শেষের পাতা

ঢাকা মেডিকেলে করোনা পরীক্ষা নিয়ে এন্তার অভিযোগ

শুভ্র দেব

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

সরকারের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা নিয়ে এন্তার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া হাসপাতালটির করোনা পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা ভাইরোলজি বিভাগের নানা অব্যবস্থাপনা সামনে উঠে এসেছে। হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ও নন-করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের করোনার নমুনা সংগ্রহে ধীরগতি। করোনা পরীক্ষার জন্য রোগী ও রোগীর স্বজনদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। আর পরীক্ষা করাতে পারলে ফলাফল পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। শুধু রোগী ও স্বজনরা নয়। খোদ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্টাফদের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার ফলাফল পেতে একই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। টেকনোলজিস্টদের গড়িমসির কারণেই এধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়। সাধারণ রোগীদের করোনা পরীক্ষার পজেটিভ/নেগেটিভ ফলাফলের সনদ পেতে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া পরীক্ষার ফলাফলে নাম ও বয়সের বিভ্রাট হরহামেশাই থাকে। ভাইরোলজি বিভাগে পর্যাপ্ত স্টাফ ও সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও দিনের পর দিন এ ধরনের অব্যবস্থাপনা চলছে। যদিও সংশ্লিষ্ট বিভাগটি এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সূত্রমতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে প্রতিদিন ৩০০ নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে গড়ে ১০০টিও নমুনা পরীক্ষা করা হয় না। তুলনামূলক কম টেস্ট করার পরেও বেশির ভাগ সময় করোনা টেস্টের ভুল রিপোর্ট প্রদান করা হয়। সংকটাপন্ন ভর্তি রোগীদের পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে তিন থেকে চার দিন পর্যন্ত সময় লাগে। ডিজি অফিসের মেসেজ আসতেও সমান সময় লাগে। সাধারণ রোগীরা অভিযোগ করেছেন, করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দ্রুত আনতে অসাধু স্টাফদের টাকা দিতে হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগে সন্ধ্যা সাতটার পর আর কোনো কাজ হয় না। ফলে ওই সময় কোনো রোগীর নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজন হলে সেটি আর সম্ভব হয় না। এমনকি ওই সময় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করতেও বেগ পেতে হয়। অভিযোগ আছে কিট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান করোনা পরীক্ষার ল্যাব নিয়ন্ত্রণ করে।

ভাইরোলজি বিভাগের কিছু স্টাফ অভিযোগ করেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভাইরোলজি বিভাগের করোনা নিয়ে কাজ করেন এমন স্টাফদের জন্য ৪৫ লাখ টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্টাফরা সেই টাকা এখনো পাননি। কোয়ারেন্টিনে হোটেলে থাকা স্টাফদের নমুনা সংগ্রহে টেকনোলজিস্টদের চরম অনীহা। হোটেলে নমুনা সংগ্রহের জন্য দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারী পাঠানো হয়।

এও অভিযোগ উঠেছে ঢামেকে করোনা পরীক্ষার অনুমোদনের পর ফরিদ ও নাসির নামের দুজন টেকনোলজিস্ট টাকার বিনিময়ে বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। ভাইরোলজি বিভাগ ও হাসপাতাল প্রশাসন বিষয়টি জানার পরেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ভাইরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানসহ আরো অনেক স্টাফ অসুস্থ থাকার কারণে অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. সুলতানা শাহানা বানু মানবজমিনকে বলেন, এই অভিযোগের একটিও ঢাকা মেডিকেলের সঙ্গে খাপ খায় না। কারণ আমরা সারা দিনের রিপোর্ট সন্ধ্যায় দিয়ে দেই। হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা সঙ্গে সঙ্গেই রিপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে। বেশি জরুরি রিপোর্টগুলো ডিপার্টমেন্টের অন্য চিকিৎসকদের জানিয়ে দিতে বলি অথবা আমি নিজেই ফোন করে জানিয়ে দেই। রিপোর্ট না পেলে অভিযোগ করতে হবে পরিচালককে। আমরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে রিপোর্ট দেবো। আমরা পরিচালকের অফিসে রিপোর্ট দেই। টেস্ট করে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেয়াই আমাদের দায়িত্ব। আমরাই পুরো বাংলাদেশ এমনকি বলতে গেলে পৃথিবীর মধ্যে দ্রুত রিপোর্ট দেই। আর সেটা ১২ ঘণ্টার মধ্যে। পৃথিবীর কোথাও নমুনা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করে না। তিনি বলেন, টেস্ট কেন দেরি হচ্ছে সেটি বলতে পারি। কারণ নমুনা প্রসেস করতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায় বা পড়ে যায়। আর নমুনা না থাকলে কী দিয়ে টেস্ট করবে। নমুনা সংগ্রহের ধীরগতি নিয়ে তিনি বলেন, ঠিক ধীরগতি আমি বলবো না। আগের মতো নমুনাও এতো বেশি আসে না। কিন্তু আমাদের টেকনোলজিস্ট সংকট রয়েছে। কোভিড, নন- কোভিড ওয়ার্ডে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। এ ছাড়া হোটেলে গিয়েও নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। এই মুহূর্তে আমাদের আরো ২০ জন টেকনোলজিস্ট দরকার। নাম ও বয়সের বিভ্রাটের বিষয়ে তিনি বলেন, যে টেস্ট করবে তার নাম-বয়স তো আমরা জানি না। একটা ফরম দেয়া হবে সেখানে নিজেই নাম, বয়স সবকিছু লিখবেন।  ডাটাতে যখন নাম-বয়স যাবে সেটা রোগী যেটা লিখে দেবে সেটাই যাবে। এসব অভিযোগ নিয়ে অনেকেই আসে, এখন এটা কমে গেছে।

দুজন টেকনোলজিস্ট টাকার বিনিময়ে হাসপাতালের বাইরে থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন এ বিষয়ে ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান বলেন, এ বিষয়ে সবাই জানে, আমিও জানলাম কিন্তু এ বিষয়ে কোনো উত্তর দেবো না। এটার উত্তর দেবেন পরিচালক। কারণ আমি একটা বলে দিলে আমাকে বলবে আমি কেন বললাম। ৪৫ লাখ টাকার প্রণোদনা নিয়ে তিনি বলেন, সেই টাকা এখনো আমরা পাইনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status