এক্সক্লুসিভ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা
অনলাইন ক্লাসে শতভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় ঢাবি
মুনির হোসেন
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৮:১৮ পূর্বাহ্ন
করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। দেশে ভাইরাসটির প্রকোপ ধীরে ধীরে কমে এলেও দ্বিতীয় ওয়েভ শুরুর আশঙ্কা আছে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর ব্যাপারে এখনো আগ্রহী নয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষাবর্ষের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ইতিমধ্যে স্কুল-মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস। তবে এতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও অনলাইন ক্লাস শুরু করেছে। এখানেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনকহারে কম। এ অবস্থায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে না থেকে বিকল্প উপায়ে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চায় দেশসেরা বিদ্যাপীঠটি। শতভাগ শিক্ষার্থীকে অনলাইন ক্লাসের আওতায় এনে পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখতে বেশকিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ লক্ষ্যে শিক্ষকদের দেয়া হচ্ছে ‘অনলাইন টিচিং’ ট্রেনিং। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অফ এক্সিলেন্স ইন টিচিং এন্ড লার্নিং-এর উদ্যোগে ‘অনলাইন টিচিং টেকনিক্স, ইউজ অব মডার্ণ গুগল ক্লাসরুম ফেসিলিটিস এন্ড রিলিভেন্ট প্ল্যাটফরম’ শীর্ষক এ ট্রেনিংয়ে করোনা পরিস্থিতে ইতিমধ্যে ৪শ’রও অধিক শিক্ষক ট্রেনিং নিয়েছেন। ট্রেনিংয়ে আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে চলমান এ ট্রেনিংয়ের আওতায় নিয়ে আসতে চায় টিচিং এন্ড লার্নিং সেন্টার। অন্যদিকে, শতভাগ শিক্ষার্থীকে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করতে যাদের ডিভাইস সংকট রয়েছে তাদের ডিভাইস কেনার জন্য নামমাত্র সুদে ১০ হাজার টাকা করে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও দেয়া হবে বিনামূল্যে ডেটাপ্যাক। যদিও ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিভাগ নিজ উদ্যোগে এ কার্যক্রম চালু করেছে। তবে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে প্রত্যেক বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এতে যে সমস্ত শিক্ষার্থী আর্থিক সংকটে ডিভাইস কিনতে পারছেন না তাদের তালিকা দিতে বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এমন উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়, যেটি আরো আগে চালু করা যেতো। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল মানবজমিনকে বলেন, ডিভাইস কিনতে নামমাত্র সুদে ঋণ দিতে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, যে সমস্ত শিক্ষার্থীর ডিভাইস সংকটের কারণে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে। যাতে করে তারা ডিভাইস ক্রয় করতে পারে। এদিকে, গত ১লা জুলাই থেকে চালু হওয়া অনলাইন ক্লাসে দিনদিন শিক্ষার্থী কমে আসছে। এ প্রবণতা সব চেয়ে বেশি কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায়ে শিক্ষা অনুষদে। এসব অনুষদে অর্ধেকের কম শিক্ষার্থী বর্তমানে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত আছে। অন্যদিকে, বিজ্ঞান অনুষদসহ বিজ্ঞান সম্পৃক্ত বিভাগগুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার বেশ ভালো। জানতে চাইলে অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমরা ১লা জুলাই থেকে পুরোদমে অনলাইন ক্লাস শুরু করেছি। শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্লাসে অংশ নিচ্ছে। যাদের ডিভাইস ও ডেটা সমস্যা ছিল তা আমরা বিভাগের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেছি। বর্তমানে ৭০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী আমাদের বিভাগে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত থাকেন। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অফ এক্সিলেন্স ইন টিচিং এন্ড লার্নিং দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষকদের মানোন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। বর্তমান করোনাকালীন সময়েও টিচিং এন্ড লার্নিং সেন্টার শিক্ষকদের ‘অনলাইন টিচিং’ নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। প্রায় ১৫টি ব্যাচে ইতিমধ্যে ৪শ’র অধিক শিক্ষককে এ ট্রেনিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেল, আইআইটি বিভাগ, আইইআর, কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের এক্সপার্টরা এখানে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। শিক্ষকদের অনলাইন টিচিং ট্রেনিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অফ এক্সিলেন্স ইন টিচিং এন্ড লার্নিং-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমান বলেন, আমাদের সেন্টারটি শিক্ষকদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে থাকে। আমরা করোনাকালীন সময়ে ‘অনলাইন টিচিং টেকনিক্স, ইউজ অব মডার্ণ গুগল ক্লাসরুম ফেসিলিটিস এন্ড রিলিভেন্ট প্ল্যাটফরম’ শীর্ষক একটি ট্রেনিং চালু করেছি। প্রতি ব্যাচে প্রায় ৩০ জন করে আমরা এ পর্যন্ত প্রায় ৪শ’ শিক্ষককে অনলাইন টিচিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তিনি বলেন, টিচিং এন্ড লার্নিং সেন্টার থেকে সবগুলো অনুষদকেই চিঠি দেয়া হয়েছে। সব শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, যারা আগ্রহী তারা এ প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন। এদিকে অনলাইন ক্লাস বাধ্যতামূলক করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল মানবজমিনকে বলেন, এমন সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি। তবে কোভিড পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে তখন তো আমাদের একটা সিদ্ধান্তে যেতেই হবে। আমরা অনলাইন ক্লাস কতোদিন চালাবো, পরীক্ষা কতোদিন পর্যন্ত আমরা বন্ধ রাখবো, তখন এমন একটা সিদ্ধান্তে নিশ্চয়ই আসতে হবে। তিনি বলেন, আমার ধারণা কিছুদিনের মধ্যে বিষয়টা খোলাসা হয়ে যাবে। কারণ সংক্রমণের গ্রাফটা কমে আসছে। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য বহিঃবিশ্বের মতো পৃথক বক্স তৈরি করে পাঠদান সম্ভব না। আমাদের ক্লাস ও হলগুলোতে বিপদ বাড়ানোর মতো একটা পরিস্থিতি আছে। এ অবস্থায় আমাদের দেশে সহজে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে বলে আমার দৃষ্টিতে মনে হয়না। এ অবস্থায় সকল সুবিধা প্রদান করে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে নিয়ে আসাটা আমি সঙ্গত মনে করি। প্রো-ভিসি (শিক্ষা) আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খুললে রিভিউ কিছু ক্লাস করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরীক্ষা নেয়া যাবে যদি অনলাইন ক্লাস চালু থাকে। এজন্য যাদের ডিভাইসের সংকট আছে ও যাদের ডেটার সংকট আছে তাদের ডেটা প্রদান করে আমরা অনলাইন ক্লাসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীকে যুক্ত করতে চাই। আবার এমন পরিস্থিতিতে অনলাইন পরীক্ষা নেয়া যায় কিনা সে সম্ভাব্যতাও আমরা যাচাই করছি। তবে প্রাক্টিক্যাল ক্লাস ও পরীক্ষাগুলো হয়তো আমরা পারবো না। পেইস টু পেইস ক্লাস না হলে পরীক্ষা নেয়াটা জটিল ও অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব। তবে কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাস খুললে আমাদের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত থাকতে হবে যেকোন সিদ্ধান্তের জন্য। আমাদের কোভিড উত্তর পরিস্থিতিতে ছুটি কমিয়ে আনতে হবে এ ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে। এদিকে নভেম্বরে ক্যাম্পাস খোলার গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আশা করি এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক আন্দাজ নির্ভর কোনো প্রচারণা না হোক।