শেষের পাতা
করোনাযুদ্ধে সেনাবাহিনী, আইসোলেশন পড ও বেড তৈরি
কাজী সোহাগ
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, বুধবার, ৯:৫২ পূর্বাহ্ন
দেশপ্রেমের উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করে মরণঘাতী করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে লড়ছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা। সমতল এলাকা থেকে শুরু করে দুর্গম পাহাড়েও তৎপর তারা। করোনাযুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে পায়ে হেঁটে, গাড়ি নিয়ে আবার কখনো আকাশপথে আক্রান্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছেন। নিশ্চিত করছেন সুচিকিৎসার। অনেকের জীবন বাঁচাতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনী। করোনাযুদ্ধে সামনে থেকে অংশ নিয়ে এবার করোনা রোগীদের জন্য তারা বানিয়েছে আইসোলেশন পড বা চেম্বার ও বেড। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ রকম সংকটময় পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ পেশাদারিত্ব ও উদ্ভাবনী শক্তি নিয়ে উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের অধীনস্থ আর্মি এভিয়েশন মেইন্টেন্যান্স ওয়ার্কশপ। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে এবং নিজস্ব মেধা ও মনন প্রয়োগ করে তারা আইসোলেশন পড নির্মাণ করে। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে এটির উন্নতি সাধন ও আধুনিক সুবিধা সংযোজন করে আইসোলেশন বেডও নির্মাণ করা হয়। উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে তৈরি এই আইসোলেশন পড ও আইসোলেশন বেড তৈরিতে আনুমানিক ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ বিদেশ থেকে আমদানি করা হলে খরচ হতো ৩-৪ গুণ। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে জটিল ও সংকটা্পন্ন রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় অবস্থিত সম্মিলিত সামরিক হাস্পাতালে স্থানান্তর জরুরি হয়ে পড়ে। করোনা অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় স্পর্শ এড়িয়ে বিমান বা এম্বুলেন্সে রোগী পরিবহন করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। এই ধরনের রোগীদের পরিবহনে উপযুক্ত আইসোলেশন পড বা চেম্বার বাংলাদেশসহ বিশ্বে অপ্রতুল। ১৫ই এ্প্রিল থেকে এ সমস্ত আইসোলেশন পড প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংকটা্পন্ন রোগী পরিবহনের সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে ১৮ই মে আইসোলেশন বেড প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে হাস্পাতালসমূহের পরিচর্যা সুবিধা বৃদ্ধি পায়। ইতিমধ্যে প্রায় তিন শতাধিক রোগীকে আইসোলেশন বেড- এর মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে আইসোলেশন পড দ্বারা আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে করোনা রোগীদের ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাস্পাতালে আনা অব্যাহত রেখেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বল্প ব্যয় ও সহজলভ্যতার জন্য এসব আইসোলেশন বেড-এর কার্যকারিতা ইতিমধ্যেই বিপুল প্রশংসা অর্জন করেছে। সেনাবাহিনী প্রধানের নির্দেশক্রমে আরো আইসোলেশন বেড প্রস্তুতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে যা ক্রমান্বয়ে সকল হাস্পাতালসমূহে সরবরাহ করা হবে। তারা জানান, আর্মি এভিয়েশন গ্রু্প কর্তৃক উদ্ভাবিত ও সংযোজিত আইসোলেশন বেড দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন ও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় সংকোচনে গুরুত্ব্পূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দীর্ঘ এক শতাব্দী পর পৃথিবী আক্রান্ত হয়েছে এক মহামারিতে। এর উৎস করোনাভাইরাস যা কোনো সীমানা না মেনে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ই মার্চ। মহামারির সম্ভাব্য ভয়াবহতা উ্পলব্ধি করে বাংলাদেশ সরকার বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেন। সেনাবাহিনী এই যুদ্ধে ‘অ্পারেশন কোভিড শিল্ড’ নামে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে জনগণের পাশে দাঁড়ায়। দেশে লকডাউন পরিস্থিতিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সম্মুখ যোদ্ধাদের জরুরি ওষুধ ও সুরক্ষা সরঞ্জাম পৌঁছানো দুরূহ হয়ে পড়লে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ আর্মি এভিয়েশন গ্রুপকে এসব সরঞ্জামাদি পরিবহনের নির্দেশ দেন। রোগের প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে আর্মি এভিয়েশন নিজস্ব বিমান ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সেনানিবাসগুলোতে ব্পিুল পরিমাণ ওষুধ, চিকিৎসা ও সুরক্ষা সামগ্রী পৌঁছে দেয়।