেশ ক’মাইল দূরে বাজার। যেতে হয় নৌকায় করে। সেদিন বাজার করতে করতে তাদের সন্ধ্যা হয়ে গেছে। নৌকায় করে একসঙ্গে রওনা দিয়েছেন তারা। মাঝনদীতে যাওয়ার পর নৌকাটি ডাকাত দল ঘিরে ফেলে। ডাকাতরা বলে, এই নৌকা থামাও। এ নৌকায় গ্রামের এক বয়স্ক লোক ছিলেন। তিনি মনে মনে বললেন, আমাদের সব শেষ। এখন কি করা? শেষ পর্যন্ত কিছু একটা করা যায় কিনা ভাবতে লাগলেন। হঠাৎ তিনি দাঁড়ালেন। ডাকাতদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ভাইয়েরা আমার, তোমরা আমাদের কাছে যা আছে সবই নিয়ে যাও। কিন্তু এর আগে আমার একটা কথা শুনতে হবে তোমাদের। ডাকাত সর্দার বললো- তোমার আবার কি কথা? লোকটি বললেন, আমার বড় শখ হয়েছে একটি কোরাস গাওয়ার। ডাকাত সর্দার বললো, তাহলে শোনাও তোমার কোরাস। এ ফাঁকে গ্রামের লোকটি ডাকাত ক’জন আছে গুনে নিয়েছেন। দেখে ডাকাতের চেয়ে তারা সংখ্যায় একজন বেশি। তবে ডাকাত দলে একজন মোটা আছে। বৃদ্ধ কোরাস ধরলেন- এই জনকা জন ধর, মোটকারে দুই জনে ধর। কোরাস শোনার সঙ্গে সঙ্গে নৌকার লোকজন ডাকাত দলের উপর আক্রমণ করে বসে। আর যায় কোথায়? ডাকাত দল পরাস্ত হয়। তাই বলি কোরাস যদি এমন হয়, তাহলে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আর যদি হয়, তাল মেলানো তাহলে যা হওয়ার তা-ই হবে। সব খুইয়ে শূন্য হাতে ঘরে ফিরতে হবে।
সবচেয়ে বড় কথা- যুগে যুগে ক্ষমতাবানদের কাছে পছন্দের ছিল কোরাসবাজরা। যারা ক্ষমতাবানদের সব কাজের কোরাস গাইতেন। এখনও গাইছেন। জি হুজুর নামের এ কোরাসবাজদের দাপট সবখানে। ভালো করলেও ভালো, চরম খারাপ হলেও তারা কোরাস ধরেন- ভালো হয়েছে সব ভালো। আর ক্ষমতাবানরাও কোরাসদের এ কোরাস শুনতে ভালোবাসেন। সবার আগে তাই কোরাসবাজ থেকে সাবধান থাকতে হবে সবাইকে। তাহলেই হয়তো অনেকটা নিরাপদে থাকতে পারবেন সবাই।
কোরাস নিয়ে লিখতে গিয়ে একটি গল্প মনে পড়ে গেল- গ্রামের কিছু লোক গেছে বাজারে। গ্রাম থেকে বেশ ক’মাইল দূরে বাজার। যেতে হয় নৌকায় করে। সেদিন বাজার করতে করতে তাদের সন্ধ্যা হয়ে গেছে। নৌকায় করে একসঙ্গে রওনা দিয়েছেন তারা। মাঝনদীতে যাওয়ার পর নৌকাটি ডাকাত দল ঘিরে ফেলে। ডাকাতরা বলে, এই নৌকা থামাও। এ নৌকায় গ্রামের এক বয়স্ক লোক ছিলেন। তিনি মনে মনে বললেন, আমাদের সব শেষ। এখন কি করা? শেষ পর্যন্ত কিছু একটা করা যায় কিনা ভাবতে লাগলেন। হঠাৎ তিনি দাঁড়ালেন। ডাকাতদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ভাইয়েরা আমার, তোমরা আমাদের কাছে যা আছে সবই নিয়ে যাও। কিন্তু এর আগে আমার একটা কথা শুনতে হবে তোমাদের। ডাকাত সর্দার বললো- তোমার আবার কি কথা? লোকটি বললেন, আমার বড় শখ হয়েছে একটি কোরাস গাওয়ার। ডাকাত সর্দার বললো, তাহলে শোনাও তোমার কোরাস। এ ফাঁকে গ্রামের লোকটি ডাকাত ক’জন আছে গুনে নিয়েছেন। দেখে ডাকাতের চেয়ে তারা সংখ্যায় একজন বেশি। তবে ডাকাত দলে একজন মোটা আছে। বৃদ্ধ কোরাস ধরলেন- এই জনকা জন ধর, মোটকারে দুই জনে ধর। কোরাস শোনার সঙ্গে সঙ্গে নৌকার লোকজন ডাকাত দলের উপর আক্রমণ করে বসে। আর যায় কোথায়? ডাকাত দল পরাস্ত হয়। তাই বলি কোরাস যদি এমন হয়, তাহলে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আর যদি হয়, তাল মেলানো তাহলে যা হওয়ার তা-ই হবে। সব খুইয়ে শূন্য হাতে ঘরে ফিরতে হবে।